banner

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 869 বার পঠিত

 

নির্যাতিত নারী, শিশুদের সেবায় ওসিসি


নারী সংবাদ


দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। সমাজে নারী-পুরুষ সমানাধিকার ভোগ করার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা সেটা ভোগ করতে পারছেনা। হচ্ছে নানাভাবে নির্যাতিত। নারীদের পাশাপাশি শিশুরাও বিভিন্নভাবে হচ্ছে নির্যাতিত। শিশুরাও হচ্ছে মানুষরূপী পিশাচদের লালসার শিকার। সরকোরের স্বদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় আর্থিক সংকট কিংবা নানাবিধ কারণে সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতন থামানো যাচ্ছেনা। তবে নির্যাতিত এ সব নারী ও শিশুদের সাহায্যার্থে সরকার গঠন করেছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)। যেখানে সমাজের নির্যাতিত নারী ও শিশুরা সেবা পেয়ে থাকে।
দেশে অনেক জায়গায়ই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। যেমন সিলেটের ঝুমকা (ছদ্ম নাম)। বয়স মাত্র আট বছর। এই আট বছর বয়সী এই শিশু ঝুমকাকে ধর্ষণ করেছে তারই গৃহ শিক্ষক নামের নরপশু তেইশ বছর বয়সী কাউসার। সকাল বেলা নাস্তা দিতে গিয়ে কাউসারের ধর্ষণের শিকার হয় ঝুমকা। পরে ঝুমকা তার মাকে সব ঘটনা জানালে তার মা জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম কাউসারকে গ্রেফতার করে।
বর্তমানে ঝুমকা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। ঝুমকার মায়ের একটাই দাবী-দোষী কাউসারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
২০১১ সালের ৫ আগস্ট রাহেলার সাথে ৪৫,০০০ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় আকমলের সাথে। বিয়ের সময় মেয়ে জামাইকে নগদ ৩০,০০০ টাকাসহ ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্র যৌতুক দেয় রাহেলার বাবা। দু’জনই ঢাকায় গার্মেন্টস কর্মী। প্রথম সন্তানের জন্মের পর রাহেলা চাকরী ছেড়ে দেয় এবং পরে আকমল তাকে সন্তানসহ বাড়ী পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু কয়েক মাস পরই আকমল ব্যবসা করার জন্য রাহলোর বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবী করে। কিন্তু রাহেলার গরীব বাবা টাকা দিতে না পারায় আকমল আর তার মা মিলে শুরু করে রাহেলার উপর অমানুষিক শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রাহেলা মামলা করে স্বামীর বিরুদ্ধে। এরপর তার দুই মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ী চলে আসে রাহেলা। এরই মধ্যে রাহেলার অনুপস্থিতিতে আরেকটি বিয়ে করে আকমল।
এ ঘটনা জানতে পেরে আকমল আবার তার স্বামীর গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে জানতে চায়। এ সময় আকমল তাকে এক লাখ টাকা নিয়ে আসলে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিবে বলে জানায়। কিন্তু রাহেলা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকমল আর শাশুড়ি তার উপর আবার শুরু করে নির্যাতন। এসময় তার আর্তচিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে এবং তার ভাইকে খবর দেয়। ভাই এসে রাহেলাকে উদ্ধার করে এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের ওসিসি বিভাগে ভর্তি করে।
পরে রাহেলা স্থানীয় এক থানায় স্বামী আকমলের বিরুদ্ধে আরো একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন হলেও অভিযুক্ত আসামী পলাতক রয়েছে।
এ পর্যন্ত সাতটি বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে এবং ফরিদপুরে ওসিসি স্থাপন করা হয়েছে। ‘মাল্টি সেক্টোরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োল্যান্স এগেইনস্ট ওমেন’ এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এইসব সেন্টারে মূলত মহিলা ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানসহ আইনি ও পুলিশি সহায়তা, ডিএনএ পরীক্ষা, মানসিক কাউন্সেলিং, আশ্রয় এবং সমাজে পুনর্বাসনের সহায়তা প্রদান করা হয়।
প্রকল্পটি বাংলাদেশ এবং ডেনমার্কের সরকারের সহযোগিতায় মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জাতীয় ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার চালু করেছে যার মাধ্যমে নিপীড়িত নারীদের কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়।
যেসব নারীরা হতাশার মধ্যে ভুগছে অথবা আত্মহত্যা করতে চাইছে, উদ্বিগ্ন অথবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সেসব নারীরা এখান হতে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারেন।
এছাড়াও যেসব মহিলা ও শিশু যারা নির্যাতনের শিকার তাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার লক্ষ্যে সরকার চালু করেছেন জাতীয় হেল্প সেন্টার। নির্যাতনের শিকার এসব নারী ও শিশুরা সরাসরি টোল ফ্রি ১০৯২১ এই নাম্বারে কল করে যেকোন ধরনের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
ওসিসি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সমন্বয়ক ড. বিলকিস বেগম বলেন ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে অনেক নারী এবং শিশু এই সেন্টার হতে সেবা গ্রহণ করেছেন। তাদের অধিকাংশই এসেছেন তাদের কোন না কোন অত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে। এদের অনেকেই পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে চাইত না ভয়ে।
তিনি বলেন, মহিলা ও শিশুদের সেবা দিতে সরকার সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৬০টি ওসিসি স্থাপন করেছে। যার মধ্যে ৪০ টি জেলা সদর হাসপাতালে এবং বাকী ২০ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
তিনি বলেন, ওসিসি সেলের কার্যক্রম চালু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। আর ওএসসি সেল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী ও শিশুদের দ্রুত বিচার পেতে সহযোগিতা করে। এছাড়াও যেসব নারী ও শিশু শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার, যৌন নির্যাতনের শিকার, অগ্নিদগ্ধ এবং এসিড নিক্ষেপের শিকার হওয়াদের নিয়ে কাজ করে ওসিসি সেল।
ওসিস’র প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, অধিকাংশ নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন মূলত পরিবারে অশান্তি, পূর্ব শত্রুতা, জমি-জমা বিরোধ এবং যৌতুকের কারণে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/০৯২০/আহো/-ওজি

Facebook Comments