ডা. সাকলায়েন রাসেল
ক্লান্ত শরীরে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম..চোখ খুলে দেখি মা.. মাথায় হাত বুলাচ্ছেন! তাঁর দিকে তাকাতেই বললেন…
ঘেমে গেছিস…ফ্যান ছেড়ে দিব?
কিছু বলার আগে আবারো বললেন,
চুল অনেক বড় হয়ে গেছে,কাটাবি না?
চুল তো চাইলেই ছোট করতে পারি…পারিনা নিজেকে ছোট করতে ! তাহলে হয়ত মায়ের সেই ছোট্ট সাকলায়েনটি হয়ে থাকতাম.. চিরদিন!
সেদিন মাকে বললাম, আজ রোজা রাখব…
-শোয়ার আগে মা বলল, সত্যি সত্যি রাখবি?
_‘হু’
-ভোরে উঠে ভাত গরম করে খেতে পারবি?
_আরে না, কি যে বল, ভাত গরম করতে হবে কেন!… পেটে গেলে দু’মিনিটেই সব ঠান্ডা হয়… ! নিজের অক্ষমতা আড়াল করতে এভাবেই যুক্তির আশ্রয় নিলাম।
-কিছুক্ষণ পর মা এসে বলল, শোন, হটপটে খাবার আছে…খেয়ে নিস…!
_আচ্ছা
-কিছুক্ষণ পর, মা আবার এসে ঠোটে হাসির রেখা টেনে বলল, শোন, হটপট সাবধানে খুলিস !
এমন সাবধান বাণীতে অবাক হলেও কোন প্রশ্ন করলাম না…
ঘড়িতে তখন রাত ৩ টা…
খেতে গিয়ে অবাক হলাম…পুরো হটপট ৩ টা সোয়েটারে ঢাকা…!
‘আহ হারে’ ! …
ছেলের খাবার গরম রাখতে কি প্রাণ পণ চেষ্টা মায়ের…! ভাতটুকু গলধকরণের আগেই তাই বোবা কান্নাটাও গিলে ফেললাম…
শেষ প্রান্তে এসে বুঝলাম… ভাত শেষ কিন্তু পেটে ক্ষুধা তখনো রয়ে গেছে!…তবুও একমুঠো ভাত রেখেই খাবার শেষ করলাম…। ব্যাখ্যাঃ যদি সকালে উঠে মা দেখে সব ভাত শেষ… তবে ভাবতে পারে… আমার হয়ত আরো ভাত লাগত… আমি ক্ষুধা নিয়েই রোজা রেখেছি…
ফলাফল, মা সারাদিন মন খারাপ করবে… আফসোস করবে… আহ হারে! কেন ভাত একটু বেশি দিলাম না..! পেট অপূর্ণ থাকার পরও আমি তাই একটু ভাত ছেড়েই উঠলাম… তাতে মা অন্তত স্বান্তনা পাবে, ভাতের পরিমান ঠিক ছিল।
বন্ধুরা, Love you mom…আমি তেমনটা পারিনা…আমার কাছে LOVE মানে ভাত গরম রাখতে সোয়েটার দিয়ে হটপট ঢেকে রাখা…
LOVE মানে পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও কিছু ভাত ছেড়ে উঠা!
সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম