‘যে রাত হাজার মাসের চেয়েও সেরা!’
সাজেদা হোমায়রা
রমজান মাসের প্রতিটি রাত ও দিনের সবগুলো মুহূর্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি নিয়ামত! এসময় আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি থাকে তাঁর বান্দাদের প্রতি।
পুরো রমজান মাসই সওয়ার অর্জনের মাস। আর এ মাসের শেষ দশকেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এক রাত! এ রাতেই নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এ রাতের মর্যাদা ‘সূরা কদর’ এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
“তুমি কি জানো? কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উওম।” – সূরা কদরঃ২-৩
এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা কূল জিবরাঈল আ. এর নেতৃত্বে পৃথিবীতে নেমে আসে। আর ইবাদতকারীর উপর রহমত, বরকত, মাগফিরাত বর্ষণ করতে থাকে। এটি এমন একটি রাত যে রাতে তাকদীরের ফায়সালা করা হয়। এ রাতে ভাগ্যের ভাঙ্গা গড়া চলে। এ রাতে সফলতা, ব্যর্থতা, রিযিক সহ সবকিছুর ভাগ্যে নির্ধারিত হয়। শুধুমাত্র দুয়াই পারে এই ভাগ্য নির্ধারণে পরিবর্তন আনতে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেনঃ “যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল লাইল/তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে আল্লাহ তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
সুবহানাল্লাহ!
রমজানের শেষ দশকের কোন রাতটি লাইলাতুল কদরের রাত, সে সম্পর্কে রাসূল সা. নির্দিষ্ট করে বলেননি। আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ “তোমরা শবে কদর অনুসন্ধান করো রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে।” তাই রাসূল সা. এর কথা অনুযায়ী শবে কদর রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখেই খুঁজতে হবে।
আমরা বেশিরভাগই শুধুমাত্র ২৭ রমজানের রাতকে শবে কদর ভেবে বাকী অন্য রাতগুলোয় ইবাদতের ব্যাপারে উদাসীন থাকি। আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশদিনের প্রতিটি বেজোড় রাতই সমান গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা। তাহলে আর শবে কদর মিস হবার সম্ভাবনা থাকে না।
কদরের রাতে নির্ধারিত কোনো বিশেষ পদ্বতির নামাজ অথবা কোনো নির্দিষ্ট আমল করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
এ রাতগুলোতে বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে।
এ রাতে আমরা যা যা করতে পারি….
১. বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া
২. কুরআন তেলাওয়াত, কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর পড়া।
৩. আল্লাহর জিকির করা।
৪. তাওবা ও ইসতিগফার করা
৫. অনেক অনেক দুয়া করা
৬. দান সাদকাহ করা
এছাড়াও যে কোনো সৎ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে পারি। এ রাতের সৎ কাজ হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে বেশি ভালো! এ রাতে আমরা আল্লাহর কাছে দুয়া ও আমলের মাধ্যমে আমাদের তাকদীর পরিবর্তন করে নিতে পারি….সুযোগ করে নিতে পারি জান্নাতে যাওয়ার!
এ রাতের জন্য রাসূল সা. হযরত আয়েশা রা. কে বিশেষ একটি দুয়া শিক্ষা দিয়েছেন। সেই দুয়াটি আমরা বেশি বেশি করে পড়বো।
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফুআন্নি।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল! ক্ষমা করাকে আপনি পছন্দ করেন। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
আয়েশা রা. বলেন, “রমজানের শেষ দশদিন যখন শুরু হতো, রাসূল সা. কোমর বেঁধে নিতেন। একেবারেই বিছানায় যেতেন না। নিজে জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।”
হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ রাতে আমরাও ইবাদতে মশগুল হই….সিজদায় নুঁয়ে থাকি প্রভুর প্রতি! সঙ্গোপনে নিজেকে সঁপে দেই পরম দয়াময়ের কাছে!
শুধু ২৭ এর রাত নয়, ইবাদাতে কাটাই শেষ দশকের প্রতিটি রাত…
নিশ্চয়ই আমরা খুঁজে পাবো শবে কদর!
সাজেদা হোমায়রা