banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 335 বার পঠিত

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ৫…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
৫…
ওমর আল জাবির

আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না।

এই আয়াতটি একজন মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। আমাদের অনেকের ভেতরেই একটা ভুল ধারণা আছে যে, আমরা মনে করি: আমরা আল্লাহর تعالى জন্য যত কষ্ট করবো, তত সওয়াব। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আল্লাহর تعالى কাছে সবচেয়ে পছন্দের ইবাদত হচ্ছে ফরজ ইবাদতগুলো। তিনি কখনই চান না আমরা যেন নিজেদেরকে জোর করি, ইচ্ছা করে কষ্ট দেই। তিনি চান আমাদের জীবনটা যেন সহজ, সুন্দর হয়। আমরা যেন দুনিয়ার হাজারো প্রলোভন থেকে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তারপর একদিন জান্নাতে গিয়ে চিরজীবন আনন্দে থাকতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে অনেকে ইসলাম ধর্মের মধ্যে কঠিন সব ইবাদত, হাজারো শর্ত জুড়ে দিয়ে ধর্মকে অনেক কঠিন করে গেছেন। যার ফলাফল হয়েছে, গত কয়েক প্রজন্ম ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে।

আজকাল অনেকেই বলেন, “ধর্ম মানলে জীবন অনেক কঠিন হয়ে যায়। এটা করা যাবে না, ওটা দেখা যাবে না, এটা বলা যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না। জীবনের প্রতি পদে বাঁধা। ধর্ম মানলে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যায়। ধর্ম ছাড়াই অনেক ভালো আছি।”

আপনারা যদি পাশ্চাত্যের অমুসলিমদের মুসলিম হওয়ার ঘটনাগুলো পড়েন, দেখবেন তাদের ঘটনায় একটি ব্যাপার বার বার ঘুরে ফিরে আসে: তাদের অনেকেই দিনরাত ফুর্তি করত, ব্যভিচার, মদ ছিল তাদের জীবনে খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। শনি-রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বার-এ গিয়ে সারারাত ড্রিঙ্ক করে মাতাল হয়ে আসত। তারপর যখন সোমবারে হুঁশ ফিরত, এক ভয়ংকর হতাশা, বিষণ্ণতায় ডুবে যেত। নানা ধরণের অসুখে ভুগত। জীবনটা তাদের কাছে অসহ্য মনে হতো। নিজের কাছে নিজেকে একটা পশু মনে হতো। “জীবন কি এটাই? জীবনে কি এর চেয়ে বড় কিছু নেই? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কী লাভ?”—এই ধরনের প্রশ্ন তাদেরকে পাগলের মতো তাড়িয়ে বেড়াত। তাদের জীবনে কোনো সুখ ছিল না, ছিল কিছু ক্ষণস্থায়ী ফুর্তি। হতাশা, বিষণ্ণতা, অশান্তি এবং নিজেকে শেষ করে দেওয়ার একটা অসহ্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে দিনরাত নিজের সাথে সংগ্রাম করতে হতো।

আল্লাহ تعالى আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন, যেন আমাদের জীবনটা সহজ হয়, এরকম কঠিন না হয়। তিনি আমাদেরকে যে জীবন-বিধান দিয়ে দিয়েছেন, সেভাবে জীবন পার করলে এই দুনিয়াতেই আমরা হাসিখুশি থাকতে পারব, নিজের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, দেশে শান্তি নিয়ে আসতে পারব। একই সাথে মৃত্যুর পরে অনন্তকাল পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনাবিল, অফুরন্ত শান্তিতে জান্নাত উপভোগ করতে পারব। তিনি আমাদেরকে বলেননি এই দুনিয়াতে নিজেদের উপরে ইচ্ছা করে কষ্ট দিতে। বরং তিনি পৃথিবীতে অসংখ্য হালাল আনন্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং সেগুলো উপভোগ করার নির্দেশ কু’রআনেই দিয়েছেন—

আল্লাহ তোমাদেরকে এই জীবনে যা দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে এর পরের জীবনকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করো, কিন্তু সেই সাথে এই দুনিয়াতে তোমার যে প্রাপ্য রয়েছে, সেটা ভুলে যেও না। অন্যের সাথে ভালো কাজ করো, যেভাবে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দিয়েছেন। এই পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়ানোর চেষ্টা করবে না। দুর্নীতিবাজদের আল্লাহ পছন্দ করেন না! [আল-কাসাস ২৮:৭৭]

বল, “কে তোমাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট সৌন্দর্য এবং ভালো-পবিত্র খাবার উপভোগ করতে মানা করেছে, যা তিনি তার বান্দাদের জন্যই তৈরি করেছেন?” বলে দাও, “এগুলো তাদেরই জন্য যারা এই দুনিয়াতে বিশ্বাস করে: কিয়ামতের দিন এগুলো শুধুমাত্র তাদেরই হবে।” এভাবেই আমি আমার বাণীকে পরিষ্কার করে দেই বুদ্ধিমান লোকদের জন্য। [আল-আরাফ ৭:৩২]

ও প্রভু, আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিয়েন। আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। [আল-বাকারাহ ২:২০১]

উপরের আয়াতগুলো এবং বাকারাহ-এর আলোচ্য আয়াতের মূলকথা একটাই: জীবনকে উপভোগ করতে হবে আল্লাহর প্রতি অনুগত থেকে, কৃতজ্ঞ থেকে এবং পাপের ব্যাপারে সবসময় সাবধান থেকে। মনে রাখতে হবে, দুনিয়াতে আমরা যা কিছুই উপভোগ করব, কিয়ামতের দিন সেগুলোর সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। সুতরাং, আমরা যেন উপভোগ করতে গিয়ে আল্লাহর تعالى অবাধ্য না হই। এমন কিছু যেন করে না ফেলি, যেটা কিয়ামতের দিন আমাদেরকে দেখানো হলে আমরা লজ্জায় কিছু বলতে পারব না।

রোজা নিয়ে সূরা আল-বাক্বারাহ’র শেষ আয়াতটি এসেছে একটি আয়াত পরে—

রোজার রাতে স্ত্রীদের সাথে ঘনিস্ট হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক, তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে প্রতারণা করছিলে। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন, তিনি তোমাদেরকে নিঃশর্তে মাফ করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা পাওয়ার চেষ্টা করো। খাও, পান করো, যতক্ষণ না ভোরের সাদা রেখা অন্ধকারের রেখা থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা না হয়। তারপর রাত আসা পর্যন্ত রোজা সম্পূর্ণ করো। মসজিদে ইতিকাফ করা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না। এই হলো আল্লাহর দেওয়া সীমা, এর কাছেও যাবে না। এভাবে আল্লাহ তার বাণীকে মানুষের জন্য পরিস্কার করে দেন, যেন মানুষ অন্যায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৭]

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

সূত্র:

[১] নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।[২] ম্যাসেজ অফ দা কু’রআন — মুহাম্মাদ আসাদ।[৩] তাফহিমুল কু’রআন — মাওলানা মাওদুদি।[৪] মা’রিফুল কু’রআন — মুফতি শাফি উসমানী।[৫] মুহাম্মাদ মোহার আলি — A Word for Word Meaning of The Quran[৬] সৈয়দ কুতব — In the Shade of the Quran[৭] তাদাব্বুরে কু’রআন – আমিন আহসান ইসলাহি।[৮] তাফসিরে তাওযীহুল কু’রআন — মুফতি তাক্বি উসমানী।[৯] বায়ান আল কু’রআন — ড: ইসরার আহমেদ।[১০] তাফসীর উল কু’রআন — মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদি[১১] কু’রআন তাফসীর — আব্দুর রাহিম আস-সারানবি[১২] আত-তাবারি-এর তাফসীরের অনুবাদ।[১৩] তাফসির ইবন আব্বাস।[১৪] তাফসির আল কুরতুবি।[১৫] তাফসির আল জালালাইন।[১৬] লুঘাতুল কুরআন — গুলাম আহমেদ পারভেজ।

সুত্র: কুরআনের কথা

Facebook Comments