অবসাদগ্রস্ততার কারণ
আমরা নানা কারণে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে ফ্যাটিগ সিনড্রোম। কারণ জানা থাকলে নিজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন অবসাদগ্রস্ততা। বিস্তারিত জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ফারুক হোসাইন
কম ঘুম : ঘুম মানে কর্মহীনতা নয়, নতুন করে কর্মে ফিরে যাওয়ার শক্তি জোগায় ঘুম। তাই যাঁরা কম ঘুমান, কাজকর্মে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত-আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
সমাধান : প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান। ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে থেকে চা-কফি খাওয়া বন্ধ রাখুন। ঘুমানোর আগে টিভি দেখা, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করা বন্ধ করুন।
অপরিমিত খাদ্য গ্রহণ : সকালের নাশতা না খেয়ে থাকলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। আবার খাবার গ্রহণ পরিমিত বা সঠিক না হলে দেহে অবসাদ ভর করতে পারে। যেমন চর্বিযুক্ত বিরিয়ানি খেলে অবসাদ লাগে। কারণ এই খাবার ভেঙে গ্লুকোজ উৎপাদন করতে শরীরের বেশি সময় লাগে।
সমাধান :তেল-চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে সুষম খাবার গ্রহণ করুন। যখন খুশি তখন খাবার গ্রহণ না করে নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
অতিরিক্ত ওজন : স্থূল মানুষের শরীরের বাড়তি ওজনের কারণে তাদের হাঁটাচলা থেকে শুরু করে যেকোনো কাজেই বেশি শক্তি খরচ হয়। তা ছাড়া বাড়তি ওজন হলে অসুখবিসুখও বেশি হয়।
সমাধান : ওজন কমাতে ডায়েটিং করুন, ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
কর্মহীনতা : কর্মহীন দেহে অবসাদ দ্রুত ভিড় করে। কর্মহীন ব্যক্তি নানা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। ফলে তিনি কাজকর্মে উদ্যম হারিয়ে ফেলেন। নিজের অজান্তেই তাঁর মধ্যে এ পরিবর্তন ঘটে। আবার অনেক রোগে আক্রান্ত হন।
সমাধান : পছন্দ হোক আর না হোক, যেকোনো একটি কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
পানিশূন্যতা : পানিশূন্যতা অবসাদগ্রস্ততার অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত ঘাম, পাতলা পায়খানা, বমি, দীর্ঘ সময় পানি না খেয়ে থাকা পানিশূন্যতার কারণ।
সমাধান : পানিশূন্যতা পূরণে ঘন ঘন পানি পান করুন। দেহকে সুস্থ, কর্মময় রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি গ্রহণ করা উচিত।
অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ : ঠাণ্ডার কারণে বা অ্যালার্জির কারণে অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধ খেলে কর্মক্ষমতা কমে যায়। অন্যদিকে যাঁরা টেনশন কমানোর ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছেন, তাঁরাও ঘুম ঘুম ভাবের কারণে অবসাদে ভুগতে পারেন।
সমাধান : ঘুম ঘুম ভাব করে না এমন অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, তা সেবন করা।
খাবারে অ্যালার্জি : অনেক খাবারে অ্যালার্জি হয়। এসব খাবার খেলে শরীর চুলকাবে, ত্বকে লালচে র্যাশ উঠবে এমন কথা নেই। কাজকর্মে শক্তি বা মনোযোগ হারিয়ে ফেলা এসব অ্যালার্জির কারণে হতে পারে।
সমাধান : খেয়াল করুন কোন খাবার খেলে আপনার দুর্বল লাগে। যদি তা নির্ণয় করতে পারেন, তবে তা এড়িয়ে চলুন।
আরো যা করবেন
যদি ছয় মাসের অধিক সময় ধরে অবসাদগ্রস্ততায় ভোগে, তবে ধরে নেওয়া যায় তিনি ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে ভুগছেন। এসব রোগী প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে রোগীকে কাজের ধরন পাল্টাতে হয়। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হয়। ঘুম যাতে ফ্রেশ হয়, সে ব্যবস্থা করতে হয়। কর্মে উদ্দীপনা ফিরে পেতে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
এ ছাড়া গৃহিণীরা দৈনন্দিন কাজের একটি রুটিন করে নিন। কখনোই ভাববেন না আপনার ঘরের কাজের কোনো মূল্য নেই। নিজের কাজের মধ্যে নিজেই আনন্দ খুঁজে নিন। অবসাদ ঝেড়ে ফেলে নতুন প্রাণে জেগে উঠতে ব্যায়াম করুন, বেড়াতে যান, ঘর গোছান, গান শুনুন, বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন ও রান্না করুন। মনে রাখবেন কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে হয়।
সূত্র- কালের কন্ঠ।