জীবন সুন্দর… আকাশ বাতাস পাহাড় সমুদ্র সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেচে থাকা।
তবুও কেন যেন জীবনকে জীবন দিতে ইচ্ছে করে না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মানুষের আত্মকথা——
আমি প্রায়ই মৃত আইডিগুলোতে ঘুরে বেড়াই। বিশেষ করে যারা সুইসাইড করে তাদের।
প্রতিটি আইডি প্রায় একই রকম।
মাত্র ছয়মাসের স্টাটাস পড়লেই বোঝা যায়
কি প্রচন্ড “ডিপ্রেশন” তাকে গ্রাস করে রেখেছিল।
কি চেয়েছিল তারা-
♣প্রত্যেকই হয়ত একটু সহানুভূতির আশায়,
♣কাউন্সিলিং এর আশায়,
♣খড়কুটো আকড়ে ধরে হলেও বেঁচে
থাকার নেশায়,
♣বারবার লিখে গেছে,
কি লিখত তারা:
♣তার মন ভালো নেই।
♣কেউ কেউ সরাসরিই দিনের পর দিন
সংকেত দিয়ে গেছে,
♣এই পৃথিবীতে সে আর বেশিদিন নেই।
♣♣♣আমি অবাক হয়ে দেখেছি,
মৃত আইডি বিবাহিত হলে,
তার বেশিরভাগ বন্ধুই,
দাম্পত্যকলহ ভেবে এড়িয়ে গেছে।
অথচ সেই একই আইডির পোস্ট করা
ছবিতে লাইক,কমেন্ট উপচে পরেছে।
♣♣♣আর মৃত আইডি আনম্যারিড হলে,
সেখানেও একই।
যা কয়েকটা কমেন্ট আছে,সেগুলি এরকম-
♣দোস্ত কবে মরবি?
♣বুদ্ধি না পাইলে ফুনাইস।
♣চল্লিশার দাওয়াত দিয়ে যান।
♣স্মাইলি ইমো
♣মিলাদের আইটেমে কিন্ত লাড্ডু চাই।
………..আরো ব্লা ব্লা ব্লা।
আর যখন সব শেষ,রিপ্লাইয়ের আশা নেই।
তখন তাদেরই কষ্টে ভরা কমেন্ট,
♣কিভাবে পারলি?
♣ক্যামনে ভুলব তোকে?
♣তুই এত বোকা?
♣একবার খুলে বলতি,
♣আমরা কি ছিলাম না?
আসলে কি ছিল কেউ? আমি বলছি না,এই হাহাকার মিথ্যে। আমরা হয়ত না বুঝেই ফানি কমেন্ট করি
বা ইগনোর করি।
কিন্তু আমার বন্ধুর মৃত্যুর জন্য,
আমি কি একটু হলেও দায়ী না?
প্রতিটি মানুষেরই দুঃখ কষ্ট থাকে। তবে একেকজনের দুঃখ কষ্ট গ্রহন করার ক্ষমতা একেকরকম।
♣কেউ হয়ত হাসিমুখে স্বামীর মারের দাগকে
বাথরুমে পরে যাওয়ার দাগে পাল্টে নেয়।
♣আবার কেউ হয়ত স্বামির চোখে,সামান্য
অবহেলার আভাস পেলেও ভেঙে পড়ে।
…….কারো কষ্টই কিন্ত কম না।
কষ্ট পাওয়ার ধরন আলাদা হতে পারে
কিন্ত বুকের পোড়াটা মনে হয় সবারই এক।
আজ পাবলিকলি বলছি,
গত কয়েকটা বছর ধরে আমি প্রচন্ড
ডিপ্রেশনে ভুগছি। একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমাকে গত চারটা মাস ধরে ডিপ্রেশনের ঔষধ খেতে হচ্ছে।
♣কতদিন যে রাতদিন মিলিয়ে আমি
চারঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারিনা!!!
♣আমার ক্লান্তি,
♣আমার অবসন্নতা,
♣আমার ভালো লাগেনা রোগ
♣আমাকে ধীরে ধীরে নিঃশ্বেষ করে দিচ্ছে।
♥♥ভাবছেন দাম্পত্য কলহে আছি?
কসমকেটে বলছি, না না না…
♣টুকটাক মান অভিমান সবার যেমন থাকে,
আমাদেরও আছে।
তাহলে কেন এই ডিপ্রেশন ??????
আমি জানিনা,সত্যিই জানিনা। হয়ত এর কারনঃ
★আব্বুর হঠাৎই চলে যাওয়া।
★খুব প্রিয় কিছু মানুষের অকাল মৃত্যু।
★অতীতের জালে আটকে থাকা।
★নিজের জন্য সময় বের করতে না পারা।
★প্রতিদিনকার একঘেয়ে রুটিন।
★অতিরিক্ত আবেগ।
★নিজের মা কে পরাধীনতার শেকলে বাধা
দেখতে দেখতে বড় হওয়া।
★বাবার বাড়ি বলতে কিছু না থাকা।
★ভাইবোন নেই, মনটা উজাড় করে কথা
বলার কেউ নেই।
★সারাটা বছর সুখে দুখে খুশিতে
মা কে জড়িয়ে থাকি।আর আমার কাছে ঈদ মানে এখন,এক আতংকের নাম।কারন তখন মাকে এখানে সেখানে রেখে আমি ঈদ করতে যাই।
★আমার কিছু চেয়ে নিতে,বলে বলে করে নিতে
♣একেবারেই ভালো লাগে না।
চাইলে,বললে তো রাস্তার মানুষও
এগিয়ে আসে।
♣যে আমার আপন,কাছের,
সে আমাকে বুঝে নিতে না পারলে,
আমি বুঝাই না।
শুধু অভিমান জমা করি।
★মনটা এখনও প্রচন্ড শিশু,ছটফট করে,
আল্লাদে গদগদ করে।
শরীরটা? এত্ত বড় বড় দায়িত্ব কর্তব্য করে।
★আমার বর,
প্রচন্ড বাস্তববাদী, ওয়েল প্লানার,
হঠাৎই ইচ্ছে হলো তাই!!!
আমার জীবনে নাই!!নাই!!!নাই!!!!
★ডিপ্রেশন যে একটা রোগ
তা আমার পরিবার একেবারেই বুঝেনা।
♣আমার মা মনে করে,
ঝাপিয়ে পরে সংসার সামলালেই আমি
হাবিজাবি চিন্তা করতে পারব না।
♣আমার বর মনে করে,
ফেসবুকই আমার মাথা নষ্ট করছে।
আগে তো এরকম ছিল না।
★আমার বরের কাছে,জীবন মানে,
দৌড়াও,ছুটে চল,দুই হাতে কামাও,চার হাতে জমাও।
এদিক সেদিক ভবিষ্যতে তাকানো যাবে।
♣আমার কাছে,জীবন মানে,
শুধু ছুটে চলা না।
শুধু দম নেয়া না।
আজই যদি না থাকল,কাল দিয়ে কি করব? জীবন মানে বেঁচে থাকা।
♥♥এটুকু পড়েই হাপিয়ে গেছেন?
ভাবছেন এগুলো ডিপ্রেশনের কারন!!
মানুষ কত বড় বড় দুঃখ বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়!!
ঐ যে আগেই বলেছি, একেকজনের কষ্টের ধরন একেকরকম।
♥♥কেউ কেউ একটি ঘাসফুল না দেখার কষ্টে, মরে যেতে চায়।
আমরা একজন আরেকজনের মনস্তত্ত্ব,
কতটুকুই বা বুঝি?????
আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি,আমাদের দেশে বোধসম্পন্ন মেয়েরা,একদম দেয়ালে পিঠ না ঠেকে গেলে
মুখ খোলে না।
♣বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টায়,
♣দিশেহারার চূড়ান্ত পর্যায়ে,
♣লোকলজ্জার মাথা খেয়ে সংকেত পাঠায়।
কাল থেকে আমার মন এত্ত খারাপ,এত্ত খারাপ
যে, মনে হচ্ছে দূরে কোথাও চলে যাই।
♥♥তারপর একবুক আশা নিয়ে
অপেক্ষায় থাকে ঘুরে দাড়ানোর।
অজানা আকুতি,বুঝতে চায়,কেউ আছে।
শুনতে চায়,দূর বোকা,আমরা আছি না?
(আমাদের আসেপাশে অনেক ভাই বোন ডিপ্রেশনে ভুগছেন। সুতরাং তাদের সাথে কথা বলা এবং তাদের পাশে দাড়ানো এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।)
আসুন তাদের পাশে দাড়াই।
লিখেছেন: ডাঃ মোঃ জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক(সাইকিয়াট্রি)
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।
email: zubayer_miah@yahoo.com