শারদীয় উৎসবের দিনগুলোয় ঐতিহ্যবাহী সাজটা তো মানাবে ভালোই। তবে এখন দুনিয়া হাতের মুঠোয়৷ আঙুলের ছোঁয়াতেই স্মার্টফোনের পর্দায় ভেসে ওঠে ফ্যাশন-দুনিয়ার নানা খবর। এ জন্য পূজার সাজপোশাকে তার একটা প্রভাব দেখা যায়। তারপরও ঐতিহ্যের পোশাকগুলোও মাত করবে পুজোর ফ্যাশন—এমনটাই ধারণা ফ্যাশন ডিজাইনারদের।
রাজধানীর ফ্যাশন বাজারে দুর্গাপূজার পোশাক-আশাক এসে গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেল, পোশাকের কাটছাঁট এবং রং-নকশায় আন্তর্জাতিক ফ্যাশনধারার প্রভাবটা রয়েছে। পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে দুই ঈদ ও পূজা অনেকটা কাছাকাছি সময়েই হয়ে আসছে৷ সে জন্য চলতি বছরের ঈদের ফ্যাশনধারাটা বজায় থাকছে পূজার উৎসবে। এমনটাই জানালেন আড়ং, মায়াসীর, অঞ্জনস, দেশালসহ বেশ কিছু ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনার ও পোশাক বিক্রেতারা৷ আর তাই তো কামিজের সঙ্গে লম্বা কোটি, ঘের দেওয়া পালাজ্জো, স্কার্টের সঙ্গে কামিজ দেখা যাচ্ছে। আবার রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনি চকের দোকান থেকে শুরু করে ফ্যাশন হাউসগুলো শাড়ির সঙ্গে কোট বা কেইপকে একটু দেশীয় ঢঙে উপস্থাপন করেছে।
এদিকে কলকাতার সব উৎসবকে ছাপিয়ে যায় শারদীয় দুর্গোৎসব৷ সেখানকার অনলাইন এবং পূজাসংখ্যাগুলোতে চলছে এই বছরের পূজার ট্রেন্ড নিয়ে মাতামাতি৷ একটু চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, ফিউশনধর্মী পোশাকের আধিপত্যটা থাকছে সেখানে৷ জিনসের সঙ্গে জর্জেট বা শিফনের শাড়ি, শাড়ির সঙ্গে কেইপ, এমনকি কামিজের সঙ্গে শাড়ি, হাতাকাটা ফুলেল ছাঁটের কামিজ—এমনটা হবে এবারের ফ্যাশন ট্রেন্ড (সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, এবেলা)৷ ডিজাইনার চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, ‘কলকাতায় সারা বছরের ফ্যাশনধারাটাকে পূজার সময় তুলে ধরা হয়৷ এদিকে আমাদের এখানে পয়লা বৈশাখ বা ঈদুল ফিতরের সময় উঠে আসে ফ্যাশনধারা। সেগুলোর ছাপই পড়ে পূজার বাজারে। পাশাপাশি সামাজিক সংস্কৃতিও একটা বিষয়৷ সে কারণে কলকাতার পূজার ফ্যাশনের প্রভাব এখানে ততটা দেখা যায় না৷ ক্রেতাদের দিক থেকেই গরদ, সিল্ক, জামদানি বা সুতির শাড়ি আর পোশাকের চাহিদাটাই এখানে বেশি থাকে।’
‘পোশাকের নকশায় জমকালো ফিউশন না থাকলেও মোটিফে পূজার নানা অনুষঙ্গের ব্যবহার থাকে এখানে। শারদীয় উৎসবে একটা নিজস্ব ধারা এখানে গড়ে উঠেছে।’ বললেন রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাশ৷ বিভিন্ন সংস্কৃত শব্দ আর বাক্য, স্বস্তিকা, বেলপাতা, চক্রসহ দুর্গাপূজার আরও নানা অনুষঙ্গের ব্যবহারে পোশাকটি গায়ে জড়ালেই ফুটে উঠবে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ৷ দুর্গাপূজা মানেই সারা দিন ঘুরে বেড়ানো। তাই পোশাকে আরামের বিষয়টিকে মাথায় রেখেই পোশাকের কাপড় বেছে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বরঙের ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘সকালে অঞ্জলি দিতে হালকা নকশার সুতি পোশাকটাই বেশি আরাম দেবে৷ বিকেলে ঘুরতে বের হলে অবশ্যই পোশাকে থাকতে হবে রঙের আধিক্য৷ আবার চার দিনজুড়ে নতুন পোশাক না পরা গেলেও একটু বদলেই আনতে পারেন ভিন্নতা৷’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বললেন কামিজটা একই রেখে সালোয়ার আর ওড়নার পরিবর্তনে সাজে আসতে পারে ভিন্নতা। একইভাবে বিভিন্ন প্যাটার্নের ব্লাউজ বা শাড়ি পরার ঢঙে পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
উৎসবের সাজে নতুনত্ব আনতে চান অনেকেই। তবে সেটা বেশি জমকালো যেন না হয়। চোখে যাতে আরাম লাগে সে দিকটা মাথায় রাখার পরামর্শ দিলেন পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান৷ তিনি বললেন, ‘পূজার সময় সারা দিনই যেহেতু বাইরে ঘোরাঘুরি করতে হয়, সে জন্য বেসটা হালকা রাখাই ভালো৷ চোখের মেকআপ গাঢ় করতে পারেন৷ সে সময় ঠোঁটে হালকা রঙের ম্যাট লিপস্টিক ভালো লাগবে৷ এদিকে যাঁরা গাঢ় রঙে ঠোঁট রাঙাতে চান, তাঁরা চোখের পাতায় শুধু কাজল লাগাতে পারেন৷’ তবে মেকআপের চেয়ে পূজার সাজে গয়নাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিলেন নুজহাত খান৷ এই সময় জাঙ্ক বা ফাঙ্কি জুয়েলারি নয়; বরং এথনিক জুয়েলারি পূজার সাজে আনবে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক আমেজ৷
পূজার সাজের ধারা নিয়ে ডিজাইনার শৈবাল সাহা বললেন, ‘একটা সময় ছিল যখন লাল পেড়ে সাদা গরদ বা জামদানিতে সেজে একে অপরের পায়ে আলতা দিয়ে মেতে উঠত পূজার কাজে৷ হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, আলতা-সিঁদুর পবিত্রতার প্রতীক৷ ধারণা করা হয় যে সিঁদুর-আলতার লাল রং আর কাশবনের সাদা—এই থেকেই পূজার পোশাকে এসেছে এই লাল–সাদার আধিক্য।’ প্রতিবছরের মতো এবারও পোশাকে এই দুটি রংকে ভিত্তি করে কমলা, ঘিয়া, নীল, সবুজের মতো রঙের আধিক্য দেখা যাবে। গয়না এবং মেকআপেও থাকবে এসব রং। পূজার সাজ–পোশাকে এই রংগুলোর ব্যবহার অবশ্য এসেছে ফ্যাশনের চলতি ধারা থেকে।