ডা. এম এস কবীর জুয়েল
“এই সব ‘বিকৃত হাসি’-ই ওই সব পাষাণ হৃদয়ের অনুপ্রেরণা ও অনুঘটক, যাহাদের কারনে আমরা সারা মাস ব্যাপিয়া ওদের কাউন্সিলিং করিয়া রাস্তায় ছাড়িয়া দিলে-ও তাহারা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যায়”
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত। ওই দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া দুইজন হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।
আমার অভিজ্ঞানে পরিবহন কর্মীদের ৫৬% মাদকাসক্ত ও বিকৃত মানসিকতায় আক্রান্ত, আমাদের CSR(Corporate Social Responsibility) -এর অধীনে স্বল্পমূল্যের মাদকাসক্তি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র গুলোর পরিসংখ্যান তা-ই বলে। ব্যস্ততা সত্ত্বেও অভিজাত এলাকার সেন্টারগুলো থেকে সময় বের করে আমি অনেক কাঁদা জল পেরিয়ে নগরীর ঘিঞ্জি এলাকায় সপ্তাহে এক দিন হলেও যাই। ওদেরকে সৎ ও সুন্দর জীবনবোধ, পেশাগত শৃঙ্খলা, মানবতা ও সর্বোপরি মাদকমুক্ত ধর্মাশ্রয়ী উপার্জনের ওপর গুরুত্তারোপ করে থাকি।
রাজধানীতে চলাচলরত যানবাহনের অধিকাংশরই লুকিং গ্লাস, ব্রেক লাইট ও সিগন্যাল লাইট নেই। থাকলেও সেগুলো কাজ করে না। এমনকি অনেক যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেসও নেই। মরদেহ দুটি পড়েছিল রাস্তায়। নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। থেঁতলে গেছে মুখ। হাত-পা ভেঙে খণ্ড খণ্ড। কংক্রিটের কালছে বর্ণের রাস্তা লাল রক্তে ভাসছে। মরদেহ দুটি ঘিরে চলছে সহপাঠীদের আহজারি, হাউমাউ কান্না আর বিলাপ।
এ দায় তো পরিবহন কর্মীদের ও, তাই অন্যদের জীবনাচারে ওদের পেশার ভূমিকা শীর্ষক আলোচ্য বিষয়াদি আমাদের কাউন্সিলিং সেশন গুলোতে প্রাধান্য পায়।
উন্নত মডেলের যানবাহন হলেও দ্রুতগামীতার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে-ও ভয়ংকর রকম সড়ক দূর্ঘটনা হয়ে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে পার্থক্য হলো ঔসব দূর্ঘটনাতে মদ্যপ চালক নিজেও পগার পার হন, সাধারণ মানুষের ওপর এর ধকল পড়েনা। কারন ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, চালকদের শিষ্টাচার,অধিক লেনের চওড়া রাস্তা ও সুশৃঙ্খল ট্রাফিকিং ব্যবস্থা এবং মদ্যপ্রবণদের জন্য নিয়মিত কাউন্সিলিং ও প্রয়োজনানুসারে Occupational Therapy -এর বিধান রয়েছে। আমরাও ইচ্ছে করলে রাষ্ট্রীয় ভাবে চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারি, ওদের আরো অধিক সৎ পেশাদার মনোভাবাপন্ন করে গড়ে তুলতে পারি, এ জন্য দরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যহীন সুশৃঙ্খল পরিবহন শ্রমিকসংঘ দরকার।
এ দেশের রাজনীতিজ্ঞরা পরিবহন সেক্টরকে কেবল কলুষিত-ই করেননি বরং রাজিব, আয়েশা, পায়েল, মিম-দের মতো অসংখ্য নিরীহ আত্মার বর্বর খুনী তৈরী করেছেন। যারা নিজেদের দোষ ঢাকতে আহত পায়েল-এর মুখ থেঁতলে নদীতে ফেলে দিতে এক চিলতে দ্বিধান্বিত হয়নি। কারন তারা জানে এ দেশে তাদের শাস্তিদাতার চেয়ে অনুপ্রেরকের সংখ্যা অনেক বেশী, শুধু দলাশ্রয়ী হলেই সব খুন মাফ। ছবিসূত্র: ডা. এম এস কবীর জুয়েল
ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল