মেঘলা দিন। সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সব মিলিয়ে এক রোমান্টিক আবহ। উত্তরার শুটিং বাড়ি ‘ক্ষণিকালয়ে’র বারান্দায় দাঁড়িয়ে এমনটাই যেন অনুভব হচ্ছিল। কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম কাজ বলেও যে একটা কথা আছে। আর তারই কারণে এই শুটিং বাড়িতে আসা। তাই সেই আবহের মগ্নতা কমিয়ে কাজেই মনোযোগ দিতে হল। এই শুটিং বাড়িতে জনপ্রিয় নির্মাতা সাজ্জাদ সুমনের নাটকের দৃশ্যধারণের কাজ চলছে। তার এই নাটকে দ্বিতীয়বারের মতো জুটিবদ্ধ হয়েছেন সারিকা এবং ইমন। একটু পরেই শট দিবেন সারিকা-ইমন তাই পরিচালক সবাইকে প্রস্তুত হতে বললেন। শটের জন্য সাদা টি-শার্ট আর জিন্স পরনে সুদর্শন ইমন হাজির। নেই শুধু সারিকা। হঠাৎ সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা গেল। তাকিয়ে দেখতেই লাল শাড়ি পরনে সারিকাকে দেখা গেল।
শটের জন্য প্রস্তুত তারা। পরিচালক অ্যাকশন বলতেই আয়নার সামনে বসে থাকা সারিকাকে পিছন থেকে এসে ইমন বলে উঠলেন, ‘চুল তার কবে কার অন্ধকার বিদিশার দিশা’।
জীবনানন্দের কবিতার লাইনটি যেন আবারো বাইরের রোমান্টিক আবহের কথা মনে করিয়ে দিল। অবশ্য পরিচালকের কাছ থেকে জানা গেল এই দৃশ্য রোমান্টিক হবে। বাহ, রোমান্টিক আবহে রোমান্টিক দৃশ্য। দৃশ্যটি যখন নেয়া হচ্ছিল তখন মনিটরে এক পলক তাকিয়ে রইলাম। তিন বছর পর অভিনয়ে ফেরা সারিকা এখনও যেন তার জায়গায় সেই আগের সারিকা। ইমন আর সারিকা রোমান্টিক দৃশ্য এক শটেই ওকে। পরিচালকও খুশি।
ইমন সারিকার বন্ধুত্বের কথা কারো অজানা নয়। কিন্তু এই বন্ধুত্ব জীবনে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার জুটি বেধে কাজ করছেন তারা। নাটকে নীলা চরিত্রে আছেন সারিকা আর আবির চরিত্রে ইমন। নাটকটি রচনা করেছেন মেজবাহ উদ্দীন সুমন। নাম ‘নীল ঘুম’।
নাটকের নাম শুনে গল্পটি জানার আগ্রহ বেড়ে গেল। সেই আবদার থেকে পরিচালককে জিজ্ঞেস করা।
পরিচালক সাজ্জাদ সুমন বলেন, ‘জীবনে অনেক পরিচালনা করেছি। তবে এবারেরটা আমার জন্য বেশ স্পেশাল। বেশ সুন্দর গল্প এবং হৃদয়স্পর্শ করবে সবার। নীলা-আবির সুখী দম্পতি। তাদের দিন ভালো মতই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের জীবনে আসে এক দুঃখজনক দিন। এর বেশি কিছু এখনই বলতে চাচ্ছি না। তবে দর্শকদের ভালো লাগবে আশা করি।’
পরিচালক গল্পের কিছুটা বলতে গিয়েই যেন কিছুটা শান্ত। তখন কিছুটা আঁচ করা গেল কিছু একটা স্পর্শকাতর গল্পই হবে।
সারিকার সঙ্গে এই পরিচালকের প্রথম কাজ। তাই কেমন অনুভূতি জানতে চাওয়া হল। তিনি বলেন, ‘গল্পের জন্য একটু সুন্দর, মিষ্টি মেয়ের দরকার ছিল। যার জন্য সারিকা একদম ঠিক। গল্পের চরিত্রের সারিকাকে একদম মানিয়েছে। সে খুবই ভালো একজন অভিনেত্রী’।
অভিনয়ে ফিরে যার এতো প্রশংসা সেই সারিকাকে শট দেয়ার পর ছবির জন্য কিছু সময় বের করে নেয়া হল। সঙ্গে সুদর্শন ইমন। আর ছবি তুলতে তুলতেই কথা হল তাদের সঙ্গে।
প্রথমে ইমন বলে উঠলেন, ‘কাজটি বেশ স্পেশাল আমার জন্য। এর গল্প খুবই সুন্দর। গল্পে সারিকা আর আমি সুখী দম্পতি। সারিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব অনেক দিনের। কিন্তু কাজ কম। তারপরও একবারের জন্য মনে হচ্ছে না যে আমরা আগে কখনও কাজ করিনি’।
এবার যে সারিকার পালা। মিষ্টি মেয়ে সারিকার মুখেও ইমনের প্রশংসা। গল্প নিয়েও বেশ খুশি তিনি। ফেরার পর ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিনয়ে ফেরার পর থেকে একটি দিনও শান্তি নেই। শুটিং নিয়েই ব্যস্ত। বাসায় বাচ্চাকেও সময় দিতে পারছি না। তবে পুরনো জায়গায় ফিরে বেশ উচ্ছ্বসিত আমি।’
ছবি তোলার মধ্যেই যেন সারিকা ইমনের গভীর বন্ধুত্বের ছাপ দেখা গেল। তাদের এই মিষ্টি বন্ধুত্ব সম্পর্কের ছবির পর্ব শেষ হতেই কথার পালাও শেষ। কারণ এর পরেই আবারো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন তারা দুজন। আর তাদের মেঘলা দিনের রোম্যান্টিক দৃশ্যগুলো লাক্স নিবেদিত ‘নীল ঘুম’ পর্দায় দেখা যাবে ঈদের দ্বিতীয় দিন আরটিভিতে।