বিয়ে প্রতিটি মেয়ের জীবনেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে মেয়েদের মনে নানা ধরনের স্বপ্ন, ইচ্ছা, আকাঙ্খা বাসা বাঁধে। বিয়ের কাজ ও নানা মানসিক চাপের ফলে চেহারায় একটি ক্লান্তিভাব চলে আসে। তাই আগে থেকে যত্ন নিতে হবে।
বিয়ের অন্তত পনের দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া প্রতিটি মেয়ের জন্য খুব জরুরি, যাতে বিয়ের দিন কনে হিসেবে তাকে অনেক সুন্দর ও প্রাণবন্ত দেখায়। সঠিক নিয়ম পালন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আপনি চাইলে আপনার ত্বকের ও চুলের যে কোন সমস্যা প্রতিহত করতে পারেন।
বিয়ের আগে কনে যেসব পরিচর্যা করতে পারেন তা হল-
ত্বক:
বিয়ের আগে কনে বাসায় নিয়মিত কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারে। এতে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হবে। যেমন-
- ক্লিনজার দিয়ে দিনে অবশ্যই দু’বার মুখ ধুতে হবে। এর পর মুখ শুকিয়ে এলে আবার টোনার দিয়ে মুখ মুছে নিন। এর পর আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
- বেশি চা, কফি খাবেন না। কারণ বেশি চা, কফি খেলে নার্ভ উত্তেজিত হয় এবং শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বেরিয়ে যায়।
দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি ও ফলের রস খান।
- · প্রচুর পানি পান করবেন; দিনে অন্ততপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করবেন।
· ভিটামিন এ ও ই সমৃদ্ধ এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস্ ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
· আপনি অবশ্যই বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগানোর চেষ্টা করবেন।
· পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, পরিমিত খাবার এবং যথেষ্ট পানি খেতে চেষ্টা করুন।
· রোদের তাপ থেকে সবসময় আড়াল থাকতে হবে।
· বিয়ের আগে কনে বাসায় নিয়মিত কিছু ফেইস পেকও ব্যবহার করতে পারে। যেমনÑ
· ত্বকের যে কোন দাগ দূর করার জন্য পাকা পেঁপের কোন ঝুড়ি নেই। পাকা পেঁপে চটকে তাতে টকদই মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করা যেতে পারে। এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে উঠিয়ে ফেলতে হবে। এর পর মুখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
· এছাড়া পাকা পেঁপে চটকে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে, গলা ও হাতে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এর পর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলতে হবে।
· চালের গুঁড়া টকদই, মূলতানি মাটি কমলালেবুর খোসার গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পেক তৈরি করে মুখে এবং গলায় লাগাতে হবে। এই পেক নিয়মিত লাগালে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও সতেজ।
· এছাড়া পাকা কলা লেবুর রস এবং মধু ভালো করে মিশিয়ে পেক তৈরি করে সেই পেকটি মুখে লাগিয়ে বিশ মিনিট রাখতে হবে। এর পর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ কর তুলে ফেলতে হবে।
· আপনার ত্বক বিরক্তি প্রকাশ করে এমন কোন কিছুই করা আপনার ত্বকের জন্য ভালো নয়। আপনি লোশন টাইপের পণ্য দিয়ে ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিং করবেন এবং টোনিং করার জন্য অ্যালকোহলবিহীন টোনার নেবেন এবং যে ধরনের ফেসিয়াল মাস্ক ত্বককে উষ্ণ করে ফেলে তা আপনার জন্য প্রযোজ্য না।
· আপনি যে কোন ধরনের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার সময় প্রোডাক্টটি সেনসিটিভ স্কিনের জন্য প্রযোজ্য কিনা জেনে কিনবেন। এখন অধিকাংশ ব্র্যান্ডের গায়ে লেখা থাকে এটি কোন ধরনের ত্বকের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
· বাসাতে আপনার ত্বকে ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিতে পারেন ১ চা চামচ করে মধু ও অ্যালোভেরার জেল এবং একটি ডিমের কুসুম মিলিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ৫ মিনিট পর উষ্ণ পানিতে ধুয়ে নিন।
- ত্বকের মরা কোষ ঝরানোর জন্য ২ টেবিল চামচ করে ওটমিল ও অ্যালোভেরার জেল, ২ চা চামচ চিনি এবং ১ চা চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিলিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ৩ মিনিট পর ভেজা ও নরম হাতে ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে একবার মরা চামড়ার কোষ ঝরানো যেতে পারে।
চুল:
· বিয়ের আগে কনে বাসায় নিয়মিত কিছু চুলের পেকও ব্যবহার করতে পারে। যেমন :
· চুলের ডগা ফেটে গেলে তা কাটা ছাড়া কোন উপায় নেই। এ ছাড়া চুলে নিয়ম করে যতœ নিতে হবে। ২০০ গ্রাম নারকেল তেলের সঙ্গে ২০টা জবাফুল, দুটি আমলকী, দুই চামচ মেথি ১০ মিনিট ফোটান। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই মিশ্রণ চুলে লাগাবেন।
· রোজমেরি অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল ও অলিভ অয়েল মেশানো কন্ডিশনার ভেজা চুলে লাগান। হালকা কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন ৪৫ মিনিট। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন ।
· প্রতিদিন একটি করে ডিম মাথার ত্বক ও চুলে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পর ধুয়ে নিতে পারেন। অথবা তিনটা অ্যালোভেরার পাতা থেকে ভালো করে জেল বের করে নিয়ে এতে মধু মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে বিশ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার করে তিন মাস এভাবে পরিচর্যা করতে থাকুন।
· চুলের রুক্ষতা দূর করতে সপ্তাহে তিন দিন চুলে তেল লাগিয়ে এ প্যাকটি ব্যবহার করুনÑ এক চামচ নারিকেল তেল, এক চামচ কাস্টার অয়েল, এক চামচ ভিনেগার, এক চামচ শ্যাম্পু, একটা পাকা কলা ও এক চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন চলি¬শ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
· সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন নারকেলের দুধ, পাতিলেবুর রস ও নিমপাতা বাটা মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। শেষে দুধ ও মধুর মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
· খুশকি থেকে মুক্তি পেতে সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাকটি লাগান। টকদই, একটি ডিস্ট্রিন ট্যাবলেট ও পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন। দু-ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। শেষে চায়ের লিকারে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- এছাড়া বিয়ের পনের দিন আগে থেকেই ভালো কোন স্যালন থেকে কনে ত্বক ও চুলের কিছু ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারে।
· বিয়ের পনের দিন আগে থেকে ভালো কোন বিউটি পার্লার থেকে কমপক্ষে দু’বার ফেসিয়াল করে নিন।
· বিয়ের আগে ত্বকে বাড়তি উজ্জ্বলতা আনতে গোল্ড ফেসিয়াল, পার্ল ফেসিয়াল, ব্রাইটেনিং ফেসিয়াল, অক্সি-ব্রাইট ফেসিয়াল ইত্যাদি করা যেতে পারে।
· বিয়ের দুই-তিন দিন আগে ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করে নিন। অনুষ্ঠানের আগে পুরো মুখে থ্রেডিং করে নিতে পারেন।
· ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে থ্রেডিং না করতে চাইলে মুখে ও হাতে ফেয়ারপলিশ করে নিন।
· মেকআপের এক দিন আগে আই-ব্রাউ শেপ করে নিন। বিয়ের তিন-চার দিন আগে ওয়্যাক্সিং করে নিন।
· চুলের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল লুকের জন্য বিয়ের আগে অন্ততপক্ষে দু’বার হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। যেমন : প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট, হার্বাল ট্রিটমেন্ট, হেয়ার স্পা ইত্যাদি করতে পারেন।
· এছাড়া বিয়ের আগে কনের কিছু আলাদা প্রিপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। যেমন :
· বিয়ের আগের দিন হাতে মেহেদি পরুন। বিয়ের সাজের দিন পার্লারে যাওয়ার আগে ফুল কিনে রাখুন। শাড়ি, গহনা, জুতাসহ সব জিনিস সঙ্গে নিয়ে নিন।
· মনের চাপ কমাতে বিয়ের আগে থেকে পাওয়ার ইয়োগা অথবা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন।
· নিজেকে রিল্যাক্স রাখতে ভালো কোন স্পা থেকে বডি ম্যাসাজ বা অ্যারোমা থেরাপি নিয়ে নিতে পারেন।
– কানিজ আলমাস খান