banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 962 বার পঠিত

 

মাতৃত্বের উপলব্ধি-১


আফরোজা হাসান


মাতৃত্বের উপলব্ধি কি?

প্রশ্নটির জবাবে বলেছিলাম, মামণির যে কথা কাজ ও আচরনগুলো বিরক্তির সূচনা করতো সেগুলোকেই এখন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মনে হয়। খাবার নিয়ে মামণির পেছন পেছন ঘোরা, রাত জাগা নিয়ে আপত্তি করা, মাঝরাতে একবার উঠে এসে দেখে যাওয়া, কলেজ থেকে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে অস্থির হয়ে ফোন করা ইত্যাদির পেছনে যে মার সদা কল্যাণকামী সত্ত্বাই কাজ করে সেটা এখন বুঝি। কারণ আমিও নিজেও যে এখন মা…আমার সন্তানকে ঘিরে আমার মনেও যে খেলা করে নানারঙের অনুভূতি। ছোটবেলায় মাকে নিয়ে কত ছড়া-কবিতা-গল্প-গান পড়েছি, শুনেছি, লিখেছিও সামান্য কিছু। কিন্তু নিজে মা হবার পরই মনেহয় সত্যিকার ও প্রকৃত অর্থে মাতৃত্বকে উপলব্ধি করেছি। চোখ বন্ধ করে আরেকবার নিজের মা হবার সফরটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলো।

অপারেশন শেষ করে যখন ডাক্তার আমার কোলে দিয়েছিলেন আমার ছেলেকে…! সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে যে ক্লান্তি মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল তা উবে গিয়ে ঝিলমিলিয়ে উঠেছিল পূর্ণিমা রাতের স্নিগ্ধ সজিব চন্দ্রিমা। নাহ! কোন উপমা দিয়েই সেই মুহুর্তকে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। মাতৃত্বের প্রথম স্পর্শ ঘেরা সেই ক্ষণ এতটাই দুর্লভ যে শব্দে ধারণ করার ক্ষমতা আমার নেই! ওর কান্নার ধ্বনি মনের থরথরে ভীতু অনুভূতিকে রূপান্তরিত করেছিলো চরম প্রাপ্তির আনন্দাশ্রুতে। মাত্র একমিনিট পরই কোল থেকে নিয়ে গিয়েছিলো বেবীকে। কিন্তু সেই একমিনিটের ক্ষমতা কতটাই না বিস্ময়কর ছিল, দূর করে দিয়েছিল সমস্ত ভীতি, ব্যথা, দুর্বলতা।

আমার শারীরিক অপরাগতার কারণে যখন খাবারের অভাবে ক্ষুধায় কান্না করছিলো ছোট্ট বাবাটা হাত-পা ছুঁড়ে, অশ্রুর ঢল নেমে এসেছিলো আমার চোখেও। ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার কষ্টের প্রচণ্ডতা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছিলাম সেদিন। এই উপলব্ধিটা আমার জীবন ভান্ডারের অমূল্য এক রত্ন। যা এখনো আমাকে প্রেরণা যুগিয়ে যায় অনেক কাজের…

সেই যে শুরু হলো মাতৃত্বের সফর তারপর থেকে চলছি তো চলছিই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো এমনি করেই চলতে হবে। তবে এই পথ চলার প্রতি মুহুর্তে আমি শিখছি কিছু না কিছু। যে শিক্ষা আমাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করছে মাতৃত্বকে, মায়েদের অনুভূতিকে। সন্তানের জন্য মায়ের মনের আকুতির রঙ এখন তাই আমি চিনি।

পড়াশোনা ব্যাপারে মার বারবার তাগাদা দেয়া খুব বিরক্ত করে সন্তানদেরকে। কিন্তু সন্তানরা কি জানে তাদের সাফল্য কত বড় অর্জন মায়ের জন্য? যখন শিক্ষকরা মার কাছে এসে প্রশংসা করেন তাঁর সন্তানের, প্রশান্তির কেমনতর হাওয়া বয়ে যায় মার অন্তর জুড়ে? প্রতিটা মায়ের কাছে তার সন্তান সবচেয়ে স্পেশাল, তাই হয়তো তিনি চান সবাই তাঁর সন্তানকে সেভাবেই দেখুক, ভাবুক।

মা তো আমাদের জীবনে এমন একজন যিনি মনে উৎসাহের দিয়া জ্বেলে তাতে নিরবধি অনুপ্রেরণা দেবার কাজটি করে যান খুব যত্নের সাথে। নানারকম ব্যর্থতা- হতাশায় আমরা যখন থমকে দাঁড়িয়ে যাই, শক্তি হারিয়ে ফেলি উঠে দাঁড়ানোর, জীবনটাকে মনেহয় তপ্ত দাহ! তখন হাজির হয় এক টুকরো ছায়াদানকারী মেঘ হয়ে। যার সুশীতল কণ্ঠ বাতাস ও আলো সঞ্চার করে মনের শুকিয়ে যাওয়া পল্লবগুলোতে।

চলবে..

Facebook Comments