বিয়ের আগে থেকেই শরীরের যত্নের পাশাপাশি চুলেরও যত্ন নিতে হবে সমানভাবে। চুলের যত্নে প্রথম ও শেষ কথাই হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। প্রত্যেকের চুলের ধরন এক নয়, তাই চুলের ধরন অনুযায়ী যত্নের প্রয়োজন। চুলের বাড়তি যত্ন নিয়ে এবারের আয়োজন—
শুষ্ক চুল
শ্যাম্পুর ২/৩ ঘণ্টা আগে পুরো মাথায় উষ্ণ হেয়ার অয়েল লাগিয়ে আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন। ১৫/২০ মিনিট। ডিমের সাদা অংশ, ১ চামচ আমলকির গুঁড়ো, ১ চা চামচ মেথি গুঁড়ো, ২ চামচ টকদই, ২ চামচ মধু, একটি জবাফুল বাটা—একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে পুরো চুলে এক ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে ভেষজ কোনো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আর খুশকি থাকলে প্যাকটির সঙ্গে লেবুর রস মেশান। শুষ্ক চুলে কোমলতা ও মসৃণতা ফিরিয়ে আনতে পাকা কলা, পাকা পেঁপে ও মধু একসঙ্গে পেস্ট করে প্যাক বানিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখুন। ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
তৈলাক্ত চুল
শ্যাম্পুর আগের রাতে রিটা, শিকাকাই, আমলকি ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ফুটিয়ে সেই পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। এমন চুলে তেল ও কন্ডিশনার ব্যবহার না করলেও চলে। ২ চামচ ভিনেগার, ১টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল, ১ চামচ লেবুর রস, ১টা ডিমের কুসুম মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পুরো মাথায় লাগিয়ে রেখে হার্বাল শ্যাম্পুতে চুল ধুয়ে ফেলুন। শেষে এক মগ পানিতে চায়ের লিকার, ভিনেগার মিশিয়ে পুরোচুল ধুয়ে ফেলুন। এত চুলের তেলতেলে ভাব, প্রাণহীনতা দূর হয়ে ফিরে আসবে বাউন্স; যা চুল আছে দেখাবে তার থেকে অনেক বেশি। খুশকির সমস্যা থাকলে এক চামচ নিপাতার রস, আধা চামচ তুলসিপাতার রস, দু-চামচ মেথি বাটা, এক চামচ ভৃঙ্গরাজ, এক চামচ ভিনেগার ও এক চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে পুরো চুলে আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। যেদিন প্রথম প্যাকটি লাগাবেন তার দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় প্যাকটি লাগাবেন।
স্বাভাবিক চুল
উজ্জ্বলতা বাড়াতে সপ্তাহে দু-দিন, ২ চামচ ক্যাস্টর অয়েল, ১ চামচ কেশুতপাতা বাটা, ২ চামচ মধু, ১ চামচ আমলা ও ব্রাহ্মীতেল, ১ চামচ ভিনেগার, আধা চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন চল্লিশ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগান। চুল চিকন করতে মেথি ও লেটুসপাতা ফোটানো পানিতে ১ চামচ ভিনেগার, আধা কাপ চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
পারফিউম
বিয়ের সাজকে আরও বাড়তি মাত্রা যোগ করতে বেছে নেয়া যেতে পারে বিভিন্ন সুগন্ধি। সুগন্ধি নারী-পুরুষ উভয়েরই খুব পছন্দের সামগ্রী, যা ব্যক্তিত্বে নতুন মাত্রা এনে দেয়। শীত মৌসুমে আম্বার, ভ্যানিলা বা সিনামন জাতীয় সুগন্ধি ব্যবহার করা যায়। তা ছাড়া উল ওয়াটার, স্কাটা, বারবারি, কোরাস ক্যালাভিন পারফিউম ব্যবহার করা পারে। হলুদ উত্সবে নিজেকে আরও প্রাণবন্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে ফুলের মিষ্টি সুগন্ধি। বিয়ের অনুষ্ঠান যদি দিনে হয়, তবে হালকা ধরনের সুগন্ধি বেছে নেওয়া উচিত। আর রাতের জমকালো অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা যেতে পারে কড়া কোনো পারফিউম। বিয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত একটু গাঢ় সৌরভের পারফিউম ব্যবহার করাই উত্তম। তা না হলে এত মানুষের ভিড়ে আপনার সুগন্ধির উপস্থিতি হারিয়ে যেতে পারে।
চুল ভালো রাখতে কিছু নিয়মাবলি
l ভিজা চুল আঁচড়াবেন না বা বাঁধবেন না। চুল আঁচড়াবেন ধীরে ধীরে। বিয়ের আগে চুল ট্রিম করুন।
l প্রয়োজনে শ্যাম্পু করুন প্রতিদিনই। চুল ধোবেন প্রচুর পানি দিয়ে। যাতে শ্যাম্পু চুলে থেকে না যায়। ময়লা চুলে তেল দেবেন না। এতে চুল বেশি পড়ে।
l নিজের চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
l কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট (চুল কালার) করালে চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন চুলের বাড়তি যত্নের।
l ব্যবহূত হেয়ার ব্রাশ বা চিরুনি নিয়মিত পরিষ্কার রাখবেন।
l ২ মাসে একবার অন্তত চুল ট্রিম করানো ভালো। বেশি হেয়ার ড্রায়ারের ব্যবহার চুলের জন্য ক্ষতিকারক।
l ভিটামিন বি, সি, ই ও প্রোটিনযুক্ত খাবার চুলের জন্য ভালো।
l পানি বেশি পরিমাণে খান। শাকসবজি ও ফলে চুলের চিকনতা বাড়ে। রাতে টানা অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
l শ্যাম্পুর এক-দু ঘণ্টা আগে মাথায় তেল লাগিয়ে আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন। গরম পানিতে টাওয়েল ভিজিয়ে পানি নিংড়ে মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। কয়েকবার করুন, তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। চায়ের লিকারে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পুর পরে এই মিশ্রণে মাথা ধুলে চুলের মসৃণতা ফিরে এসে চুল পড়াও বন্ধ হবে।
l ক্লিপ, হেয়ার ব্যান্ড ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখবেন সেগুলো চুলের গোড়ায় যেন টান সৃষ্টি না করে। এতে চুল ছিঁড়ে বা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
l সূর্যতাপে চুল রুক্ষ হয়। তাই রোদে বেরোলে ছাতা বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন। বৃষ্টির পানিতে চুল ভিজলে শ্যাম্পু করে নিন।
কসমেটিকস
বিয়ে প্রতিটা মেয়ের জন্যেই অতি আকাঙ্ক্ষিত একটি দিন। বিয়ের হাজারো ধুমধামের বড় একটি অংশ হলো কনের সাজগোজ। আর বিয়ের শপিং লিস্টে হাজারো জিনিসের ভিড়ে উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে থাকে কসমেটিকস আইটেম। শুধু হলুদ, বিয়ে আর বউ-ভাতের দিনই নয়, বিয়ের পরও কসমেটিক্সের প্রয়োজন পড়ে। ঘরোয়া অনুষ্ঠানগুলোতে ন্যাচারাল লুক বেশি মানানসই। তাই বেছে নিতে হবে লাইট ফাউন্ডেশন যা আপনার ত্বকের সাথে সহজেই মানিয়ে যায়। মেকআপকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে ভালো ফেসপাউডার বেছে নিতে হবে, যা টাচআপ হিসেবে কাজ করে। চোখ সাজানোর জন্য আইলাইনার, কাজল মাশকারা ব্যবহার করা যেতে পারে। ঠোঁটের জন্য শাড়ির সাথে মানানসই কিংবা উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে হবে। নিন উজ্জ্বল, ন্যাচারাল শেডের আইশ্যাডো। আলাদা না কিনে বেছে নিন বক্স বা প্যালেট। যা ঝটপট তৈরি হতে সাহায্য করবে। নেইল পালিশ হিসেবে লাল গোল্ডেন ব্যবহারে হাতের সৌন্দর্য বেড়ে যাবে। তবে সব কিছুর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো মেকআপ রিমুভার। প্রতিবার মেকআপ ব্যবহারের পর রিমুভার দিয়ে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
সূত্র- ইত্তেফাক
Facebook Comments