banner

শনিবার, ০৭ Jun ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 369 বার পঠিত

ন্যায্য মজুরি বঞ্চিত নারী শ্রমিকরা

 

 

4_125584

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম:‍ খেজুরডাঙ্গার শাহিদা খাতুনের স্বামী নিয়ামত আলী গ্রামপুলিশে চাকরি করেন। দুই মেয়ের মধ্যে লিপিয়া দশম ও পাপিয়া পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে। পাঁচ বছর ধরে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে শাহিদা কাজ করেন সুন্দরবন টেক্সটাইলে। ভিটাবাড়ির দুই কাঠা জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। ন্যায্য মজুরি পান না এ ব্যাপারে মালিক পক্ষকে কিছু বলেন না জানতে চাইলে শাহিদা খাতুন বলেন, পরিবারের এতগুলো মানুষের মুখের ভাত জোগানো কি চাট্টিখানি কথা। নিরুপায় হয়ে এখানে কাজ করি। রাতে কাজ করলে আরও ১০ টাকা বেশি পাই। তবে এখানে চাকরির নিশ্চয়তা আছে, নিরাপত্তা আছে।

 

পুরাতন সাতক্ষীরার আঞ্জুয়ারা বেগম এখানে কাজ করে ১৯ বছরের প্রতিবন্ধী মেয়ে নাজমুন নাহারকে বড় করে তুলেছেন। আরেক মেয়ে তাজমিরা ও দুই ছেলে মাহমুদ ফিরোজ ও ইমরান কলেজ ও কামিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। স্বামী ওসমান তরফদার ভ্যান চালান। পাঁচ বছর ধরে মিলশ্রমিকের চাকরি করেন। আঞ্জুয়ারা বলেন, এখানে সম্মান আছে কিন্তু ন্যায্য মজুরি নেই। কোনো কাজ নেই বলে বেছে নিয়েছি সুন্দরবন বস্ত্রকলের এই চাকরি। ভিটেবাড়ি বলতে সামান্য জমি আছে।

 

১৪ বছর ধরে দৈনিক টানা ৮ ঘণ্টা কাজ করেন সখিনা খাতুন। মজুরি পান ১১০ টাকা। স্বামী মোসলেম সরদার দিনমজুর। দুই ছেলে শাজাহান ও সুজন তারাও কাজ করে মাঠেঘাটে।

 

সখিনা জানান, এতগুলো মানুষের মুখের গ্রাস তুলে দিতে স্বামী-সন্তান সবাই মিলে কাজ করেও টেনে উঠতে পারছেন না। অভাবের কারণে মিলে এসেছেন। এই চুক্তিতে কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে তাদের।
শহরের কাটিয়ায় ভাড়া বাড়িতে কাজের জন্য থাকেন হাসিনা খাতুন। হাসিনার দিনপ্রতি আয় ১১০ টাকা আর ভ্যানচালক দিনমজুর স্বামীর কোনো দিন আয় ১০০ টাকা কোনো দিন কম অথবা বেশি। নিজের জমি বলতে কিছুই নেই হাসিনার। কাজের খোঁজে সাতক্ষীরায় এসে সুন্দরবন বস্ত্রকলে চাকরি নেন তিনি। সংসারে অভাব লেগেই থাকে। অসুখ-বিসুখ তো আছেই। এভাবেই কাটে আট বছর। হাসিনা বলেন, বস্ত্রকলে কাজ করতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনায় পড়েছি। শাড়ি, ওড়না অনেক সময় মেশিনে পেঁচিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছি।

 

সাতক্ষীরার অদূরে নলকূড়া গ্রামের দুই কাঠা জমিতে মনোয়ারার বসতভিটা। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে ছেলে দিনমজুর আর মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। ঘরে স্বামী আবদুল মজিদ ও শাশুড়িও অসুস্থ। সাত বছর ধরে মিলে কাজ করেন মনোয়ারা। মনোয়ারা বলেন, ১১০ টাকায় সংসার চলে না।

 

ইটাগাছার সুচিত্রা মণ্ডল সুন্দরবন বস্ত্রকলে শ্রমিক, স্বামী নির্মল মণ্ডল পৌরসভা, আর ছেলে সমীর মণ্ডল হাসপাতালের সুইপার হিসেবে কাজ করে।

 

সুচিত্রা বলেন, আশাশুনির বলাবাড়িয়ায় শ্বশুরবাড়ি। সেখানে কাজ না থাকায় সাতক্ষীরায় চলে আসি সপরিবারে। মাত্র ১০০ টাকায় দিনমজুর খেটে সংসার চালিয়েও দেড় শতক জমি কিনে ছোট্ট একটি বাড়ি করেছি। কিন্তু এত শ্রম দিয়েও ন্যায্য মজুরি পাই না।

 

সাতক্ষীরার দেবনগরের আকলিমা খাতুন এক ছেলে, এক মেয়ের মা। কালিগঞ্জের শ্বশুরবাড়িতে কোনো সহায় সম্পদ নেই। স্বামী জিল্লুর দিনমজুরি খেটে যা আয় করে তার সঙ্গে নিজেরটা মিলিয়ে বাপের ভিটেতেই রয়েছেন তিনি। আকলিমা বলেন, দৈনিক ১০০ টাকা মজুরিতে কাজ করি। সকাল ৬টায় তিন কিলোমিটার হেঁটে মিলে কাজ করতে আসি। এই মিলে দুই শতাধিক নারী শ্রমিক রয়েছেন। সবার অবস্থায়ই তার মতো। রাষ্ট্রায়ত্ত এই মিলটি বর্তমানে সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে চালু থাকায় তারা সামান্য টাকা মজুরি পান।

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/২৪ জুলাই ২০১৪ই

Facebook Comments