banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 278 বার পঠিত

 

সখীপুরে এক বছরে ৫৮৩ বিবাহবিচ্ছেদ

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত এক বছরে তালাকের মাধ্যমে ৫৮৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছেদের ঘটনা এত কেন? বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, পরকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, নারীর শিক্ষা, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য ক্রমাগত চাপ, স্বামীর নির্যাতন—এসব কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
সখীপুরের আট ইউনিয়ন ও একমাত্র পৌরসভায় ১২টি কাজি অফিস রয়েছে। কাজি অফিসের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নে ৫৫টি, যাদবপুর ইউনিয়নে ৩৯টি, বহুরিয়া ইউনিয়নে ৩২টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ৩৭টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে ১৫টি, কালিয়া ইউনিয়নে ১১০টি, বহেড়াতৈল ইউনিয়নে ৩০টি, কাকড়াজান ইউনিয়নে ৬৩টি ও পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ২০২টি বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) নিবন্ধন করা হয়েছে।
২০১৪ সালে সখীপুরে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ৪২৫টি। এদিকে ২০১৪ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের নিকাহ কার্যালয়ে ৩৪টি, যাদবপুর ইউনিয়নে ২৬টি, বহুরিয়া ইউনিয়নে ২৭টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ২৯টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে ১৬টি, কালিয়া ইউনিয়নে ৯৪টি, বহেড়াতৈলে ২৩টি, কাঁকড়াজানে ৫০টি এবং পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ১২৬টি তালাকের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে ১৫৮টি।
একজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘সামান্য কারণে একজন নারী কখনো বিবাহবিচ্ছেদ চান না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে, তখন বাধ্য হয়েই এই কাজ করতে হয়।’
কনেপক্ষের তালাককে ডি-তালাক, ছেলেপক্ষের তালাককে বি-তালাক ও ছেলে-মেয়ের সমঝোতার তালাককে সি-তালাক বলা হয় বলে জানালেন কালিয়া ইউনিয়ন নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজি) মাহবুব সাদিক। সখীপুর উপজেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার কাজি শফিউল ইসলাম বললেন, বাল্যবিবাহ, স্বামী বিদেশে থাকা ও পরকীয়াঘটিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারে ফাটল ধরে পরে তা বিচ্ছেদে রূপ নিচ্ছে। তিনি জানান, সখীপুরের ৯০ শতাংশ তালাক স্ত্রীরা দিয়েছেন।
এক নারী তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের পেছনের কারণ জানান এই প্রতিবেদককে। তাঁর স্বামী বিয়ে করে ১৫ দিনের মাথায় বিদেশ চলে যান। বিয়ের সময় শর্ত ছিল স্ত্রীকে পড়াশোনা করতে দেওয়া হবে। কিছুদিন পর স্বামী বিদেশ থেকে বলেন পড়াশোনা করা যাবে না। কেন? স্বামী তখন ফোনে জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী নাকি অন্য কারও সঙ্গে প্রেম করছে। পড়াশোনা করলে তাঁকে ফেলে চলে যাবেন। এসব মিথ্যা বলে স্ত্রীকে পড়াশোনা বন্ধ করার জন্য চাপ দেন। তবু স্ত্রী পড়াশোনা চালিয়ে যান। এরপর থেকে স্বামী কোনো খরচ দেন না তাঁকে। কোনো ফোন করেন না। মেয়েটিকে তালাক দেবেন বলে হুমকি দেন। দুই বছর স্বামী তাঁর খোঁজ না নেওয়ায় স্ত্রীই স্বামীকে তালাক দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রাফেজা আক্তার বলেন, ‘আগে নারীর ক্ষমতায়ন এখনকার মতো ছিল না। পুরুষদের অত্যাচার সহ্য করে নীরবে সংসার করেছে। এখন মেয়েরা সচেতন, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ায় মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এখন মেয়েরা আর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে চায় না।’
এখন আগের চেয়ে নারীরা শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ায় তাঁদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা আর মুখ বুজে থাকেন না। তাই হয়তো বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাটা বেড়েছে। এমনটা মনে করেন সখীপুর আবাসিক মহিলা অনার্স কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শহীদুল্লাহ কায়সার।

Facebook Comments