তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রটির সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহারও বাড়ছে প্রতিদিন। ছেলে-বুড়ো সবাই আগ্রহ নিয়ে কাজ করে এমন একটি ক্ষেত্র তথ্যপ্রযুক্তি। এর ব্যাপ্তিও বিশাল। তাই আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি মেয়েরাও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে নানা কাজে। আর এর সুযোগ নিয়ে দুষ্টচক্র বিভিন্নভাবে মেয়েদের হেনস্তা করছে।
ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটার কিংবা ভাইবার যেটাই হোক না কেন—সবকিছুরই কিছু ভালো ও মন্দ দিক আছে। অনেককে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ই-মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কতটা নিরাপদ? বিশেষ করে মেেয়দের জন্য।
নতুন কোনো কিছু, যা নানাভাবে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে, সেই জায়গা থেকে মেয়েদের দূরে সরিয়ে রাখার কোনো যুক্তি আমি অন্তত খুঁজে পাই না। কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও ঠিক, মেয়েদেরও তৈরি হতে হবে এসব নতুন মাধ্যমের জন্য। তৈরি থাকলে সাইবার জগতে পদচারণ ও নিজেকে নিরাপদ রাখা যাবে।
ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মেয়ে আশপাশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু ফেসবুকের সেটিংস অপশন ঠিকমতো জানে বা বোঝে কয়জন? কাকে বন্ধু বানাব, সে আমার কোন পোস্ট দেখবে, কোন পোস্ট আমি সবাইকে দেখাতে চাই বা চাই না, কারা আমাকে বন্ধু বানানোর রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারে—সব এই সেটিংস অপশন থেকে করা সম্ভব। কিন্তু না জানার কারণে একটা অত্যন্ত সময়োপযোগী মাধ্যম বা টুলকে আমরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যবহার করছি। যেকোনো অ্যাপ্লিকেশনের পাসওয়ার্ড সবচেয়ে জরুরি। এটা নিরাপদ রাখার জন্য টু ওয়ে ভেরিফিকেশন বা এসএমএস ভেরিফিকেশনের সুবিধা থাকলে ওটা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ রাখে বহুগুণ।
এবার আসি কী ধরনের ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ঠিক। আমরা না জেনে আমাদের ব্যক্তিগত অনেক অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করি, সেটিংসে ঠিক করে না দিলে যেটা ফেসবুক বন্ধুদের বাইরেও অপরিচিত মানুষ দেখতে পায়। অনেক সময় এসব ছবি দিয়ে অপ্রীতিকর কোলাজ তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। ব্ল্যাকমেলের শিকারও হতে হয়। তাই ফেসবুকে ছবি দেওয়ার আগে ভাবা প্রয়োজন এটা সবার কাছে যেতে পারে কি না। ব্যক্তিগত ও অন্তরঙ্গ এমন কোনো ছবি না দেওয়াই নিরাপদ।
আজকাল ভাইবার বা মেসেঞ্জারে কথা হয় বন্ধুদের সঙ্গে। অপরিচিত বা অল্প পরিচিত মানুষের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত কথা বলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় আলাপ প্রসঙ্গে অনেকে খুবই ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করেন, যা আমরা ভাবি, শুধু যাঁকে পাঠালাম তিনি দেখবেন। কিন্তু ওই ছবি ফোনে থাকলে যে কারোই দেখে ফেলার আশঙ্কা থাকে। সেটা ব্যবহার করে সামাজিকভাবে হয়রানি করার মতো ঘটনাও আজকাল শোনা যায়।
ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে বা এর পাসওয়ার্ড ঠিকমতো সংরক্ষণ করা না হলে, ব্যক্তিগত ই-মেইল অন্য কেউ ব্যবহার করে আজেবাজে মেসেজ পাঠাতে পারে, যা জীবনে জটিলতা তৈরি করে। যাঁরা বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাঁদের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের নিরাপত্তার জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু খুব সাধারণ (কমন) পাসওয়ার্ড বা অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা উচিত। সবার পাসওয়ার্ডের একটা প্যাটার্ন থাকে, ওই প্যাটার্নটা খুব কাছের মানুষকেও জানানো উচিত নয়। এতে কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ও কর্মক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতি করতে পারে।
মেয়েদের তথ্যপ্রযুক্তির যেকোনো টুল ব্যবহারের জন্য কিছু সাধারণ জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যদি বিপদে পড়েই যান, তবে তা গোপন না করে যথাযথ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গিয়ে সাহায্য চান। বাংলাদেশে সাইবার আইন আছে। এর আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধপ্রবণতা ধীরে ধীরে কমে যাবে। কিন্তু আইনের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য মেয়েদের তাদের সমস্যা নিয়ে বের হয়ে আসতে হবে।
লেখক: তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং সহসভাপতি, বেসিস