জান্নাতুন নুর দিশা
“আচ্ছা রশীদ, নীরুকে তুই ছেড়ে দিয়েছিলি কেন?”
“আর বলিস না রে, আকাশ! ওমন আত্মভোলা মেয়ের সাথে সংসার করা যায়?”
“তোদের তো প্রেমের বিয়ে ছিলো।”
“তা ছিলো।”
“তবে ছাড়লি কেন ওকে বিয়ের ছ’মাসের মাথায়?”
“অসহ্য লাগছিলো ওকে। সংসারী ছিলো না একদম। ধর অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছি, ও বলতো টংয়ের চা খেতে যাবে। আচ্ছা বল, এসব ভালো লাগে? বাসায় এসে বউয়ের হাতের এক কাপ চা না পেলে?।
“তা বটে!”
“এত রোমান্টিসিজম কোথা থেকে আসতো ওর কে জানে! আমাদের বিয়ের সময়টা ছিলো আষাঢ় মাস। বিয়ের পর প্রায় বৃষ্টি থাকতো। এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে। তাও একা না, আমাকেও ভিজতে হবে। এভাবে প্রতিদিন প্রতিদিন বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলতাম দুজন। ওর এসব অত্যাচার অসহ্য লাগতো।”
“বিয়ের আগেও তো নীরু এমনই ছিলো। তখন অসহ্য লাগতো না?”
“বিয়ের আগের ব্যাপারটা ভিন্ন। বিয়ের পরে তো সংসারী হতে হয় তাই না?”
“সংসারী ছিলো না ও?”
“একদম না। টাকাপয়সা গুছিয়ে রাখতে জানতো না। আমার হাতেই রাখতে হতো সব টাকা। ওর হাতে দিলে তো বেলি ফুলের মালা, আর্ট এক্সিবিশন থেকে ছবি, কবিতার বই এসব কিনে নষ্ট করতো টাকা।”
“সব টাকা নিজের কাছে রাখতি? নীরু কিছু চাইতো না তোর কাছে? কিছু কিনে দিতে বলতো না?”
“বিয়ের পর ছ’মাসে একবার একটা টাঙ্গাইল শাড়ি চেয়েছিলো শুধু। আর ডিভোর্সের আগের দিন বলেছিলো পরদিন যেন কোর্টে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে যাই।”
“গোলাপ হাতে দিয়েই তারপর ডিভোর্স দিয়েছিলি?”
“হ্যাঁ।”
“একটুও কষ্ট হয় নি তোর? নীরু কি কাঁদে নি?”
“আমার একটুও কষ্ট হয় নি। নীরুও কাঁদে নি। ডিভোর্স ও চায় নি। যেদিন রাতে।ওকে জানিয়েছিলাম রুমাকে আমি বিয়ে করবো। সেদিন খুব কেঁদেছিলো। এর পরের একমাস প্রতিটা দিন কেঁদেছে। কিন্তু ডিভোর্সের দিন কাঁদে নি। ডিভোর্স পেপারে সাইন করে গোলাপ গুচ্ছ হাতে নিয়ে চুপচাপ চলে গেছে।”
“ওহ। কি অদ্ভুত মেয়ে তাই না?”
“অদ্ভুত তো বটে! ওকে নিয়ে সংসার করলে দেউলিয়া হতে হতো।”
” তা রুমাকে নিয়ে এখন সুখে আছিস এখন?”
“এখন? রুমাকে নিয়ে?”
“হ্যাঁ?”
“জানি না। নারী জাতি বড় অদ্ভুত! এদের কিছু দিয়েই খুশী করা যায় না রে।”
“নীরু তো কিছু না পেলেও খুশী ছিলো। সে কি নারী ছিলো না রশীদ?”
“এসব বাদ দে, আকাশ।”
“ভয় হয় এসব প্রশ্নে? উত্তর খুঁজে পাস না?”
“বিদেশ থেকে এত বছর পর এসেছিস বন্ধুর খবর নিতে না জেরা করতে?”
“না রে, আমার বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছি। এই নে কার্ড। আগামী শুক্রবার বিয়ে। আসবি রুমা ভাবীকে নিয়ে। আসি রে।”
***
“কী ব্যাপার রশীদ? ফিরতে এত দেরী হলো?”
“অফিসে আকাশ এসেছিলো। আমার বন্ধু। ওর বিয়ের দাওয়াত দিতে।”
“ওহ। এরকম মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছো কেন?”
“মাথা ধরেছে রুমা।”
“আচ্ছা দাঁড়াও আমি চা আনছি। আর শোনো, পাশের বাসার ওরা একটা ফ্রিজ কিনেছে জানো? চৌত্রিশ হাজার টাকা দাম পড়েছে। ফ্রিজটা আমার পছন্দ হয়েছে। কাল কিনতে যাবো। যদিও ফ্রিজ একটা আছে। বাট মডেল পুরনো।”
“রুমা, আমার মাথা ধরেছে।”
“হ্যাঁ, আমি চা আনছি। ফ্ল্যাটের বুকিং দিয়েছো রশীদ? প্রথম কিস্তি কত দিলে? ভাড়া ঘরে আর কতদিন? স্ট্যাটাস তো যায় যায়।”
“রুমা, আমার মাথা ধরেছে।”
“হ্যাঁ যাচ্ছি চা আনতে। আচ্ছা তোমার বন্ধু আকাশ তো বিলেত ফেরত তাই না? ওনার বিয়েতে পড়ার জন্য আমাকে একটা দামী শাড়ি কিনে দিও তো। মোটামুটি সাত-আট হাজার টাকার। স্ট্যাটাস মেইনটেইনের তো ব্যাপার আছে। আচ্ছা ওনার হবু ওয়াইফের কথা কিছু বলেছে? কী করে উনি?
“নীরু! নীরু!”
“নীরু? নীরু মানে? তুমি এখনো তোমার আগের বউকে ভুলতে পারো নি তাই না? তার নাম জপ করছো?”
“আকাশের হবু স্ত্রীর নাম নীরু! রুমা, আমার মাথা ধরেছে। যাও এখান থেকে।”
“আচ্ছা যাই টিভিতে আমার প্রিয় নাটক শুরু হয়ে গেছে। তোমাকে আধা ঘন্টা পর চা দিচ্ছি।”
রশীদ এখনো অস্ফুট স্বরে ডেকে যাচ্ছে, “নীরু! নীরু! নীরু!”