সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১১
আফরোজা হাসান
চোখ মুখ শক্ত করে রাগের ভান করলেন সাবিহা। আমি যা জানতে চাচ্ছি সেটার জবাব দে। কোথায় ছিলি এতক্ষণ?
মাহাম হেসে বলল, আমি তো ভাইয়া-ভাবীর সাথে ছিলাম। ভাইয়া যে সারাক্ষণ শুধু বাইরে বাইরে থাকে সেই বিচার করছিলাম আমি আর ভাবী মিলে। আমি তোমাকেই নিয়ে যেতে এসেছি বিচার সভায়।
কেন?
মাহাম হাসতে হাসতে বলল, ভাইয়াকে মারতে হবে। আমি তো বড় ভাইকে মারতে পারিনা আর ভাবী বলেছে মশা মেরে হাত নোংরা করতে চায় না। তাই তুমি চলো ভাইয়াকে মারবে।
হাসলেন সাবিহা। তোরা পারিসও সারাক্ষণ দুষ্টুমি করতে। কিন্তু আয়ান কোথায়?
সেও আছে বিচার সভায়। মুখের সামনে ফাইল ধরে হুমম… হুমম… করছে। এই ছেলের কথা বলতে কিসের এত কষ্ট আল্লাহ’ই জানেন। দশটা প্রশ্ন করলে নয়টার জবাব দেন হুম নয়তো উহু ধ্বনির প্রয়োগে।
আয়ানকে দরজায় এসে দাঁড়াতে দেখে দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করলো সাবিহার। বললেন, তোর জামাইয়ের মুখ দিয়ে বিষ ঝরে সারাক্ষণ। কথা বলে না তাই রক্ষা আমাদের। তুই যে কি দেখে পাগল হয়েছিল এই ভিলেন স্বভাবের ছেলের জন্য এখনো আমার বুঝে আসে না। ঐ যে বলতে না বলতে হাজির তোর ভিলেন।
মাহাম হেসে বলল, আচ্ছা তো শুনিয়ে শুনিয়ে বদনাম করা হচ্ছিলো!
তো? চোখ পাকালেন সাবিহা। আমি কি তোদেরকে ভয় পাই নাকি যে পেছনে কথা বলবো!
আয়ান রুমে ঢুকে হেসে বলল, পেছনে কথা বলা ঠিকও না মাদার ইন ল। এতে একদিকে যেমন গীবত করা হয় অন্যদিকে ব্যক্তির ভুল ধারণাকে শুধরানো সম্ভব হয়না।
সাবিহা বললেন, আচ্ছা তা কি ভুল বলেছি আমি শুনি?
ঐ যে বললেন আপনার মেয়ে আমার জন্য পাগল হয়েছিলো! জবাব দিল আয়ান।
এটা ভুল কথা?
হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভুল কথা।
সঠিক কথাটা কি শুনি?
আয়ান হেসে বলল, সঠিক কথাটা হচ্ছে আমি পাগল হয়েছিলাম আপনার মেয়ের জন্য। এবং যতই দিন যাচ্ছে সেই পাগলামির পরিমাণ বেড়েই চলছে। কিন্তু আপনার মেয়ে আমাকে পাত্তাই দেয়না। সে তার মত থাকে।
হয়েছে তোদের এসব কথার ফাঁদে আমি পড়ছি না। বকবক কর তোরা আমি যাই। জামাই আর মেয়েকে একা থাকার সুযোগ দিয়ে চলে গেলেন সাবিহা।
আয়ান মাহামকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, একটা ব্যাপার বলো তো এই যে তুমি এত নিরস, মুডি, একরোখা স্বভাবের একটি মেয়ে। তারপরও তোমাকে এত ভালোবাসি কেন আমি?
কারণ আমাকে ভালোবাসা ছাড়া তোমার জন্য আর কোন পথই খোলা রাখিনি আমি। হেসে জবাব দিলো মাহাম।
হাসলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না আয়ান। মাহামকে আলতো করে বুকে টেনে নিলো। কখনো কখনো মাহামের বিষণ্ণতা আপাদমস্তক ডুবিয়ে দেয় তাকে! কিন্তু যখন মেঘের আড়াল থেকে সূর্যের মত বেড়িয়ে আসে মাহাম, স্বমহিমায় তার জীবনকে ভরিয়ে দেয় ভালোবাসাময় প্রশান্তিকর আলোতে। এই কিছুটা পাগলা, ভীষণ রকম খেয়ালী আর প্রচণ্ড কল্পনাবিলাসী মেয়েটা সত্যিই তাকে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা রাখেনি তার সামনে। মাহামকে দেখলে ওর কথা শুনলে মনেহয় দুনিয়ার কোন কিছুতেই ওর কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু আয়ান জানে ঘাষের ডগায় শিশির বিন্দু থেকে নিয়ে শুরু করে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা আকাশের তারা, রান্নাঘরের তেল-মশলা থেকে নিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা সবকিছুতেই মাহামের ব্যাপক আগ্রহ। জীবনসাথী হিসেবে মাহামকে পেতে চাইবার এটাও একটা জোড়াল কারণ ছিল।
কিছুটা ক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো। নীরবতার ভেঙ্গে মাহাম বলল, আচ্ছা তুমি না বলেছিলে আমার জন্য বিশাল একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে? কোথায় আমার সারপ্রাইজ?
বলেছিলাম নাকি?
হুম…বলেছিলে তো!
আয়ান হেসে বলল, তাহলে তো দিতেই হয় সারপ্রাইজ। তবে সেজন্য তোমাকে আমার সাথে বাইরে যেতে হবে।
সারপ্রাইজকে ঘরে আনা সম্ভব না?
উহু…সাইজে সামান্য বড়। তোমাকেই যেতে হবে।
মামণি-বাবা আর মিহিরকে কি নিয়ে যাওয়া যাবে আমাদের সাথে?
মামণি-বাবা আর মিহিরকে নিয়ে গেলে কি তুমি খুশি হবে?
হ্যা।
আয়ান হেসে বলল, ঠিকআছে আমরা তাহলে মামণি-বাবা আর মিহিরকে নিয়েই যাবো। যাও সবাইকে রেডি হতে বলো তুমি। আমরা আধঘন্টা পর বেড়বো ইনশাআল্লাহ।
দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো মাহাম। কিন্তু শাবাব আর আরিফী ভাইয়া যাবে না আমাদের সাথে? আয়ান হেসে বলল, ঠিকআছে আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি বলে আরিফীকে নিয়ে আসবে শাবাবকেও। আয়ানকে বিশাল একটা হাসি উপহার দিয়ে বেড়িয়ে গেলো মাহাম।
চলবে…
পর্ব-১০