আফরোজা হাসান
মাইক্রোটিচ একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ছোট ছোট কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বল্পসময়ে পাঠদান করা হয়। বাংলায় একে বলে অনুশিক্ষন পদ্ধতি। মাইক্রোটিচিং পদ্ধতির তিনটি অংশ- মাইক্রো লেসন, মাইক্রো ক্লাস এবং মাইক্রো টাইম। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের সব কৌশল একত্রে আয়ত্ত না করে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আয়ত্ত করানো হয়। মাইক্রোটিচিং মূলত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগারে বিকশিত হয়। এটি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল হিসেবে বিবেচিত। এর লক্ষ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা, ব্যক্তিগত সবল দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা, শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার উন্নয়ন সাধন, বিভিন্ন কার্যকর শিখন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং কার্যকর ফলাফল প্রয়োগ ও গ্রহণ ক্ষমতার উন্নয়ন।
১৯৫০ সালের শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডুইট ডব্লিউ অ্যালেন, রবার্ট বুশ এবং কিম রোমনি প্রথম মাইক্রোটিচিংয়ের ধারণা উপস্থাপন করেন। ১৯৬০ সালের দিকে ডুইট ডব্লিউ অ্যালেন ও তাঁর সহকর্মীদের মাধ্যমে এই পদ্ধতি আরো বিকশিত হয়। তাদের উপস্থাপিত টিচিং পদ্ধতি হল টিচ, রিভিউ, রিফ্ল্যাক্ট এন্ড রিটিচিং। ১৯৭০ সালের কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এডুকেশন মিনিস্ট্রি তাদের প্রশিক্ষণ সহায়ক কার্যক্রম হিসেবে এই পদ্ধতি গ্রহন করে। ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে এই পদ্ধতি আরো বাস্তবধর্মী ও কার্যকরী ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনে বিকাশ লাভ করে। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এই পদ্ধতি আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হয়ে নতুন মাত্রা লাভ করে। বর্তমানে এই পদ্ধতি কানাডা আমেরিকা সহ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি।
এটি মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির একটা শিক্ষা পদ্ধতি। আর প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনের জন্য এই পদ্ধতিতে তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে-জ্ঞান আহরণ বা অর্জনের ধাপ, দ্বিতীয় হচ্ছে দক্ষতা অর্জনের ধাপ আর তৃতীয় হচ্ছে স্থানন্তর ধাপ। সাবজেক্টের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে কি শিখছে, পুর্ববর্তী শিক্ষার সাথে এর সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতে এর প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার উদ্দেশ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোটিচ পদ্ধতিতে শিক্ষকদের মধ্যে নয়টি বিষয় প্রত্যক্ষ করা যায়-
১। পাঠ পরিকল্পনা। অর্থাৎ, যে বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ানো হয় তার সুনির্দিস্ট উদ্দেশ্য ও সঠিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে টিচারদের মধ্যে।
২। আরোহী পদ্ধতি অনুসরণ। অর্থাৎ, ক্লাসে শুরুতেই শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষন করা।
৩। উপস্থাপন। মানে হচ্ছে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয় তার ব্যাখ্যা, বর্ননা, সঠিক বিশ্লেষণ ও উদাহরণ প্রদান করা।
৪। উদ্দিপনা পরিবর্তন। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের অবসাদ বা একঘেয়েমি কাটিয়ে তোলার জন্য অঙ্গভঙ্গি, নড়াচড়া, সেন্স অব হিউমারের প্রয়োগের মাধ্যমে নীরবতা ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা।
৫। কণ্ঠস্বরের সঠিক ব্যবহার। সঠিক এবং স্পষ্টভাবে প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টোনের ওঠা-নামা।
৬। শক্তি সঞ্চার। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা সনাক্ত করে তাদের উৎসাহিত করা এবং সাড়া দেয়া।
৭। প্রশ্নোত্তর। মানে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন করা, প্রশ্নের মোকাবেলা করা এবং প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা।
৮। নীরবতা ও ইঙ্গিত। মানে হচ্ছে কথা না বলেও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে বক্তব্য প্রকাশ করা।
৯। মূল্যায়ন। কি পরিমাণ উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে তা দেখা।
( ম্যাগাজিনে বিশাল বড় করে লেখা ছিল মাইক্রোটিচ পদ্ধতি সম্পর্কে। এখানে আমি শুধু মূল অংশটুকু সংক্ষেপে লিখেছি। দাদুর পাঠশালাতে এতো তথ্য ঢোকানোটা জটিল লাগছিলো তাই আলাদা লিখে দিলাম)