ডা.সাকলায়েন রাসেল
“ডাক্তার মানুষকে বাঁচাতে পারে না
মানুষের বেঁচে থাকাটাকে সুন্দর করতে পারে।”
ভাগ্য কিভাবে মানুষকে নিয়ে খেলে আসেন আজ দেখে নেই। সেদিন একটি ছেলে পড়েছিল ছিনতাইকারীর কবলে। যা ছিল সব তুলে দিয়েছিল তাদের হাতে। প্রতিবাদ করেনি। কারো সাহায্যের জন্য চিৎকারও করেনি। তবুও, ছিনতাইকারী চলে যাওয়ার সময় খুর দিয়ে তার ডান বাহুতে হালকা একটা টান দেয়। মুহূর্তেই কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
নিকটস্থ একটি ফার্মেসিতে দৌড়ে গিয়ে সে রক্ত বন্ধের চেষ্টা করে। দোকানদার ‘কাম ডাক্তার’ তাঁর হাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়। তবুও রক্ত বন্ধ হয় না।গড়িয়ে গড়িয়ে ব্যান্ডেজ ভিজে যেতে থাকে। অতপর একটা স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয় ব্যাস, রক্ত পড়া বন্ধ। এরপর রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
ঢাকার বাইরের সে হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। সেদিন ভাসকুলার সার্জারী বিভাগে আমার ডিউটি ছিল। প্রথমে আমি সামান্য কাঁটা ভেবেছিলাম ব্যান্ডেজটাকেও খুব একটা খারাপ মনে হয়নি। কিন্তু যখন খুলতে গেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম।ব্যান্ডেজের ঠিক নিচেই স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। স্যালাইনের তার নিচ থেকে হাতটা কালচে হয়ে গেছে। আপনারাও শরীরকে হাতের সাথে মেলালে কালো হয়ে যাওয়া বিষয়টি স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।
ফলাফল রোগীর হাতটিই কেটে ফেলতে হয়েছিল! কেন হাতটি কেটে ফেলতে হয়েছিল?
খুর দিয়ে হালকা গর্ত হয়ে কেটে গিয়েছিল। তাতে শিরা (দেহের উপরিভাগের রক্তনালী) কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছিল। হালকা টাইট করে ব্যান্ডেজের চাপ দিয়ে। কিংবা শিরাটি চিহ্নিত করে বেঁধে দিলে এমনিতেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যেত।
কিন্তু স্থানীয় “কোয়াক চিকিৎসক” স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়ায় তাঁর মূল ধমনীও (দেহের গভীরের রক্তনালী) বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় রক্ত সরবরাহ। এভাবে একটানা প্রায় ৬ ঘন্টা রক্ত সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাতটি মারা যায়। সে কারণে বাহু থেকে পুরো হাত কেটে ফেলা ছাড়া আর উপায় ছিল না!
ক’টি অনুরোধঃ
১। কেটে বা ছিঁড়ে গেলে অতিরিক্ত টাইট ব্যান্ডেজ দেয়া থেকে বিরত থাকুন
২। চিকন ব্যান্ডেজ না দিয়ে চওড়া করে ব্যান্ডেজ দিন। প্রয়োজনে ব্যান্ডেজের নিচে তুলা ব্যবহার করুন।
৩। সাপে কাঁটলে একই কারণে দড়ি জাতিয় জিনিস দিয়ে না বেঁধে হালকা চাপে মোটা কাপড় যেমন মাফলার/ওড়না/গামছা দিয়ে বাধুন এতে প্রত্যাশিত শিরাপথ বন্ধ হয়ে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে।কিন্তু ধমনী বন্ধ হবেনা। ফলে পা হারানোর ঝুঁকিও থাকবে না।
সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।