banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 557 বার পঠিত

পুত্রবধুর গায়ের রঙ কালো আর তাই লাশ হতে হলো ছেলেকে!

গায়ের রং কালো হওয়ায় পুত্রবধূ রুপালীকে মেনে নিতে পারেননি শ্বশুর আমিনুল ইসলাম (৫০)। তিনি ছেলে রায়হানকে চাপ দেন রুপালীকে তালাক দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাবার আদেশ অমান্য করে রায়হান কালো স্ত্রীকে নিয়েই সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব। একপর্যায়ে স্ত্রীকে নিয়ে ঘর ছাড়েন ছেলে রায়হান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরিবারের অভিযোগ, কালো স্ত্রী নিয়ে সংসার করার কারণে শেষ পর্যন্ত বাবার হাতে খুন হয়েছেন রায়হান (২৮)।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের সোডাপীর নয়াপাড়া গ্রামে ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা। ছেলে রায়হানকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় অন্য দুই ছেলে তাঁকে আটক করে পুলিশে দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলহাজতে পাঠায়। নিহত রায়হানের দুই মাস বয়সী একটি পূত্রসন্তান রয়েছে।

ছেলে হত্যায় অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামের সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। মাঝে মধ্যে তিনি কৃষিকাজ করেন বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, আমিনুল অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত। তিনি সড়ক-ডাকাতদের একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনি নেশা করেন। তবে এ ব্যাপারে আমিনুলের ছেলেরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, একই জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের আটুরিয়া গ্রামের রুপালীকে বিয়ে করেন রায়হান। বিয়ের পর রুপালীকে বাড়িতে নিয়ে এসে আমিনুল ইসলাম দেখেন ছেলের বউয়ের গায়ের রং অনেক কালো। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে রুপালীকে তালাক দেওয়ার জন্য ছেলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন আমিনুল। কিন্তু রায়হান তাঁর বাবার নির্দেশ শোনেননি। একপর্যায়ে তাঁদের ওপর নেমে আসে নানা অত্যাচার। পারিবারিকভাবে নির্যাতন সইতে না পেরে রায়হান স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর স্ত্রী রুপালীকে নিয়ে ঢাকায় পোশাক শ্রমিকের কাজ নেন রায়হান। দীর্ঘদিন রায়হানের সঙ্গে তাঁর বাবা আমিনুল ইসলামের যোগাযোগ ছিল না।

জানা গেছে, দুই মাস আগে রুপালীর পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। রুপালী সন্তান নিয়ে মিঠাপুকুরের আটুরিয়ায় বাবার বাড়ি আসেন। গত বুধবার তাঁদের ঢাকায় চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু রায়হানের মা রেহানা বেগম নাতিকে এক নজর দেখার জন্য রায়হানকে ডেকে আনেন। গত মঙ্গলবার নিজ বাড়ির টানে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে আসেন রায়হান। বুধবার জামায়াতের ডাকা হরতালে তাঁরা আটকা পড়েন। আর ওই রাতই রায়হানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ওই দিন রায়হান তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে বাবার বাড়িতে নিয়ে এলে বাবা আমিনুল উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কেন কালো বউকে বাড়িতে আনা হলো এ নিয়ে বাবা-ছেলের কথাকাটাকাটি হয়।

রায়হান বলেন, ‘কালো হলেও আমার স্ত্রী। আমি ওর সঙ্গেই সংসার করব।’ এ নিয়ে উত্তেজিত হয়ে আমিনুল ঘরে রাখা ধারালো ছুরি নিয়ে রায়হানকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। একপর্যায়ে আমিনুল ছেলে রায়হানের বুকে ছুরি বসিয়ে দেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান রায়হান। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে আমিনুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাঁর অন্য দুই ছেলে লিমন ও রাকিব ঘাতক বাবা আমিনুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে দেন।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, রায়হানের স্ত্রী রুপালী বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সুত্র- কালের কন্ঠ।

Facebook Comments