banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 988 বার পঠিত

 

বাংলাদেশে ঈদ আনন্দ

নিবরাজ জাহান হুজায়রা


ঈদ নিয়ে একটা কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব, কি ভাবে কি লিখব? যা হোক ঈদ যেহেতু এক মাস সিয়াম সাধনের পর আসে তাই রোযা দিয়ে শুরু করি এই লেখা। বারো মাসের এই একটা মাস যার একটা জাদুকরী ক্ষমতা আছে, আমরা এমনিতেও কিন্তু অন্যান্য মাসেও রোযা রাখি, কিন্তু এই মাসের ব্যাপারটাই আলাদা। স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়, মা-দের কোচিং এ মাসব্যাপী দৌড় ঝাঁপ করতে হয় না, ঘরে ঘরে একটা ইবাদতের পরিবেশ বিরাজ করে, এই পরিবেশটা আগে অবশ্য পুরো দেশেই বিরাজ করত কিন্তু ইদানিং যা অবস্থা হয়েছে তাতে বিরক্ত, লজ্জা এবং মাঝে মাঝে ভীষণ রাগও হয় !

রোযা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে: সাধারণত পুরুষরা রোযা রাখতে গরিমসি করে! তবে তাদেরকে কিছু বলা হলে অবশ্য কোন মন্তব্য করে না শুধু লাজুক একটা হাসি দেয়া ছাড়া। কিছু অল্প বয়স্ক মেয়ে আছে (কলেজ থেকে ভার্সিটি লেভেলের) যারা রোযা রাখে না, কিছু বলা হলে উত্তর দেয় আম্মু রাখতে দেয় না, কেউ উত্তর দেয় আমার সমস্যা আছে, ডাক্তার বারণ করেছে, এবং সত্যি সত্যি কারো মা সন্তানের কষ্ট হবে মনে করে সন্তান কে রোযা রাখা থেকে আসলেই বিরত রাখে!

রোযার মধ্যে কেনাকাটার জন্য মার্কেটে গিয়ে তো আমি বোকা হয়ে গেছি, প্রচুর ছেলে-মেয়েরা এমন ভাবে খাওয়া দাওয়া করছে এবং মার্কেটের দোকান থেকে এমন ভাবে ডাকাডাকি করছে যে কোন অবস্থাতেই বুঝার উপায় নেই এটা রোযার মাস! আমার ক্লাস টুতে পড়া সন্তানটি খুবই অবাক হয়ে হিজাব পরা একটি মেয়েকে দেখিয়ে প্রশ্ন করলো, মা এই আপুটা রোযা রাখেনি কেন? আমি আমার সন্তানটিকে বুঝালাম, আপুটা সম্ভবত অসুস্থ তাই !!!

রোযারই শেষের দিকে আমার এক হিন্দু বন্ধু আমার সাথে মার্কেটে গেল, ও কিছু কেনাকাটা করবে, এর মধ্যে ও ২/৩ বার বলল পানি খেতে ইচ্ছে করছে, আমি ওকে কতবার করে বললাম, আমার কোন সমস্যা হবে না, তুমি পানিটা খাও, ও শেষ পর্যন্ত পানিটা খেল না। ওর একটাই কথা তোমার সামনে আমি কিছুতেই পানি খাব না, ভদ্রতাবোধ বলে একটা ব্যাপার আছে।

কাগজে কলমে শুধু নয়, অন্তরে বিশ্বাসের কারণে এই দেশটা এখনও ইসলাম প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। রোযার মধ্যে কোনমতে একটা ছেঁড়া লুঙ্গি, ছেঁড়া চাদর টেনে সবাই কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া করবে, বড় বড় মার্কেট গুলো খাবারের ব্যবস্থা থাকবে এই অবস্থা আইন করেও উঠানো যাবে না, কারণ আমরা আইন না মানতেই ভালোবাসি! এটা একটা বোধের ব্যাপার।

এই শিক্ষাটা আমাদের পরিবার থেকেই হতে হবে। মেয়ের সাথে তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন খারাপ ব্যবহার করলে মনের কষ্ট মনে চেপে মারা যদি সামাজিকতার ভয়ে মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেন, মানিয়ে নেবার চেষ্টা করতে তবে আল্লাহ্ র ভয় কেন মায়েরা পাবেন না, কেন মেয়ের গুনাহের ভাগ দার হতে যাবেন? সন্তানটি পরিনত বয়সে যদি ধর্মের দিকে ঝুঁকে যায়, তবে অল্প বয়সে আহ্লাদ করে রোযা রাখতে না দেবার জন্য আপনারই সমালোচনা করবে! সন্তানের সমালোচনা সহ্য করা খুব কষ্টের, কেন মিছেমিছি কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন?

রোযা সংযমের শিক্ষা দেয়, ত্যাগের শিক্ষা দেয়(যাকাত প্রদানের মাধ্যমে), তওবা করা শেখায়(ফিতরাহর মাধ্যমে), ইফতার বন্টনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ায়।
এই রোযাতেই দোকানীদের বছরের আয় হয়ে যায়, শুধু বড় বড় শপিং মলের নয় ফুটপাতের দোকানীরও তৃপ্তির হাসি ফোঁটায় মুখে।

রোযা শুধু না খেয়ে থাকা নয়, রোযা ঈদের আনন্দ বারতা। এক ঈদেই আমরা পুরো পরিবারের সবাই কে প্রীতি উপহার দেই এবং পেয়ে থাকি। দেবার মধ্যে যে এক অনাবিল আনন্দ আছে তা কিন্তু ঈদেই বেশী অনুভব হয়। জীবনের ঝুঁকি আছে জানার পরও ঈদের মধ্যে মা-বাবার সাথে সবাই দল বেঁধে ঈদ করতে চলে যাওয়া কি কেউ আটকাতে পারে?

ঈদের নামাজ, ঈদের জামাত, নামাজ শেষে কোলাকুলি এই অপার সৌন্দর্য শুধু ঈদ-ই দেয়। ঈদের সালামি ২০টাকা হোক বা ১০০০টাকা হোক(তাও যদি হয় জোর করে আদায় করা তবে তো কথাই নেই) এর আনন্দ অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনাই চলে না। মহান আল্লাহ্ র কাছে শুকরিয়া ঈদ আনন্দ সবার সাথে উৎযাপন করতে পারার জন্য।
সবাইকে ঈদ মোবারক।

নিবরাজ জাহান হুজায়রা
কাউন্সেলিং সাইকোলজিষ্ট

Facebook Comments