লিডারশীপ হচ্ছে নিজের খেয়ে, অন্যকে দিয়ে বনের মোষ তাড়ানো। আরো সোজা কথায় বললে, যাকে অন্যরা ফলো করে সে-ই লিডার। সেটা ভার্সিটির ক্লাব, ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশন, কিংবা ট্যুরে বের হওয়া ফ্রেন্ডদের গ্রুপেও হতে পারে। তবে লিডারশীপ কোয়ালিফিকেশনের কথা শুনলেই বেশিরভাগ পোলাপান হাফ প্যান্ট খুলে দৌড় মেরে বাকি জীবন দুধ-ভাত হয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ লিডারশীপ ডেভেলপ করা খুবই খুবই সোজা। সিম্পল ৪ টা স্টেপ ফলো করলে যে কেউ লিডার হতে পারবে।
স্টেপ-১: বি এভেইলএবল:
কম্পিউটারের খাঁচা, খেলা দেখার নেশা, বাথরুমের চিপা থেকে একটু সময় বের করতে হবে। ক্যাম্পাসে প্রায়ই কালচারাল ইভেন্ট, ক্যারিয়ার ক্লাব, ডিপার্টমেন্টের প্রোগ্রাম, ভলান্টিয়ার এক্টিভিটি হয়। এরকম একটা বা দুইটা ইভেন্টে যাবা।নির্ধারিত সময়ের একটু আগে গিয়ে কোনার মধ্যে লুকিয়ে না থেকে, অর্গানাইজাররা যেখানে ছোটাছুটি করতেছে তার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করবা। তেমন কিছু বলার বা করার দরকার নাই। জাস্ট দেখো, খেয়াল করো, অবজার্ভ করো। কেউ ভারি কিছু একা একা সরাইতে না পারলে একটু হেল্প করো। ব্যস, এই টুকুই। এর বেশি কিছু না।
স্টেপ-২: বি হেল্পফুল:
অর্গানাইজাররা যখন দেখবে তুমি হেল্প করতেছ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে বুঝাই দিচ্ছ তুমি এভেইলএবল। তখন তারাই বলবে, রিসেপশনের যে থাকার কথা সে এখনো আসে নাই। তুমি কি ওই খানে একটু বসতে পারবা? কোন গেস্ট আসলে সামনের সারিতে এনে বসবা। বা এই খাবারের প্যাকেটগুলার সাথে একটা করে ড্রিংকস দিতে পারবা? তখন হাসি মুখে বলবা- অবশ্যই। এই “অবশ্যই” শব্দটা বলে তুমি একটা অর্গানাইজেশনের আনঅফিসিয়াল মেম্বার হয়ে গেছ। এইভাবে দুই-তিনটা ইভেন্টে হেল্প করলে, ওরাই তোমাকে পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারি বা ফুড সেক্রেটারি বানায় দিবে। ব্যস, তোমার সিভিতে বড় বড় করে লেখার মতো একটা জিনিস পেয়ে গেলা। যারা রুমে বসে বসে গেইম অফ থ্রোন দেখতেছে তাদের চেয়ে এগিয়ে গেলা।
স্টেপ-৩: বি এ ফলোয়ার:
একটা অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হলেই সেটার সাথে দিনরাত ২৪ ঘন্টা লেগে থাকা লাগে না। মাসে ৩-৪ ঘন্টা বা সেমিস্টারে ১০-১৫ ঘন্টা সময় দিলেই হয়। তবে তোমাকে যেসব দায়িত্ব দিবে সেগুলা সিনসিয়ারলি করবা। যেখানে যেতে বলবে সেখানে যাবা। পড়ালেখা ঠিক মতো করো বা না করো, এই কাজে কোন ফাঁকিবাজি করবা না। সিনিয়ররা যেসব ডিসিশন নিচ্ছে, সেগুলা খেয়াল করবা। বেশিরভাগ জিনিসই কমন সেন্স। তোমার কোন অভিমত থাকলে জানাবা। বি এ গুড ফলোয়ার। গুড লিসেনার। রিলায়েবল টিম মেম্বার। আর কিছু না।
স্টেপ-৪: বি এ লিডার:
তুমি যখন থার্ড ইয়ারের শেষ দিকে যাবা, তখনই সিনিয়রদের বিদায় ঘন্টা বেজে উঠবে। তারা চাইবে তাদের প্রাণপ্রিয় অর্গানাইজেশনটা কোন ইফেক্টিভ এবং সিনসিয়ার পারসনের হাতে তুলে দিতে। তুমি যেহেতু এত দিন ধরে দায়িত্ব নিয়ে হেল্প করেছ। তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ দিবে। তারপর থেকে তুমিই জুনিয়রদের কাজে লাগাবা। তুমিই ডিসিশন মেক করবা। মানে তুমিই লিডার হয়ে যাবা।
সো, লিডার হওয়ার জন্য হেল্প করার মেন্টালিটি নিয়ে এখন যারা লিড দিচ্ছে তাদের ফলো করতে থাকো। সময়ের আবর্তনে সুযোগ তোমার কাছে চলে আসবে। এতদিন সিনিয়ররা যা কিছু করতো সেগুলা কপি-পেষ্ট করলেই তোমার ভিতরে সাহস বেড়ে যাবে, ক্লাবের ভিশন ডেভেলপ হয়ে যাবে। কাকে দিয়ে কিভাবে কাজ করিয়ে নিতে হবে সেই বুদ্ধি গজাবে। হচ্ছে না, হচ্ছে না বলেও, শেষ মুহূর্তে স্পন্সর জোগাড় হয়ে যাবে। ঠেকায় পড়ে, পোস্টার ডিজাইন, ম্যাগাজিন প্রিন্ট, টি-শার্ট ডিজাইন শিখে ফেলবে। দশ-পনের জনের একটা টিম চালানোর দক্ষতার আবির্ভাব হয়ে যাবে। এভাবে কাজে নেমে পড়লে ঠিক সময়ে লিডারশীপ স্কিলও পয়দা হয়ে যাবে।
জীবনে সফল হওয়ার জন্য কনফিডেন্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কনফিডেন্স, পিপল ম্যানেজমেন্ট আর লিডারশীপ স্কিল ডেভেলপ করার জন্য ভার্সিটি লাইফ এবং ভার্সিটির অর্গানাইজেশনের চাইতে মামুলি জায়গা আর নাই। তাই যখন কোন টিমের সদস্য হবা তখন লিডার হওয়ার আগে ভালো টিম মেম্বার হও। কোন কিছু চাপিয়ে দেয়ার আগে, সেটা সবার সাথে ডিসকাস করে সবার ভিতর থেকে বের করে আনার চেষ্টা করো। অন্যের উপর কাজ চাপিয়ে না দিয়ে, সবাই মিলে দায়িত্ব ভাগ করে নাও। পজিটিভলি চিন্তা করো। আটকে গেলে, সিনিয়র বা স্যারদের পরামর্শ নিবে। যারা নতুন আসবে তাদেরকে কিভাবে কি করতে হবে বলে দিবে। এগুলাই লিডারশীপ। এগুলা করার জন্য ইচ্ছা আর চেষ্টাই যথেষ্ট।