ঘটনাটা ৩১ বছর আগের। এক তরুণী জীবিকার তাগিদে কাজ নেন পোশাক কারখানায়। মাননিয়ন্ত্রণকর্মী হিসেবে ৮০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু। কাজে যোগ দিয়ে কিছু সময় যেতেই নিজের ভেতরই যেন পরিবর্তনের ডাক পেলেন—এভাবে হবে না।
সে সময়গুলোর কথা উঠতেই বেবি হাসানের চেহারায় দৃঢ়তা। বললেন, ‘দিনে ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করতাম। সকাল আটটায় কাজ শুরু হতো, ফিরতাম রাত ১০টার দিকে। কোনো দিন কাজে অবহেলা করিনি। শুরুতে অনেক দূর যেতে হবে এমন লক্ষ্য ছিল না, তবে যখন কাজটাকে ভালোবেসে ফেললাম, তখন স্থির করলাম একটা পর্যায়ে যেতে হবে।’
নব্বইয়ে দশকের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠান বদলে একটি বায়িং হাউসে যোগ দেন বেবি। পাশাপাশি টুকটাক এ–সংক্রান্ত ব্যবসাও শুরু করেন।
২০০০ সালে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের একটি সংগঠনের সদস্য হন তিনি। হাতে তেমন নগদ টাকা ছিল না, তাই দ্বারস্থ হন ব্যাংকের। দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে হালিশহর কে ব্লকে ‘বিতনু’ নামের একটি বুটিকের শোরুম খোলেন। ওই বছরই চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইম্যান এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন (উই)। ওই সংগঠনের সদস্য হন বেবি।
২০০০ সালের শেষের দিকে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ জন অংশ নেন কলকাতার একটি কুটিরশিল্প মেলায়। সেখানে গিয়েই চোখ খুলে যায় তাঁর। তিনি বলেন, ‘ওই মেলায় গিয়েই ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। কী করে জানি সেদিনই ব্যবসার পোকা ঢুকে যায় মাথায়। মনস্থির করি, আমাকে ব্যবসায় সফল হতে হবে।’
২০০২ সালে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একটি বায়িং হাউস দাঁড় করানো শুরু করেন। এরপর ২০০৯ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন বিএস অ্যাপারেল নামের পৃথক বায়িং হাউস। বছর বছর এই প্রতিষ্ঠানের কলেবর বাড়ছে। মা বেবি হাসানের সঙ্গে ছেলে সালাহউদ্দিন চৌধুরীও সম্প্রতি ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন।
প্রায় শূন্য থেকে আজকের অবস্থানে আসার কৃতিত্বের ভাগ বেবি হাসান দিতে চান আরও দুজন নারীকে। একজন তাঁর মা ফরিদা খাতুন, অন্যজন ব্যবসায়ী নেতা মনোয়ারা হাকিম আলী। ১৯৯৮ সালে অসুস্থতায় ভুগে বেবি হাসানের মা মারা যান। মেয়ের চূড়ান্ত সাফল্য মা দেখে যেতে পারেননি, এই কষ্টই এখন তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। বেবি হাসানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে হলেও তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে।
চাকরির পাশাপাশি সংসারের দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিল না। কিন্তু তাতে দুঃখ নেই বেবির। তিনি বলেন, চাকরি বা ব্যবসা মেয়েদের জন্য খুব কঠিন, এমনটি কখনো মনে হয়নি। চেষ্টা থাকলে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন।’ এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন বেবির মুখে সাফল্যর তৃপ্তির হাসি। বললেন, ‘পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাঁদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করো। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করব না, চাকরি দেব।’
লিখাটি প্রথম আলো প্রকাশ করেছে। আশা করছি লিখাটি থেকে আপনারা প্রেরণা পাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে…..