ফাতিমা শাহীন
এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে বারোটার ঘর পেরিয়েছে। বাসায় এসে বিশ্রাম নিয়ে দুটো খেতে বসেছি। ডাইনিং টেবিলে রুসাফী বললো, আম্মু , তুমি কি শিওর যে আমরা প্রপারলি কানে শুনতে পাচ্ছি ? আমি ম্লান হেসে বললাম, আমি বোধহয় এখনো ততটা শিওর নই…..।
আসলে ঢাকায় কত শব্দের ভেতরে যে আমরা ছিলাম ! প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি স্থানে নানান ধরণের শব্দ। চেনা অচেনা , বোধগম্য অবোধগম্য শব্দরাজি এ ক’দিনের মধ্যে আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল যেন।
অন্যদিকে, নভেম্বর-জানুয়ারি মাস বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলের মাস। জোহর নামাজের পর থেকেই চতুর্দিক থেকে ভেসে আসতে থাকে ওয়াজের ধ্বনি। মাঝে মাঝে কোন কোন রাতে না ঘুমিয়ে কান পেতে থাকতাম যে কোন একটি ওয়াজের প্রতি মন:সংযোগ করে শুনবো বলে, কিন্তু সে উপায় কি আর আছে ? শত মাইকে , শত কণ্ঠে হিদায়াতের কত না মহান বাণী ধ্বনিত হচ্ছে , কিন্ত কোনটাই শুনে কোন কিছু বোঝার উপায় নেই।
তবুও , বছরের পর বছরভর , নি:শব্দ ও স্তব্ধতায় মোড়া এই আমাকে কি যে নিবিড় মমতার অচ্ছেদ্য এক বাঁধনে বেঁধে রেখেছিল আমার প্রিয় ঢাকা ! ফিরে আসার দিন এয়ারপোর্টে আসার পথে আমার হৃদয়খানি সহস্র টুকরো করে ঢাকার পথে পথে আমি ছড়িয়ে রেখে এসেছি। কান পেতে তৃষ্ণার্তের মত শুনে নিয়েছি শত মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি , রাজপথের ব্যস্তসমস্ত মানুষের উচ্চকণ্ঠ , কারণে অকারণে বেজে ওঠা যানবাহনের হর্ন , ট্রাফিক পুলিশের হুইসেল ….।
মাঝে মাঝে অকারণেই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। মনের আয়নায় ভেসে ওঠে চারতলা একটি বাড়ির বারান্দা , যেখানে বাতাসে উড়ছে আম্মুর শুকোতে দেয়া শাড়ির আঁচল, আব্বুর সবুজ গামছাখানি … আমার পুরো বাংলাদেশ হয়ে ! চোখ ভিজে ওঠে অজান্তেই ….
সেই ভেজা চোখ মুছতে ওই আঁচলখানির ছোঁয়া পেতে মন কেবলি হাহাকার করে ওঠে …. কেবলি …।।