banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1096 বার পঠিত

 

সন্তান হলে কি বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা কমে যায় 

সন্তান হলে কি বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা কমে যায়


শামসুন নাহার মলি


সমবয়সী এক ভাবি প্রায়ই অনেক কিছু জানতে চান দেখা হলে,
সে দিন বল্লেন,
“আচ্ছা মলি ভাবি সন্তান হলে কি বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা কমে যায়?”

এক চোট ভেবে নিয়ে বল্লাম,
“ভালবাসা কমে না,বরং আমার বেড়েছে।সন্তান হবার পর বুঝেছি বাবা মা কি জিনিস,কি নিয়ামত,কত টুকো নি:স্বার্থ ভাবে তারা ভালবাসেন,কতটা ভালো চান,প্রয়োজন মেটান,বোঝেন।এটাও বুঝেছি বাবা মা সন্তানের জন্য কতটা ভাবেন,রক্ত ঘাম ঝরিয়ে মানুষ করেন।ভালোবাসা কমেনি,শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে,নিজেকে দিয়ে বুঝেছি কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন,এখনো করে যাচ্ছেন আমাদের জন্য।
তবে হ্যা,সন্তান হবার পর দায়িত্ব বোধ বেড়েছে।

ভাবি কিছু বাস্তব উদাহরণ চাইলেন,
বল্লেন,”দেশে গিয়ে যখন বাবা মা আর সন্তান কে দেখা শুনা করেন কোনটা বেশি গুরুত্ব দিয়ে করেন?”

একটু চমকে গেলাম,আসলেই তো আমরা এমন এক বিন্দুতে বসা যার এক মেরুতে সন্তান আরেক মেরুতে বাবা মা।সন্তান ছোট মানুষ,বাবা মা ছাড়া অচল,কর্তব্যের খাতিরেই তো আগেই সন্তানের প্রয়োজন বা কাঁন্না থামাই।তার মানে কি এই যে বাবা মাকে ভালোবাসিনা?

আসলে একজন বাচ্চার পাশে অনেক কেই পাওয়া যায়।ক্ষুধা লাগলে কতজন খাবার দেয়,কাঁদলে খেলনা দেয়,ললিপপ দেয়,ঘুরতে নিয়ে যায়।এমন কি পটি ক্লিন ও করে আপন কতজন ই।কিন্তু ঠিক অপর মেরুর আরেক জোড়া ভালোবাসার মানুষ দের জন্য কজন এমন করে?একজন বাবা মা ৮/১০ টা সন্তান কে হেসে হেসেই লালন পালন করে,অনুভব করে প্রতিটা প্রয়োজন,সমস্যা কে।
কই ৮/১০ জন সন্তান তো পারেনা ২ জন বাবা মায়ের বৃদ্ধকালে ঠিক ওভাবে ছোট বেলার মত করে পাশে থাকতে,ভালোবাসতে,প্রয়োজন মেটাতে?

কেন পারেনা?

কারণ হলো ঐ পিছুটান,সংসার সন্তানের দায়িত্ব বোধ।কোন কোন সন্তান এত টাই উদাসিন হয়ে যান যে বাবা মার সাথে ঠিক মত কথা বলা,সময় দেয়া,খোঁজ নেয়ার ও সময় পান না।

ভাবি,আপনার কি মনে হয় ভালোবাসা কমে গেছে বাবা মায়ের প্রতি?

না ভালোবাসা আসলে কমে না,কোন কোন সন্তান ব্যালেন্স করতে পারেনা।তাদের ভালোবাসার যায়গা অনেক।কোনটাকে কত টুকো গুরুত্ব দিতে হবে,প্রাধান্য দিতে হবে তারা খেয়াল করার সময় পান না।

আমি দেশে গেলে চেষ্টা করি বাবা মা আর সন্তানের জন্য সমান ভাবে করতে।বাচ্চাদের কিছু কাজ কমিয়ে বাবা মা কে সময় দিই।

আমার বড় ভাই আর বোন সেদিন বল্লেন,
“প্রতিবেশি,দীনি ভাই বোন এর জন্য আমরা যত টুকো করি বাবা মা,শ্বশুর,শাশুড়ির জন্যও করবো।দাওয়াতে তাদের মুখে মজার মজার খাবার তুলে দিই,বাবা মা,শ্বশুর-শাশুড়ী ও মাঝে মাঝে এরকম খাবার খাচ্ছে কিনা,পরিবেশ তৈরি করতে পারছেনা খোঁজ নিবো।এটাও আমাদের কর্তব্য তাদের জন্য সেরকম বা তার চেয়ে বেশি বেশি এরকম পরিবেশ তৈরী করা।”

মেইন থিম টা হলো,আমাদের বুঝতে হবে সন্তানের জন্য,প্রতিবেশির জন্য,দ্বীনি ভাই বোন দের জন্য করতে করতে আমাদের আসল নেয়ামাত যাদের জন্য দুনিয়াতে এসেছি তাদের বঞ্চিত করছি কিনা।কোনটার প্রায়োরিটি আগে সেটা বুঝতে হবে।সন্তান দের অভুক্ত রেখে মেহমান দের জন্য জান মাল উজাড় করে দিচ্ছি কিনা কিংবা বাবা মা কে অভুক্ত রেখে সংসার বা বাইরের জগৎ নিয়ে বেশি মাতামাতি করছি কিনা।

ভাবি,একটা সময় সব থাকবে,সব হবে কিন্তু বাবা মা থাকবে না,তাই তারা যতদিন আছেন তাদের সম্মান করি,ভালোবাসি।কারণ একজন বাচ্চার পেছনে কতজন খাটে,কিন্তু একজন মুরুব্বীর ডাকে কেউ সাড়া দেয়না।বিছানা নোংরা করলে ও পরিস্কার করার কেউ থাকেনা।যে সব সন্তান রা এত বড় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে হয়তো তারাই আশাবাদী যে তাদের বার্ধক্যেও তাদের সন্তানরা পাশে থাকবে।কিন্তু বাকিরা?

দুনিয়ার সব কিছু করার সময় হয়,বাবা মায়ের সাথে কথা বলার সময় হয়না,কিসের এত ব্যস্ততা?আমি বুঝিনা।

আমার ডক্টর বলেছিলেন,তোমার সাথে কাউন্সিলিং এর জন্য নার্স পাঠাবো?
গল্প করলে তোমার স্ট্রেস কমবে,ডিপ্রেশন কমবে।
আমি না করেছিলাম।আমার স্ট্রেস কমে আমার ২ জোড়া বাবা মার সাথে কথা বল্লে।আমার বড় ভাই বোনের সাথে কথা বল্লে।যারা আমাকে দ্বীন আর দুনিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়,প্যারেন্টিং শেখায়।এদের চেয়ে বড় আর ভালো ডক্টর আমার জীবনে আসেনি।

সেজন্যই তো শত ব্যস্ততার ভিতর ও নিজের খবর দেই তাদের,আমিও খোঁজ নিই।খেয়াল করে দেখলাম এতেই আমি ভালো থাকি। আর ভালো থাকি ইবাদাহ বাড়াতে পারলে আর পরোপকার করলে।আরো কিছু মানুষের সাথে কথা বল্লে আমার স্ট্রেস কমে,শান্তি লাগে।কিন্তু ডমিনেটিং ক্যারেক্টার,অহংকারী মানুষ,কঠোর,জটিল স্বভাবের মানুষ,বদ রাগী,অগোছালো,ঝগড়াটে,কম প্রাক্টেজিং দের সাথে মিশলে,কথা বল্লে শান্তি লাগেনা।
তাই নিজের মানুষিক সুস্থতার জন্য এসব মানুষ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকে।কম কথা বলি।

আমি বোকা হলেও এত টুকো বুঝে চলি কোনটা গুরুত্বপূর্ণ।কোনটা আমার দরকার।আগে আমার দ্বীন,তার পর বাবা মা সন্তান পরিবার তারপর সমাজ।

ভালোবাসা কমছে না বাড়ছে এটার চেয়ে দায়িত্ব পালনে আমি সফল না বিফল এটা আমায় ভাবায়।

ধন্যবাদ ভাবিকে,যার এই মুল্যবান প্রশ্নের উত্তর খুৃঁজতে গিয়ে আমার এই লম্বা ভাবনার সুজোগ হলো।

#এন্টিডিপ্রেশন

Facebook Comments