banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 864 বার পঠিত

 

মাক্সিম গোর্কির ‘মা’: শ্রমিকের অধিকার

নাজমুল হক


‘হ্যাঁরে, এমনি করে যদি মদ খাস, আমায় খাওয়াবী কী করে বল তো?
চোখ সেঁটে বন্ধ করে জবাব দেয় পাভেল:
‘সব্বাই তো মদ খায়….
মায়ের দীর্ঘশ্বাস পড়ে। ঠিকই তো বলছে। ও নিজে তো জানে, এক ওই শুড়িখানায়ই যা হোক ছিটেফোটা সুখের সোয়াদ পায় মানুষগুলো।

তবু বলে, ‘তাই বলে তুই মদ ধরিস নি, বাবা। তোর বাপ তো অনেক খেয়ে গিয়েছে। তার হাতে আমার দশাটা দেখেছিস তো…. তুইও আমার মুখের দিকে চাইবি না?’

গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে মায়ের।
ছেলে আস্তে আস্তে বলল, ‘কেঁদো না মা। একটু জল দাও।’
‘দাঁড়া, বরফ দিয়ে জল নিয়ে আসি…..’

বই নিয়ে আসতে লাগলো পাভেল্ বাড়িতে। লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে। পড়া শেষ হলে লুকিয়ে রেখে দেয়। মাঝে মাঝে কি সব যেন টোকে বই থেকে। তাও লুকিয়ে রাখে।…….

‘এই শুধোচ্ছিলাম, মুখ গুঁজে এ সব কী পড়িস তুই!’ আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করে।
বই বন্ধ করে পাভেল্ বলে, ‘বস মা।….’
‘এই যেসব বই পড়ছি দেখছ, এসব পড়া নিষেধ। আমরা যারা খেটেখুটে খাই তাদের সম্বন্ধে সব সত্যি কথা লেখা আছে কিনা, তাই পড়া নিষেধ এসব বই।… এগুলো গোপনে ছাপা হয়। এসবের খবর পেলেই আমাকে টেনে নিয়ে জেলে পুরবে।
হাঠাৎ যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে মায়ের। জিজ্ঞাসা করে, ‘আচ্ছা খোকা, তা হলে এসব পড়িস কেন?’
‘ভাব তো মা’, পাভেল্ বলে চলল, ‘কী জীবন আমাদের এখানে? তোমর বয়স চল্লিশ, তুমি কি সত্যি করে বেঁচেছ? বাবার মার খেয়েছ-এখন আমি বুঝি কেন তোমায় বাবা মারত। নিজে নরক ভোগ করেছে, তার শোধ তুলেছে তোমার উপর। কষ্ট পেয়েছে, অসহ্য মনে হয়েছে; কিন্তু কখনও বোঝেছে কেন এমন হয়। বাবা এই কারখানায় কাজ করেছে ত্রিশ বছর। শুরু করেছিল সেই যখন মোটে দুটো বাড়ি নিয়ে। সেই জায়গায় এখন সাতটা।’
‘কোন দিন একটুকু আনন্দ পেয়েছ, মা? মনে করে রাখার মত কী ছিল তোমার জীবনে?’
মা- ‘কী করতে চাস এখন?’
পাভেল্ বলে- ‘প্রথমে নিজের পড়াশোনা। তারপর অন্যদের। আমাদের শ্রমিকদের পড়তে হবে, জানতে হবে আমাদের জীবনে এতো কষ্ট কেন?’
মা ভাবে ছেলের মাঝে কত পরিবর্তন! কি বুদ্ধিদীপ্ত।

মায়ের চোখের সামনে সব অন্ধকার…. বোঁ-বোঁ করে ঘুরছে সব। সকল অবসাদ ঝেড়ে ফেলে যেটুকু শক্তি বাকি ছিল, তাই দিয়ে চিৎকার করে জড় হওয়া হাজার হাজার মানুষের উদ্যেশে বলে:
‘এক হও, এক হও, সব মানুষ এক হয়ে এক বিরাট শক্তি গড়ে তোল!’
একজন পুলিশ থাবা দিয়ে কলার ধরে মাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে- ‘চোপরাও!’
মা বলে- ‘কিছুতেই ভয় পেও না।
আর বেশি কী ভয়ঙ্কর আছে বলতো?
যে জীবন তোমরা কাটাচ্ছ তার চাইতে?’
‘মুখ বন্ধ করলি’ এই বলে হ্যাঁচকা টানে মাকে নিয়ে চলে পুলিশ।

এটি ছিল মাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের কিছু অংশ।

কত টুকু অধিকার শ্রমিক পেয়েছে জানিনা। তবে মে দিবস ও শ্রমিককে পুজি করে আনেক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার উদাহারন আমাদের আশেপাশে অনেক।

আমি তখন ছোট। ১৯৯৩ সালে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশ শেষে আমাদের কাপড়ের দোকানের কারিগর মালেক ভাই দুপুর ৩টায় দোকানে এলে বললাম কি খবর ভাই- মুখ শুকনা কেন? মন খারাপ কেন?

আর বলো না একটা বাজে গালি দিয়ে বলল- ‘কেউ খাবে, কউ খাবে না’ এই শ্লোগান দিয়ে নেতারা ৪/৫টা করে খাবার প্যাকেট নিলো আর আমরা সারা দিন না খেয়ে রোদে মিছিল করে এক প্যাকেটও পেলাম না। আর জীবনে এই সব সমাবেশে যাব না।

মালেক ভাই না গেলেও অনেকেই এখন যায়। শ্লোগান দেয় দুনিয়ার মজদুর এক হও। এলাকার অনেকেই শ্রমিক মালেকদের সমনেই আজ অনেক সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক এই মে দিবস ও মালেকদের পুঁজি করে। কত মে দিবস আসে যায় ভাগ্য বদলায় না শুধু মালেকদের।

Facebook Comments