নারী সংবাদ
সমাজে যখন শাশুড়ি ও পুত্রবধূর সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথা ওঠে, ঠিক তখনই এই দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করে দিতে রংপুরের মিঠাপুকুরে অনুষ্ঠিত হলো শাশুড়ি-পুত্রবধূ মেলা। গত বৃহস্পতিবার দিনভর মেলায় শতাধিক জোড়া বউ-শাশুড়ির উপস্থিতি তাদের আন্তরিকতায় সেখানে সৃষ্টি হয় ভিন্ন রকম এক নান্দনিকতার ঢেউ।
মিঠাপুকুরের চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে এবং ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের সহায়তায় বউ-শাশুড়ি মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: শেখ মো: সাইদুল ইসলাম। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করীম টুটুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করীম ও এফপিআই মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন।
উদ্বোধনের পরই বউ-শাশুড়িরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তারা একে অপরের প্রতি আরো নিবিড় হয়ে যান। পুরো চত্বরে ধ্বনিত হয় পুত্রবধূ ও শাশুড়ির নির্ভেজাল নিবিড় সম্পর্কের দ্যোতনা। এ সময় উপস্থিত দর্শনার্থীরা বিমুগ্ধ হন।
দর্শনার্থী মাইদুল ইসলাম জানান, আমাদের সমাজে এখন প্রতিনিয়ত পুত্রবধূ ও শাশুড়িদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন দৃশ্যমান। এ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এ মেলা। আমি মনে করি এ ধরনের মেলা আয়োজন করতে পারলে সমাজে এ বিষয়ে আরো সচেতনতা তৈরি হবে।
মেলায় অংশগ্রহণকারী শাশুড়ি মালেকা বেগম জানান, আমার তিন ছেলের তিনটি বউ। সবার সাথেই আমার সম্পর্ক মায়ের মতো। মেলায় এসেও দেখলাম, আয়োজকেরাও বললেন শাশুড়িকে পুত্রবধূদের মনে করতে হবে মা। আর পুত্রবধূদের শাশুড়িদের মনে করতে হবে মেয়ে। এভাবেই পারস্পরিক বোঝাপাড়ার মাধ্যমে শাশুড়ি ও পুত্রবধূদের সম্পর্ক হবে মা ও মেয়ের মতো। এটি হলে সমাজে ও পরিবারে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাবে বলে মনে করেন এই শাশুড়ি।
অন্য দিকে মেলায় অংশ নেয়া কোহিনুর বেগম নামের এক পুত্রবধূ বলেন, আমার শাশুড়ির সাথে আমার অনেক দূরত্ব ছিল। আজকে মেলায় এসে আমার সেই দূরত্বটা কমলো। আজ থেকে আমাদের মাঝে আর কোনো দূরত্বই থাকবে না। মা ও মেয়ে হয়ে বাকি জীবন কাটাবো আমরা।
মেলার প্রধান অতিথি রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: শেখ মো: সাইদুল ইসলাম জানান, এ সমাজের বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এ মেলা। এর মাধ্যমে এই দু’টি সম্পর্কের যে নেতিবাচক ধারণা আছে তা থেকে সবাইকে বের করে আনতে এ ধরনের আয়োজন ভূমিকা রাখবে। মেলায় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বউ-শাশুড়ির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পজেটিভ ধারণা দেয়া হয়েছে।
মেলা আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিটন বালা জানান, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে বউ ও শাশুড়িদের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করতে আমাদের এ প্রকল্প। আশা করি অংশগ্রহণকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তারা বাড়িতে ফিরে তাদের আশপাশের বউ-শাশুড়িদের মধ্যে এই সেতুবন্ধনের বার্তা পৌঁছে দেবেন।
আয়োজনে শতাধিক বউ-শাশুড়ি, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি ও গর্ভবতী মা, কিশোর-কিশোরী, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। মেলায় বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগ, পবিবার পরিকল্পনা বিভাগ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা ও ল্যাম্ব বিভিন্ন স্টল এবং নাটক প্রদর্শন করে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।