দ্য স্লেভ
আমরা প্রায়ই কাজের লোকের বা গৃহকর্মীদের উপর অত্যাচারের কাহিনী শুনি। তাদের বিষাদময় জীবনের কাহিনী শুনি আবার কাজের লোক কর্তৃক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে প্রচুর। কিন্তু ঘটনাগুলোকে অনেককাংশেই কমিয়ে আনা যায় যদি আমাদের সদিচ্ছা থাকে।
বহু কাজের লোক আছে, যারা গ্রাম থেকে ঢাকা অথবা চিটাগাং শহরে আসে কিন্তু কিছুদিন পর তারা চলে যায় বা পালিয়ে যায়। অথবা বাড়ি ফিরে যাবার জন্যে উদগ্রীব হয়। কখনও পালিয়েও যায়। এর পেছনে কিছু কারন খুঁজে দেখা যাক।
সম্ভবত গ্রামের উম্মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠে, শহরের মুরগীর খাঁচার মত বাসার ভেতরে তাদের ভালো লাগে না। কিন্তু এটা মিনি-মাইস করা যায়। কারন সম্ভবত মানুষ সবসময় সহনশীল প্রানী।
আসুক দেখা যাক কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা যায়,
১.ভাল আচরণ
অত্যন্ত ভাল আচরণের সাথে তাকে গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে তাকে আপনি কিনে নেননি বরং সে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছে। আপনার জবটি আপনার জন্য সন্মানের। ঠিক তাকেও তার কাজটি যে সন্মানের বুঝতে দিন।
২. গৃহকর্মীদের মানসিক অবস্থা বোঝা
কেউ শহরে আসার পর, প্রথম দিনেই কাজের প্রতি আকৃষ্ট করা ঠিক নয়। বরং প্রথম দিন তাদেরকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে হবে। কারন এসব গরিব মানুষেরা ভালো কাপড় পায় না। প্রথম দিন বাজারে নিয়ে গিয়ে বেশ মানসম্মত কাপড় কিনে দিতে হবে, যা সে পছন্দ করে। আর যদি আমরা মুত্তাকী হই, তবে নিজের জন্যে যে মানের কাপড় কিনি এবং যেমন কাপড় নিজের স্ত্রী, বোন, মা ওনাদের জন্যেও পছন্দ করি, ঠিক তেমনই কাপড় সেই মেয়ে বা ছেলেটির জন্যে পছন্দ করব। এটা করলে প্রথম দিনেই সেই মেয়ে বা ছেলেটি (সাধারনত মেয়েরাই কাজ করে বাসায়) উক্ত বাসার কর্তা, কতৃ সম্পর্কে বিশাল একটি ধারণা লাভ করবে এবং তার মন সাই দেবে এই বাসায় কাজ করতে।
৩. আপনার বাসার পরিবেশ গৃহকর্মীকে বুঝিয়ে বলুন
প্রথম দিন শপিং শেষে বাসায় ফিরে তাকে পুরো ঘরবাড়ির সবস্থান দেখাতে হবে। ধীরে ধীরে ওনার বোঝার ক্ষমতা অনুযায়ী বুঝাতে হবে। এরপর তার থাকার স্থানটি দেখাতে হবে এবং তার বাথরুমে নতুন ব্রাশ, পেস্ট, সাবান এসব রাখতে হবে। ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিবেন। এটা পাওয়া তার হক। তার থাকার স্থানটি যেমনই হোক অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হতে হবে। এটা তার মানুসিকতাকে সুন্দর করবে এবং পরিবারের সবার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কথা ভাবতে হবে।
৪. খাবার নিয়ে কখনও শাস্তি দিবেন না
আপনারা যা যা খান, ভালো ও মানসম্মত খাবার তাকেও তাই খাওয়াতে চেষ্টা করুন। যদি নিজেরা বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতল যান(নিজেদের সঙ্গতি অনুসারে কোনো রেস্টুরেন্ট) তাহলে সেই মেয়েটিকে পাশাপাশি একই চেয়ারে বসিয়ে পরিবারের সদস্যের মত করে একই রকম খাবার খাওয়াতে হবে। এটাই সুন্নাহ। এটা করলে সেই মেয়েটি নিজেকে পরিবারের দায়িত্বশীল একজন ভাববে এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিজের উপর কর্তব্য মনে করবে।
৫. গৃহকর্মী সম্পর্কে জানুন
তারসাথে বেশ কিছুক্ষন গল্প করতে হবে। তার পরিবার,পরিবেশ সকল বিষয়ে জানতে হবে। তার ভালোলাগা মন্দলাগা এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে। এতে তার সম্পর্কে যেমন বালো একটি ধারনা তৈরী হবে, তেমনি সেও বাড়িওয়ালা থেকে একটা ধারনা পাবে। আর মনেযোগ নিয়ে তার কথা শোনার কারনে সে নিজেকে ভাগ্যবান ভাববে। আর এভাবে সে খুশী মনে সার্ভিস দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হবে। নিজেই জানতে চাইবে তাকে কি কি করতে হবে।
৬. অবশ্যই করণীয় কিছু বিষয়
ছবি তুলে রাখুন। ফোন নাম্বার মুখস্থ করানোর চেষ্টা করতে পারেন।
এবং তাকে সুন্দর করে বলতে হবে, যে দেশের আইন হল যারা ডমেস্টিক হেলপার বা গৃহকাজে সহায়তাকারী (কাজের মেয়ে শব্দটি একটি খারাপ অর্থ প্রকাশ করে,সুন্দর শ্বদচয়ন করতে হবে) তাদের এক কপি ছবি স্থানীয় থানায় জমা রাখতে হয়,তাই আমরা আইন অনুসরন করছি। এটা তোমার নিরাপত্তার জন্যেই। এতে তার মনের গহীনে কোনো কু-চিন্তা থাকলে সেটা সে নিজেই দমন করবে, এমনটা ধরে নেওয়া যায়। কারন মানুষ সুযোগ পেলে অনেক সময় তার খারাপ স্বভাব চরিতার্থ করে। আগে কেউ পালিয়ে যাবার অভিজ্ঞতা থাকলে জিডি করে রাখতে পারেন।
৭.পর্যাপ্ত বিশ্রাম
গৃহকর্মীদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিতে হবে। সে ভালো করে বিশ্রাম করলেই বরং কাজে ভুল কম করবে। তাকে তার কাজ ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। এক বার না বুঝলে বিরক্ত না হয়ে বার বার বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটি কাজ আমি যেভাবে চাই বা যেভাবে করা উচিৎ সেটা বুঝাতে হবে সুন্দর করে। তাহলে সে কাজটি শিখবে এবং ভুল কম করবে। তাকে খুশী রাখতে হবে।
৮. প্রশংসা করা
প্রতিটি মানুষই প্রশংসা করার বিষয়টি খুবই পছন্দ করে। আমার মন প্রশংসা পছন্দ করলে সেই স্বল্প বেতনের কাজের মানুষটিও আমার চেয়ে বেশিই প্রশংসা পছন্দ করে মনে রাখতে হবে। তাই এই পয়েন্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে যখন কোনো কাজ করবে, সেটা মোটামুটি ভালো হলেই তাকে অনেক প্রশংসা করতে হবে। তার কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। আবার তার উপর অতিরিক্ত বোঝা না চাপিয়ে না দেবার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
৯. গৃহকর্মীদের পরিবারকে অবহিত করা
গৃহকর্মীদের পরিবারের প্রতি ইনসাফ বা যথাযথ তথ্য সবসময় দেওয়া উচিত। তার সুস্থ অসুস্থতা ছাড়াও মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলা এবং দেখতে নিয়ে যাওয়া খুবই দরকার পরিবারের লোকেদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। ঈদের সময় গুলোকে তাদের বখশিশ দিতে হবে এবং বাড়িতে যেতে দিতে হবে। সে সময় তার পিতা-মাতা,ভাইবোনদের জন্যে কিছু উপহার দিলে, সেই মেয়ে খুব কৃতজ্ঞ থাকবে। যদিও আইন অনুযায়ী এটা তার ব্যক্তিগত খরচ, কিন্তু গৃহকর্তা এটাকে সহযোগীতা করলে তার ফলাফল হবে অনেক ভালো।
১০. ঘুরতে নিয়ে যান
পরিবারের সন্তানদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে গেলে তাকেও নিতে হবে। এবং মাঝে মাঝে তাকে বাইরে কোনো পার্কে নিয়ে যেতে হবে। এতে তার একঘেয়েমী ধুর হবে।
মনে রাখতে হবে যে তিনিও, একজন আল্লাহর বান্দা/বান্দী।
রাসূল(সাঃ) বলেছেন,সাবধান..তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, পিতা তার পরিবারে দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককেই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে অধিনস্তদের(গৃহকর্মীদের) ব্যাপারে।
আরেক হাদীসে বলা হয়েছে আখিরাতে দায়িত্বশীলদেরকে শেকল পরিহিত অবস্থায় উঠতে হবে, অনিস্তরা তার ব্যাপারে অভিযোগ প্রত্যাহার করলে বা ভালো রিপোর্ট দিলেই কেবল ছাড়া হবে।
অন্যের দায়িত্ব গ্রহন করা মানে ফাঁসির দড়ি গলায় পরা। ফলে সেই অধিনস্তদের সাথে অবশ্যই ন্যায় বিচার করতে হবে।
“রসূল(সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে ,অন্যের জন্যেও তাই পছন্দ করে” —সম্ভবত বুখারী বর্ণিত
এর ফলাফল দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কল্যানকর। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।