মনির মোহাম্মদ
ছোট্টবন্ধুরা তোমরা কেমন আছ? অনেক দিন পরে আজ একটা গল্প বলব তোমাদের। আমার নামটা মনে আছে? আমি টুনি, চল আমরা গল্পটা শুনে আসি। আমাদের বাড়িটা একটা বনের পাশে। প্রতিদিন পাখিদের কিচির মিচির শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। আচ্ছা তোমার পাখিদের গান কেমন লাগে? আমার কিন্তু খুব ভালো লাগে। তাই বলে পাখিদের খাঁচায় বন্দী করে রেখোনা। একদিন এক পাখি আমায় তার দুঃখের অনেক কথা বলেছে। এই পাখিটাই আমাকে সাদা ঘোড়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
একদিন আমি মন খারাপ করে আমাদের বাড়ির বারান্দায় বসে বসে মাটিতে কাটা কুটি খেলছি। তখন দেখলাম…দাঁড়াও দাঁড়াও, আর একটা কথা তোমায় বলা হয়নি। আমাদের এখানে অনেক রকম ফুলের গাছ আছে। তোমার, প্রিয় ফুল কি? আমার প্রিয় ফুল জবা,লাল টকটকে জবা। লাল টকটকে জবা ফুল,কী ভালোই না লাগে দেখতে! চল গল্পটা শেষ করে আসি।
একদিন রাত্রে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির সাথে ছিল প্রছন্ড দমকা হাওয়া।
এত ঝড় ছিল যে অনেক গাছেরই ডাল পালা ভেঙে পড়েছিল সেদিন।
আমার বন্ধু বকুলদের একটা মাটির ঘর ছিল। জানো তাদের সেই ঘরের একটা দেয়াল ভেঙে পড়েছিলো সেদিন। আমার বন্ধু বকুলের অনেক মজার মজার গল্প আর ছড়ার বই ছিল। বেচারার সবগুলো বই ভিজে গিয়েছিল। তার কী যে মন খারাপ! আমি বকুলকে দেখতে বকুলদের বাড়িতে গেলাম।
বকুলের দাদু আমরা যাকে নিতাই দাদু ডাকি। আমি দেখলাম তারও অনেক মন খারাপ। নিতাই দাদু আমাকে অনেক আদর করেন। জানো গতবার মেলায় দাদু আমাকে আর বকুলকে অনেক খেলনা কিনে দিয়েছিলো। আমি চকলেট খুব পছন্দ করি। তুমি কি চকলেট খাও? জানো বেশি চকলেট খেলেনা দাঁতে পোকা হয়। আমার একবার দাঁতে পোকা হয়েছিল, দাঁতে কী যে ব্যাথা! নিতাই দাদু বলেছে চকলেট কম খেতে, তাই আমি চকলেট কম খাই। তুমিও চকলেট কম খাবে, না হলে কিন্তু দাঁতে পোকা হবে।
নিতাই দাদু মন খারাপ করে উঠুনে বসে আছে। বকুল আমাকে দেখতে পেয়ে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। আমার হাতটা ধরে বনের কাছে নিয়ে গেল। বনের গাছগুলোকে দেখে খুব খারাপ লাগলো। এত সুন্দর সবুজ গাছপালা ঝড়ে সব ভেঙে দিলো।আমার কী যে মন খারাপ হল সেদিন!
হঠাৎ দেখলাম একটা ভাঙা গাছের নিচে একটা পাখির বাসা পড়ে আছে। আমি পাখির বাসার কাছে গিয়ে বাসাটা দেখলাম। আমি দেখি তার ভিতরে একটা ছানা। ছানার অদূরে একটা গাছের ডালে একটা কাক বসে বসে কা কা কা করছে। ছানাটার এখনও চোখ ফুটেনি। আমরা নিতাই দাদুকে ডাকলাম। নিতাই দাদু বললেন এটা কাকের ছানা না। এটা কোকিলের ছানা।
আমি আর বকুল দাদুর কথা শুনে মুখ হা করে রইলাম। দাদু আমাদের একে একে সব বললেন। দাদু বললেন কোকিলরা একটু অলস পাখি, মা কোকিল কাকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কাকের বাসায় ডিম দিয়ে যায়। বোকা কাক এটাকে নিজের ডিম ভেবে ডিমে তা দেয় আর তা থেকে কোকিলের বাচ্ছা ফুটে বের হয়। পালকবিহীন বাচ্ছাকে নিজের বাচ্ছা ভেবে পরম আদরে বড় করে তুলে কাক। কাক কালো হলেও কিন্তু অনেক মায়াবী একটা পাখি।
আস্তে আস্তে যখন কোকিলের ছানা বড় হয় তখন সে তার দলের লোকের কাছে ফিরে যায়। আর বোকা কাক বসে বসে কাঁদে আর কা কা করে।
কথাটা শুনে আমার খুব মায়া হলো। আমি আর বকুল দুজন মিলে কাকের বাসাটা ঠিক করলাম। কিন্তু কোথায় রাখবো? নিতাই দাদু বাসাটাকে একটা বড় আম গাছের উপরে রেখে আসলেন। কাকটা আমার দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে ছিল। আহারে অন্যের বাচ্ছার জন্য এত মায়া দেখে ভাবতে ভাবতে আমি আর বকুলের দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।তখন আমরা বুঝলাম আসলে কাক কালো হলেও অনেক মায়াবী একটি পাখি!
মনির মোহাম্মদ
মায়াবী কাক
শিশু ও কিশোরদের জন্যঃ একটি শিক্ষণীয় গল্প!