রুমানা শারমীন বিশেষ ধরনের বই তৈরি করছেন, সেগুলোকে বলে ‘পপ-আপ বই’। এই বইগুলো মেলে ধরলেই পাতায় পাতায় উঠে আসে ত্রিমাত্রিক দৃশ্য। তৈরি হয় গল্প। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় একটি ভবনের চারতলায় ছোট আকারের দুটি ঘর। সেই ঘরের মধ্যে কার্টনে ঠাসা বই। তার মধ্যে কোনো রকমে একজন বসে কাজ করা যায়। আরেক ঘরে মেঝেতে বিছানা পাতা। সেখানেও ছড়ানো ছিটানো বই, পেনসিল, কাগজ, ল্যাপটপ কম্পিউটার। এই অফিসে মহা ব্যস্ত রুমানা শারমিন। আগামী বইমেলায় তাঁর ১০টি বই বেরোবে।
রুমানা বলেন, পপ-আপ বইয়ের ভাঁজ খুললেই অন্য জগতে যাওয়া যাবে। বিশেষ থ্রিডি কৌশল ব্যবহার করে পাতায় পাতায় সাজানো হয়েছে গল্পেরই বিভিন্ন দৃশ্য। বইয়ের ভেতরে ভাঁজ করে রাখা এসব দৃশ্যপৃষ্ঠা ওলটানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজ খুলে দাঁড়িয়ে যায় এবং গল্পটা আক্ষরিক অর্থেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কোনো কোনো পপ-আপকে আবার নাড়াচাড়াও করা যায়। বিশেষ ধরনের কাগজ, স্টিকার, আর বিশেষ বাঁধাইয়ের মাধ্যমে প্রতিটি পাতায় গল্পের ছবি উঠে আসে ত্রিমাত্রিক আকারে।
শখ থেকেই এই পপ-আপ বই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন রুমানা শারমীন। এটাই এখন তাঁর পেশা। তিনি ২০১৪ সালের শেষ দিকে এসে এই উদ্যোগ শুরু করেন। পরে ‘দ্য পপ-আপ ফ্যাক্টরি’ নামে প্রকাশনা সংস্থা দাঁড় করিয়েছেন। তাঁরা পপ-আপ বইয়ের পাশাপাশি বর্তমানে গুগল কার্ডবোর্ড (ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি প্রযুক্তির ছবি দেখার যন্ত্র) নিয়েও কাজ করছেন। তাঁদের মূল উদ্যোগ হচ্ছে পপ-আপ বই। এর সঙ্গে ব্যবসা হিসেবে যুক্ত হয়েছে গুগল কার্ডবোর্ড উপযোগী পণ্য তৈরি। রুমানার কাজ হচ্ছে নকশা, বিষয়বস্তুসহ বইয়ের দিক দেখা। তাঁর সঙ্গে আছেন আরেক উদ্যোক্তা শাফিন আহমেদ। তিনি বইয়ের উৎপাদন, বিপণনসহ বিভিন্ন বিষয় দেখছেন। মাত্র পাঁচজন কর্মী নিয়ে রুমানা তাঁর উদ্যোগ শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
রুমানা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে পড়ার সময় ত্রিমাত্রিক বই তৈরির কাজ শুরু করেন। রুমানা বলেন, ‘এখন সময় স্মার্টফোনের। মানুষ বই পড়তে চায় না। শিশু-কিশোরেরাও বই পড়তে চায় না। শিশুদের স্মার্টফোন থেকে বই পড়ার দিকে কীভাবে মনোযোগী করা যায়, সেই চিন্তা থেকেই আমার পপ-আপ বই তৈরি শুরু।’
নিজের উদ্যোগে, অর্থায়নে কাজ শুরু করেছেন রুমানা শারমীন। প্রথমে নিজের হাতে বই তৈরি করে বিক্রি করতেন। চাহিদা বাড়ায় এখন উৎপাদন করছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠান লাভজনক অবস্থায় আছে বলে জানালেন। গত কয়েক মাসে দুই হাজার কার্ডবোর্ডের উপযোগী ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি ছবি ও বই বিক্রি হয়েছে।
রুমানাদের প্রকাশিত সব বইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে রং-বেরঙের পপ-আপ। বইগুলো দেশেই তৈরি হচ্ছে দেশীয় গল্প আর দেশীয় ডিজাইনারদের হাতে। এটা একাধারে হস্তশিল্প ও প্রকাশনা সংস্থা। ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায় শিশুতোষ গল্পের পপ-আপ বই আনার পর তাঁরা দারুণ সাড়া পান। একটি ব্যাংক থেকে ঋণও পান। উদ্যোক্তা হিসেবে এখন রুমানা বেশ পরিচিতি পেয়েছেন।