banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 596 বার পঠিত

 

বুড়ি আজ খুশী


দ্য স্লেভ


মবিন শেখ বড় বড় প্যাকেটে বড় বড় রুই,ইলিশ,ইলিশের ডিম,চিংড়ী মাছ,বিলের বড় বড় কৈ মাছ কিনে বাড়ির কাজের ছেলেটার কাধে চাপিয়েছে। নদীর রুইমাছটা আজ বেশ তাজা কিনতে পেরেছে। ভোরে আসলে আসলে সবকিছু ভালোমত পাওয়া যায়,তবে কৈ এর ব্যপারটা আলাদা। বিলের এত বড় বড় কৈ সহসা পাওয়া যায়না। প্রতি পিত কৈ ৫০০ টাকা পড়ল, তা পড়ুক,, সহসা এতবড় কৈ পাওয়া দুষ্কর। আজ দুপুরে বড় জামাই বন্ধুদের নিয়ে খেতে আসবে,,, বড় কৈ তার পছন্দ। ইলিশ মাছও পেয়েছে বড় বড় সাইজের। টাকা একটু বেশী গেছে কিন্তু সম্মানটা তার থাকবে। ৫ কেজী খাসীর গোস্ত কিনেছে। জামাইয়ের সামনে শুধু গরু রাখলে ইজ্জত থাকেনা।
নানান সব তরিতরকারী,মুরগী কিনে আরেক কাজের লোকের ঘাড়ে চাপানো। মবিন শেখ বাজার থেকে বেরোনোর পথে বুড়িকে দেখলো জীর্ণ-শীর্ণ দেহে মলিন পোষাকে,মলিন তরকারী নিয়ে বসে আছে। দেখেই শেখের মনে পড়ল,,আরে কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ তো কেনা হয়নি !
মবিন শেইখ: ওই বুড়ি কি ব্যাচো ?
বুড়ি: এই যে বাবা,,,এইসব বেচী।
:হুমম এ তো ময়লা মাটি,,,বাজার থেকে কুড়াইছো নাকি ??
: না বাজান ,, জিনিস ভালো আছে..
: ভালো না মন্দ সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তা পেঁয়াজের ভাগা কত ?
: নেন বাজান,, দশ টাকা করে দেন ভাগা….
: হ্যা !!! কও কি ?? ১০ টাকা ! আহারে বাজার থেকে কিনলেই ভালো করতাম,,,কত সুন্দর চকচকে পেঁয়াজ,,দামেও কম ছিলো,,,নাকি আবার বাজারে যাব !!
: বাজান নেন, কম রাখবানে,,,,আপনি ৮ টাকা করে দেন।
:আরে বুড়ি এই টুকানো পেয়াজ ২টাকাও হয়না,,৫ টাকা করে দেব,,,৩ ভাগা দাও….।
: না বাজান ঠকা হয়,,, আপনি ৭ টাকা করে দেন,,,,আপনারা দাম না দিলে খাব কি কন ? সকাল থেকে বসে আছি,,,কেউ কিনতে চায়না….
:কিনবে ক্যামনে ?? ময়লা মাটি মানুষ কিনে? আর ৫ টাকার জিনিস ১০ টাকা চাইলে জীবনেও বিক্রী করতে পারবা না,,,জুলুম করলে এমনই হয় ! ৫ টাকায় দাও,,,আমি বলে ৫টাকা বলছি,,অন্যরা আরও কম বলত।
: বাজান তাইলে ৪ ভাগা পেয়াজই নেন,,২০ টাকাই দেন।
:এই তো লাইনে আসছো ! তোমাদের আবার আমি চিনিনা,,,,মানুষ চিনতে চিনতে চুল পাকায় ফেলছি….। আচ্ছা মরিচ কত রাখবা ? অর্ধেক তো পচা….
: বাজান নিয়ে যান, ভালো জিনিস,,,। ৫ টাকা করেই রাখব।…
:বুড়ির বুদ্ধি আছে দেখছি,,,৫টাকায় পেয়াজ কিনেছি দেখে একই দাম বলল…..দ্যাখো আমার সময় নেই,,,আর মরিচ কেনার দরকারও নেই,,,কিন্তু তোমার উপকার হবে বলেই কিনছি। ভালো করে দাম কও…
: বাজান ৪ টাকা করে দেন,কিন্তু নিয়ে যান। আচ্ছা নিলাম,,,,অন্য মানুষ হলে নিত না।….টমেটোগুলো কততে দিবা ?
: বাজান আপনি ইজ্জতদার মানুষ ইনসাফ করে দিয়েন। আমার বাড়ির উঠোনে লাগানো টমেটো,,,,আমি দাম জানিনা…। বাজারে যেই দামে কিনেন তার চেয়ে কিছু কমে দেন। বাড়ির জিনিস তো কমে বেচা যাবে……ওষুধ দেওয়া নেই…।
:হুমম টমেটো তো কেনা দরকার না,,,তাও দেখী..আচ্ছা অারও ৫ টাকা দিচ্ছি,,দিয়ে দাও…।
:বাজান মাত্র ৫টাকা ?
: হ্যা,,তোমার বাড়ির জিনিস,,ওইটা কি আর বিকেল পর্যন্ত থাকবে,,,পচে যাবে,,দাও দাও দিয়ে দাও….
মবিন শেইখ বাজার করে আজ ব্যপক খুশী,,,,বড়ই জিতেছে আজ। অবশ্য বুড়ির কথা তার মাথায় নেই,,,,জামাই আর তার বন্ধুরা মাছ,গোস্ত দিয়ে কি মজায় ভাত খাবে সেই দৃশ্য কল্পনা করতে করতে সে বাড়ির পথ ধরল।
বুড়িও আজ খুশী। একজন কাস্টমারের কাছে সে অনেক কিছু বিক্রী করতে পেরেছে। তবে আরও কিছু তরকারী বিক্রী করতে বাকী আছে। সেগুলো বেচা হলেই সে পুরো দেড় কেজী চাল কিনতে পারবে লাভের টাকায়। পেছনের সারের ব্যাগে বাজার থেকে কুড়ানো কিছু পোকা লাগা বেগুন রাখা আছে। কুড়ানো তরকারীতে তাদের পেট চলে। মাঝে মাঝে দু একটা ভালো বেগুনও পায় সে। বাজারে তরকারী কুড়াতে গেলে কিছু লোক ভালো আচরন করে। ওদের কেউ কেউ অল্প পোকা লাগা তরকারীও দিয়ে দেয়। ওসব ঘুমে মুটে খেয়ে ওরা বেঁচে থাকে !
আহা,,,পেটের ভেতরটা চিনচিন করে ওঠে বুড়ির,,, সেই কাকডাকা ভোরে দুটো পান্তা খেয়ে নিস্তেজ দূর্বল শরীর নিয়ে বেরিয়েছে। এরপর আর একটা দানাও পেটে পড়েনি। খালি পেটে পানি খেলে পেটে খিল লেগে ধরে। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি পৌছাতে হবে, নইলে বুড়োর পেটেও ভাত যাবে না। ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে সন্ধ্যার পর পথ চলতে কষ্ট হয়। তবে বুড়ি আজ আশাবাদী,,, তরকারী বিক্রীর টাকায় সে আরেকটু বেশী চাল কিনে বাড়ি যাবে। বুড়োটা আলুভর্তা আর জাও-ভাত পছন্দ করে। আজ রাতে ওরা ভরপেট খাবে , ভাবতেই আনন্দাশ্রুতে বুড়ির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে !

Facebook Comments