নারী সংবাদ
ফেনী শহরের পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং হিসেবে পরিচিত উঠতি বয়সী সংঘবদ্ধ বখাটেদের নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে অভিভাবকরা। তাদের দমনে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য শহরে বেশ কিছুদিন ধরে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে জেলায় সংগঠিত খুন, ছিনতাইসহ বেশ কিছু অপরাধ ঘটনায় উঠতি কিশোরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।
একাধিক লোহর্ষক হত্যার তদন্তে দেখা গেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব অপরাধের সূত্রপাত। পাড়া-মহল্লার অলি-গলি এমনকি স্কুল-কলেজের সামনে তারা পথচারীদের উত্ত্যক্তও করে। ইতোমধ্যে এসব অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ক’দিন আগে শহরের শাহীন একাডেমী সড়ক, ফনেী সরকারি কলেজ গেইটসহ তিনটি স্থান থেকে ১১ কিশোরকে আটক করা হয়। দৃষ্টিকটু হওয়ায় তাদের চুল কেটে দেয়া হয়। আটককৃতদের অভিভাবকদের থানায় ডেকে নেয়া হয়। পরে তাদের সন্তানদের খোঁজ-খবর রাখা এবং তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া। পরে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, এসব অপরাধ দমনে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম শহর সহ বিভিন্ন স্থানে টহল অব্যাহত রেখেছে। একজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রতিটি টিমে ৭ জন সদস্য রয়েছেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া বলেন, কোন অবস্থায় কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবেনা। উশৃঙ্খল চলাফেরা, আড্ডারত এমনকি মোটর সাইকেলে তিনজন চললেই আটক করা হবে।
ফেনী পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহতাব উদ্দিন মুন্না বলেন, কিশোর অপরাধ বাড়ার পেছনে চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকা অন্যতম কারণ। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই নয়, অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই। সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ ও যত্নশীল হওয়া খুবই জরুরী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক জানান, স্কুল পর্যায়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে কথিত বড় ভাইদের অনুসরণ করতে গিয়ে শিশু-কিশোররা বিপথগামী হচ্ছে। অনেকে দলভারী করার জন্য শিশু-কিশোরদের তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে জেলায় সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধে এমন সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে এসেছে।
একজন গণমাধ্যম কর্মী জানান, ফেনীর বহুল আলোচিত একরাম হত্যাকাণ্ড, মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত রাফি হত্যাকাণ্ড, স্কুল ছাত্র আরাফাত হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কিছু লোহহর্ষক ঘটনায় কিশোররা জড়িত রয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।
ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাং কালচার খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সর্বাগ্রে অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানে এসব ব্যাপারে শিশু-কিশোরদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। তিনি তার প্রতিষ্ঠানে (ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুল) শিক্ষার্থীদেরকে এসকল বিষয়ে নিয়মিত নজরদারী করেন। ওই স্কুলে কোন ছাত্র অর্ধ ইঞ্চির উপর চুল রাখতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে তিনি জানান।
ফেনী মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন জানান, এ ধরনের ঘটনায় ১২ জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, দেশব্যাপী কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। তারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনোখুনি করেছে। ফেনীতে কিশোর গ্যাং যেন গড়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বেশ কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়ছে।
তিনি আরো বলেন, দুই-তিন কিংবা চারজন মোটর সাইকেলে মহড়া, রাতে আড্ডা, মাদকাসক্ত, স্কুল পালিয়ে ইভটিজিং করলে তাদের আটক করা হচ্ছে।