banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 662 বার পঠিত

 

পরীদের জন্য ভালবাসা

ডা.সাকলায়েন রাসেল


পরীটা আজ সারাদিন মনের কোণে ঘুরঘুর করছে।
ক্লাশ ফোরে পড়ে।
মাথায় ক্লিপ দিয়ে চুলগুলো পরিপাটি সাজানো…হাতে মেহেদী! এই মেহেদী নকশাটি তার নিজের করা..।পড়তে ভালোবাসে সে…। ভাল লাগে গান গাইতে! একটুস খানি অনুরোধ করতেই গান গেয়ে শোনাল।

‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’

বাংলা সিনেমার গান…ভালোবাসা পেতে সাধনা লাগে..। অথচ এই পরীটার চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা..একেবারর অজপাড়া গাঁয়ে বাড়ী হলেও কথায় শুদ্ধ বাংলার উপস্থিতি.. অল্পতেই আমার সবটুকু মন জয় করে নিল।
চোখ বন্ধ করেই গান শুনছিলাম ..কিন্তু হঠাৎ থেমে গেল পরী..গানের মাঝে শ্বাসকষ্ট! দম আটকে যাচ্ছে তার! পরী থেমে গেল। কিছুক্ষণ বসে বসে বিশ্রাম নিল! তারপর দম ফিরে এলো তার!
খুব খেলতে ভাল লাগে পরীর। সবাই যখন খেলে সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।
আফসোস হয়…
চোখ জলে ভিজে যায়!
খেলতে পারে না সে…খেলতে গেলেই তীব্র শ্বাসকষ্ট! হাত পা নীল হয়ে যায়…দম আটকে চোখ উল্টে যায়!

হার্টের ডাক্তাররা ইকো করে বলে দিয়েছে…তিনটি ছিদ্র আছে তার হার্টে..TOF! অপারেশনই একমাত্র সমাধান..অনেক ঝুঁকি!

হোক ঝুঁকি তবুও বাঁচতে চায় পরী।
বাবা সবজী বিক্রেতা।

ইতোমধ্যে গরু বিক্রি করেছেন..বাড়ীভিটে বন্দক রেখেছেন! তবুও যোগাড় হয়নি অপারেশনের টাকা!
পরীকে যখন জিজ্ঞেস করলাম…তুমি কি চাও?
পরীর হৃদয় চিরে বের হওয়া উত্তর…আমি সুস্থ হতে চাই!
-সুস্থ হতে অনেক টাকা লাগে…তোমার বাবার কি এত্তো টাকা আছে?
থেমে গেল পরী..মাথা নীচু করে অশ্রু মাখা মুখটা লুকালো!

একটু খানি আশ্বাস দিতেই ফিক করে হেসে উঠল..দাঁতের পিছনে দেখা গেল নীল জিহ্বাটা। হাসতেও যে পরী অক্সিজেনের অভাবে ভোগে!!
কপাল দোষে না হয় অর্থের অভাব হোক। কিন্তু বাতাসে এত্তো অক্সিজেন… তবুও কেন সেই অক্সিজেনের অভাবে ভোগে পরীরা?

শত কোলাহলের মাঝে হয়ত সেকারণেই নীরবতা আঁকড়ে ধরে। পরীদের পিতাদের.. আরিজের পিতাদের!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

Facebook Comments