১ বছর যাবত অরক্ষিত শারীরিক মিলনের পরেও গর্ভধারণ না করতে পারাটাকেই বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। প্রজননের বয়সের ১০-১৫% দম্পতি এ সমস্যায় ভুগে থাকেন।
অনেকগুলো জীবনযাত্রার ব্যাপার আছে যার প্রাকৃতিক জন্মদানক্ষমতার ওপর প্রভাব রয়েছে। সেগুলো হলো :
১. বয়স : বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছরের পরে গর্ভধারণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে। পুরুষের বয়সও গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের অক্ষমতাটা শেষ বয়সে পরিলক্ষিত হয়।
২. বিগত মাসিকের দশম থেকে আঠারোতম দিনে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে প্রতি ৪৮ ঘণ্টাতেই যৌনমিলন করা প্রয়োজন।
৩. সাফল্য পেতে প্রতি ১-২ দিনে একবার যৌনমিলন করা উচিত। তবে মানসিক চাপ থেকে রেহাই পেতে, আরও কম যৌনমিলন করা গ্রহণযোগ্য।
৪. কোনো নির্দিষ্ট আসনে যৌনমিলন গর্ভধারণের সম্ভাবনার উন্নতি ঘটায় না।
৫. বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) যদি অনেক বেশি থাকে (>৩৫) বা অনেক কম থাকে (<১৯) তবে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৬. ধূমপান, মদ্যপান (দিনে ২ বারের বেশি) এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান ( দিনে ৫ কাপের বেশি) বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭. স্বামীর জন্যে – উষ্ণ, আঁটসাঁট, নাইলনের অন্তর্বাস পরিহার করা উচিত। তাদেরকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে বলা হয়। কারণ শরীরের অভ্যন্তরে যে তাপমাত্রা তারচেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম তাপমাত্রা অণ্ডথলিতে থাকতে হয় কার্যকর শুক্রাণু তৈরির জন্যে।
৮। খাবার : মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের কিছু ভূমিকা আছে সন্তান জন্মদান-সক্ষমতার ক্ষেত্রে। ফলিক এসিড এবং জিঙ্কের ঘাটতি থাকলে শুক্রাণু তৈরি কমে যেতে পারে। তাছাড়া খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্ট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন : বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, রেটিনল এবং আলফা টকোফেরোলের ঘাটতি থাকলে জননতন্ত্রের নিঃসরণ কমে যেতে পারে। ফলে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
৯. অনেক দম্পতি যৌনমিলনের সময় শুষ্ক যোনিপথের কারণে পিচ্ছিলকারক পদার্থ ব্যবহার করেন। এসব পদার্থ প্রায়শই অম্লীয় হয়ে থাকে এবং শুক্রাণুকে হত্যা করে।
১০. অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা কমায়।
১১. সামাজিক শ্রেণি : গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহুরে নারীদের বন্ধ্যাত্বের পরিমাণ বেশ বেশি। কারণ উচ্চশ্রেণির নারীরা তাদের ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা না করে সাধারণত সন্তান নিতে চান না। আবার কিছু কিছু রোগ এ শ্রেণির মধ্যে বেশি হয়; যেমন : এন্ডোমেট্রিওসিস, যা নিজেই কিনা বন্ধ্যাত্বের জন্যে দায়ী। যে বয়সে এসে প্রাকৃতিকভাবেই সন্তান জন্মদানের ক্ষমত কমে যায় এবং বিভিন্ন গাইনোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়, তখন সন্তান নেবার চেষ্টা বন্ধ্যাত্বকে প্রভাবিত করে।
১২. সন্তান জন্মাদানের সক্ষমতার ওপর কিছু কিছু ওষুধের প্রভাব আছে।
তাই নিঃসন্তান দম্পতির দুজনকেই গাইনী বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়া উচিত।
