banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 917 বার পঠিত

 

পুরনো ডায়রী


কানিজ ফাতিমা


সকালে হিথ্রো থেকে সরাসরি স্টার্টফোর্ড এ এলাম। পিকাডিলীতে সেন্ট্রাল লাইন ধরে স্টার্টফোর্ডএ পৌছুলাম। দুপুরে রেস্ট নিয়ে বিকালের শেষে বের হলাম এক ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্য, অলগেট ইস্টে।

ক’বছর আগে দেখা লন্ডন যেন একইরকম আছে; ঢাকার মত দ্রুত চেহারা বদলে যায়নি। ২৫ নম্বর বাস ধরে যেতে হবে অলগেটে। পিট পিট বৃষ্টি হচ্ছে , সাথে লন্ডনের বিখ্যাত বা কুখ্যাত বাতাস ঠান্ডাকে আরো কয়েকগুনে কষ্টকর করে তুলেছে। বাস স্টপেজে দাড়িয়ে আছি- আমার সালোয়ার কামিজের উপর গলা তোলা ফুলহাতা সোয়েটার, তার ওপর জিন্সের ওভার কোট, মাথা স্কার্ফে ভালো করে মোড়ানো – তারপরও মনে হচ্ছে ঠান্ডা বাতাস নাক দিয়ে ঢুকে রক্ত হিম করে দিচ্ছে। টেম্পারেচর কত হবে? জানিনা। তবে আরামদায়ক নয় নিশ্চিত। সামনে থেকে একটা মেয়ে যাচ্ছে – পরনে ফুল হাতা টপস, শর্ট স্কার্ট আর দু’পায়ে কালো ফিনফিনে মুজা। প্রায় পুরো পা দু’টোই মোজার ভেতরেও দেখা যাচ্ছে।

এত ঠান্ডায় এত পাতলা মোজা ? আমি উত্সুক হলাম। তবে কি আমার সহ্য শক্তি কম? বোঝার জন্য দাড়িয়ে দাড়িয়ে অন্য সবার পোশাকও লক্ষ্য করাতে শুরু করলাম। এক জোড়া তরুণ তরুনী আসছে। ছেলেটা জ্যাকেট, জিন্সের প্যান্ট ,পায়ে কেডস আর মাথায় হ্যাট পরেছে। মনে হলো তার পোশাকের পুরুত্ব আর আমার পোশাকের পুরুত্ব কাছাকাছি , পরিধিও প্রায় সমান। পাশের মেয়েটি স্লীভ লেস (হাত হীন) আটসাট একটা মাত্র গেঞ্জি পরেছে যা শুরু হয়েছে বুকের মাঝামাঝি থেকে – অর্থাত গলা , কাধ আর অর্ধেক বুক উন্মুক্ত- শীতে আমার শরীরে কাপুনী লাগলো যেন।

বাস এসে গেছে- বাসে উঠে আবারও পর্যবেক্ষণ শুরু করলাম। একটা কালো মেয়ে আমার সামনে – উপরের পাতলা জামাটা নাভীর দুই ইঞ্চি উপরে শেষ হয়েছে আর জিন্সের প্যান্টটা শুরু হয়েছে কোমরের দুই ইঞ্চি নীচে। উত্সুক দৃষ্টি আরো প্রশস্ত করলাম – মাথা ঘুরিয়ে আমার শেষ বিকেলের সব সহযাত্রীকে দেখার চেষ্টা করছি। প্রায় প্রতিটা মেয়েরই পোশাকের অবস্থা একই রকম- হয় পা জোড়া খোলা নয়তো কাধ আর বুকের উপরের অংশ।অন্যদিকে প্রায় প্রতিটা ছেলেই টিশার্টএর উপরে জ্যাকেট পরেছে, নীচে ফুলপ্যান্ট আর কেডস বা জুতা। এই আবহাওয়াকে আমি যেভাবে নিয়েছি লন্ডনের তরুণ ছেলেরাও সেভাবে নিয়েছে। কিন্তু মেয়েরা নিজের প্রায় অর্ধেক শরীর উন্মুক্ত রেখেছে আর ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে।

আমি আর ছেলেরা আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পড়েছি – নিজেদের সুবিধা আর আরাম খুঁজে নিয়েছি। মেয়েগুলো কেন কষ্ট করছে? মেয়ে গুলো কি ফ্যাশনের কাছে অসহায় ? ঠান্ডায় নিজের শরীর-মন যা চাইছে সেটুকু করার স্বাধীনতা থেকেও বঞ্চিত?

কে স্বাধীন? আমি নাকি ওই মেয়েরা – যারা বাধ্য হচ্ছে এই ঠান্ডার মধ্যেও পরুষের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য নিজেদের শরীর খোলা রাখছে? ওদের পরাধীনতা কার কাছে, কিসের কাছে?

Facebook Comments