নারী আন্দোলন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। এটি কেবল নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ার আন্দোলন।
নারী আন্দোলনের শিকড় বহু প্রাচীন, তবে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি সুসংগঠিত রূপ পায়। বেগম রোকেয়া নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং সুফিয়া কামাল নারীর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকারের জন্য কাজ করেন।
ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধেও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী আন্দোলনের মাধ্যমেই নারীর স্বাধিকার, সমান অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় আজ নারীরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করে যাচ্ছে। NASA International Space Apps Challenge 2023-এ বাংলাদেশি নারীদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া নারীসাফল্যের একটি দৃষ্টান্ত। এছাড়া, উদ্যোক্তা নারীরা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছেন। রাজনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, এবং সংস্কৃতিতে নারীর দৃঢ় পদচারণা আমাদের সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দেয়।
নারীর সাফল্যের গল্প যতই অনুপ্রেরণাদায়ক হোক, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এখনও নারীর অগ্রগতির পথে বড় বাধা। সামাজিক কুসংস্কার, লিঙ্গ বৈষম্য, এবং সহিংসতা নারীর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘SHE’ কর্মশালার মতো প্রকল্পগুলো নারীদের ক্ষমতায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবুও, নারীর প্রকৃত সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
নারী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে চাই সমন্বিত প্রচেষ্টা। নারীর জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো অপরিহার্য। আইনি সহায়তা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি নারীর উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। তাছাড়া, নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে পরিবার,ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা এবং গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
নারী আন্দোলন শুধু নারীদের নয়, সমগ্র সমাজের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। অতীতের সংগ্রাম এবং বর্তমানের সাফল্য আমাদের আশাবাদী করে যে, নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ আরও সমৃদ্ধ হবে।