banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 316 বার পঠিত

বিজ্ঞান মানেই চার মলাটে বাঁধা : ড. জেবা ইসলাম সেরাজ

 

55

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম: শৈশবে বাবা-মা উভয়েই আমাকে মজার মজার বই উপহার দিতেন। পড়াটা ছিল আমার কাছে মজার বিষয়। আমার মেয়েরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়েছে। ওদের বিজ্ঞানবিষয়ক বইগুলো ছবিসহ অনেক সুন্দর ও সহজ পাঠ্য ছিল। ওরা কৌতূহলভরে বইগুলো পড়ত। ওদেরই বন্ধু যারা বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করত তাদের বিজ্ঞানবিষয়ক বইগুলো ছিল সাদামাটা। পাঠের সঙ্গে কোনো ছবি নেই। বিষয়গুলো পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগাবে এমনভাবে উপস্থাপনও করা হয়নি। তাদের কেউ কেউ শিক্ষকের সহযোগিতা নিয়ে বিজ্ঞানে ভালো ফলাফল করেছে। যাদের শিক্ষক রাখার সামর্থ্য নেই তারা ভালো ফলাফল তো দূরের কথা ভালো করে বিজ্ঞানকে জানতেও পারছে না। অথচ প্রত্যেক শিশুর কাছেই পড়াটা মজার বিষয় হওয়া দরকার। যে কোনো বিষয়ে শেখা আনন্দের হওয়া জরুরি। আর এই আনন্দ কয়েক গুণ বেশি হওয়া উচিত যখন বিষয়টি হয় বিজ্ঞান। কারণ, বিজ্ঞান মানেই চার মলাটে বাঁধা শুধু একটা বই নয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চলতে, ফিরতে বিজ্ঞানের ভূরি ভূরি বাস্তব উদাহরণ আমরা দেখি। সেটিই বিজ্ঞান শিক্ষাকে প্রাঞ্জল ও আকর্ষণীয় করে তোলে। আবার উল্টো দিক থেকে দেখলে, বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনকে করে তোলে সহজ ও আরামপ্রদ। বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সেরাজ।

 

জেবা ইসলামের শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে দেশ এবং দেশের বাইরে। তার বাবা আহমেদ শামসুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি গবেষণা এবং লেখালেখিও করেন। তার বাবা বাংলায় বায়োটেকনোলজি বিষয়ক একটি বই সম্পাদনা এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জেনেটিক্স বিষয়ক একটি বই লিখেন। যেটি উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অনার্সে পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হচ্ছে। মা হুমায়রা ইসলাম ছিলেন শিক্ষক। বাবা-মা উভয়ই শিক্ষকতা পেশায় জড়িত থাকার কারণে তার বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ ছিল। সেই পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে জেবা ইসলাম পেশাগত জীবনে শিক্ষকতার পেশা বেছে নেন। ভাই-বোনদের মধ্যে জেবা ইসলাম সেরাজ মেঝো। বড় ভাই ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক। ছোট ভাই আমেরিকা প্রবাসী। পেশায় আইটি বিশেষজ্ঞ।

 

জেবা ইসলাম মুক্তিযুদ্ধকালীন বছর দুয়েক হলিক্রস, বছর দুয়েক জেভিয়ার্স সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে পড়েন। এরপর চলে যান দেশের বাইরে। কেনিয়ার একটি স্কুল থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল করেন। দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞানে বিএসসি অনার্স ভর্তি হন। ১৯৮১ সালে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি অনার্স এবং ১৯৮২ সালে প্রথম শ্রেণীতে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এমএসসির ফলাফল বের হলে ওই বছরই তিনি পিএইচডি পড়ার জন্য গ্লাসগও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। ১৯৮৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে লিভারপুল ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট ডক্টরালের জন্য ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পনের মাসের পোস্ট ডক্টরাল করেন তিনি। দেশে ফিরে ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি গবেষণা এবং লবণ সহনশীল ধান উদ্ভাবনে কাজ করছেন। এ দেশের সাধারণ বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান পড়াকে আরও আনন্দময় করে তোলার জন্য চমৎকার ইলাস্ট্রেশন সমৃদ্ধ একটি বই বের করার সিদ্ধান্ত নেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার দুই মেয়ে সামিয়া সেরাজ ও সারাহ সেরাজ। তার স্বামী ড. তৌফিক এম সেরাজ বই প্রকাশ করেন।

 

জেবা ইসলাম সেরাজ বলেন, নাসরীন সুলতানা মিতু, আতিয়ার রহমান ও আমি বিজ্ঞানের মজার পাঠশালা বইটি লিখেছি। বইয়ে সুন্দর সুন্দর ইলাসট্রেশন করেছেন নাসরীন সুলতানা মিতু। বইটির দুই হাজার কপি ছাপানো হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বইটি দেয়া হেব। সবার সহযোগিতা পেলে এই বইয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে বইটি তুলে দেয়ার ইচ্ছা রয়েছে। শিশুরা বিজ্ঞানকে সহজভাবে জানুক, বিজ্ঞানকে ভালোবাসুক সেটা ভেবেই বইটি প্রকাশ করা হয়েছে।

 

পারিবারিক জীবনে জেবা ইসলাম সেরাজের স্বামী ড. তৌফিক এম সেরাজ শেলটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দুই মেয়ে সামিয়া সেরাজ ও সারাহ সেরাজ দু’জনেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। সামিয়া মেটারিয়াল সায়েন্সে পিএইচডি করছেন।

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/২৪ জুলাই ২০১৪ই

Facebook Comments