‘মৃগীরোগ’
ডা. মারুফ রায়হান খান
আজ ইন্টারন্যাশনাল এপিলেপ্সি ডে। এপিলেপ্সি আমাদের দেশে মৃগীরোগ নামে পরিচিত।
সারা পৃথিবী জুড়েই সবেচেয়ে বেশি যে স্নায়ুরোগটি দেখা যায় তা হচ্ছে এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন এপিলেপ্সির রোগী আছে, যার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন রোগীই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
এপিলেপ্সি কী?
খুব সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে, বারবার খিঁচুনি হবার প্রবণতা যেখানে কোনো ধরনের প্ররোচনা থাকে না–তাকেই এপিলেপ্সি বলে।
এটি সাধারণত ২০ বছরের আগে কিংবা ৬০ বছর বয়সের পর শুরু হয়।
কী কী কারণকে দায়ী করা হয় এ রোগের পেছনে?
১. অনেকক্ষেত্রেই কোনো কারণ জানা যায় না।
২. শিশু মায়ের গর্ভে থাকার সময় কিছু জীবাণু দিয়ে যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন : TORCH, HIV।
৩. জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের গঠনে যদি ত্রুটি থাকে।
৪. হাইপোক্সিক ইশকেমিক এনকেফালোপ্যাথি (সাধারণত নবজাতক জন্মের পর দেরি করে কাঁদলে এ সমস্যা হয়ে থাকে)।
৫. মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের আবরণে কোনো ইনফেকশান, যেমন : মেনিনজাইটিস।
৬. মস্তিষ্কে কোনো আঘাত।
৭. মস্তিষ্কে কোনো টিউমার।
৮. কিছু ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।
কী কী বিষয় মৃগীরোগের এ খিঁচুনিকে ত্বরান্বিত করতে পারে?
১. কম ঘুম হওয়া
২. যারা মৃগীরোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যদি ওষুধ না খান
৩. মদ্যপান (বিশেষ করে মদ্যপান ছাড়ার সময়)
৪. শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ
৫. ঝিকিমিকি আলোর সংস্পর্শে যেমন : টেলিভিশন এবং কম্পিউটার স্ক্রিন
৬. উচ্চ শব্দ, মিউজিক, পড়া, গরম পানিতে গোসল ইত্যাদিও অনেকের ক্ষেত্রে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।
কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?
১. ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম : এটি অনেকটা ইসিজি পরীক্ষার মতো, তবে এটি মস্তিষ্কের। কখনও কখনও এটা দিয়ে এপিলেপ্সি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে যদি এ পরীক্ষা নরমাল আসে তার মানে এই না যে তার এপিলেপ্সি থাকার সম্ভাবনা নেই।
২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এম.আর.আই করতে হতে পারে।
কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?
মৃগী রোগের নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়, যা এন্টিএপিলেপ্টিক ড্রাগ নামে পরিচিত।
কতোদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?
যদি রোগী খিঁচুনি-বিহীন কমপক্ষে দুই বছর পার করে, মৃগীরোগের ওষুধ ধীরে ধীরে পরবর্তী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করা যায়।
জীবনযাত্রায় কী কী পরিবর্তন আনতে হয়?
১. উজ্জ্বল এবং ঝলকানো আলো পরিহার করতে হবে। যেমন : টিভি, ভিডিও গেইমস।
২. আগুন থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩. পানিতে ঝাঁপ দেওয়া বা সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৪. গাছে চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
এ রোগের ভবিষ্যত কেমন?
১. ৭০% রোগীর ক্ষেত্রেই খিঁচুনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
২. ৫-১০% রোগীর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বারবার হতে পারে এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে। ৩. ৩০% রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরু থেকেই “চিকিৎসা করা/নিয়ন্ত্রণ করা” বেশ কঠিন বলে বিবেচিত হয়