বুটিক হাউজে সবার নয়নমনি আঁখি
মাহবুব আলম
পিছিয়ে থাকার দিন শেষ। নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলেছেন তারা। ঘরকন্যার পাশাপাশি সাধারণ চাকরি থেকে শুরু করে প্লেনও চালাচ্ছেন তারা। এর মাঝে কেউ কেউ শূন্য থেকে শুরু করে সফল উদ্যোক্তাও হয়ে অন্যের অনুকরণীয়ও হয়েছেন। তাদেরই একজন ফারজানা আঁখি।
‘আখি’স’এর স্বত্বাধিকারী ফারজানা আঁখি শুনিয়েছেন তার আজকের সফলতার পেছনে থাকা শ্রম ও আনন্দ সুখের কাহিনী।
সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আঁখি জানান, শখ নিয়ে সময় কাটানো থেকেই তার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুরু। সেটি ১৯৯৯ সালের কথা। মাত্র আড়াই হাজার টাকা নিয়ে আঁখি ঘরে বসেই নিজ হাতে হরেক ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ সেলাই করতে লাগলেন। বাজার থেকে শাড়ি কিনে তাতে হাতের কাজ করতেন।
মূলত তার গ্রাহক ছিলেন স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দোকানি ও পরিচিতজনেরা। তাদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসাও পেতেন তিনি। ফারজানা আঁখির ভাষায়, কাপড় বিক্রির পর ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা টনিকের মতো কাজ করে। মনোবল আরো বাড়িয়ে দেয়। অর্ডারও বাড়তে শুরু করে।
তবে, পুঁজি না থাকায় আটকে যান ওই সময়ের কিশোরী আঁখি। কিন্তু থেমে থাকেননি। বন্ধুদের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেড়ে ওঠা এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, আমার আগ্রহ দেখে বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এরপর অল্প অল্প করে পরিচিতিও বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে আমার তৈরি বাটিক ও নকশার কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, থ্রিপিস, শাড়ি, বিছানার চাদর, কুশন কভার, শাল চাদরের ব্যাপক চাহিদা বাড়তে লাগলো। ফলে, পরিস্থিতিই বলে দেয় একটি শোরুম নেবার। কিন্তু তখনও সমস্যা সেই পুঁজি। এই সময় তিনি দ্বারস্থ হন ব্যাংকের। সেখানে থেকে প্রথমে মাত্র আড়াই লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি।
উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে যো ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যান আঁখি। বলতে থাকেন, ‘ব্যাংক ঋণের ওই টাকা দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি শোরুম চালু করি। নাম দিই আখি’স।’ এরপর আর পেছন তাকাতে হয়নি ফারজানা আঁখির। যেন আলাদীনের চেরাগের যাদুর মতো দ্রুতই বদলে গেলো তার জীবন।
গল্পের ছলে তিনি বলেন, একটা সময় আসে যে আমার ডিজাইন করা কাপড়ের চাহিদা খুবই বেড়ে যায়। তখন ডেলিভারি দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হতো। শোরুম চালুর পর এ অবস্থা আরও বেড়ে গেলো। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আঁখি’স এর সুনাম।
আঁখি বলেন, আমি যখন এই ব্যবসা শুরু করি তখন নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা হাতেগোনা। এখানকার মতো ফেসবুকে কিংবা অনলাইনে নারী উদ্যোক্তা ছিল না। ‘শুরুতে নিজেই শোরুমে বসতাম। অবশ্য মানুষের কটু বাক্যও কম শুনতে হয়নি। তবে পাত্তা দিইনি। একমনে কাজটা করে গেছি। তবে, এখন টাকা-পয়সা হয়েছে, দোকানেরও সুনাম হয়েছে। এখন সবাই প্রশংসা করে।’ নিজের উৎসাহের কথা উল্লেখ করে আঁখি বলেন, আশপাশের মানুষ নানা কথা বলতো। কিন্তু সব সময়ই পরিবারে মা-বাবার সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়েছি। ‘তখন নিজেই কাঁচামাল কিনতাম। নিজেই ব্যাংকে যেতাম, পাইকারি অর্ডার নিতাম। সব নিজেকেই করতে হতো। এখন অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এটা ভাবতেই ভালো লাগে,’ যোগ করেন তিনি।
শুধু ব্যবসা নিয়েই থাকতে পারেননি ফারজানা আঁখি। ব্যবসা দেখভালের পাশাপাশি সংসারও সামলেছেন তিনি। ফলে, অবসর বলে কিছু ছিল না। ‘অনেকেই অনেক কথা বলেছে। বলতো মেয়ে মানুষ দোকানে বসে। কিন্তু আমি কখনও দমে যাইনি। চেষ্টা আর একাগ্রতা থাকলে যে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারেন সেটা আমি বুঝেছি,’ সাফল্যর তৃপ্তির হাসি হেসে বলছিলেন এই উদ্যোক্তা।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ, পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করতে। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করবো না, চাকরি দেবো।
এক্ষেত্রে ব্যবসা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা যেসব সমস্যায় পড়েন সেগুলো মসৃণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান এই নারী। তিনি বলেন, এখনও ব্যাংক লোন পাওয়া অতটা সহজ হয়ে ওঠেনি। এসব বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সুত্রঃ বাসস