ঢাকায় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন দুই সন্তানের মা আফসানা রহমান (ছদ্ম নাম)। তাঁর স্বামীও চাকরিজীবী। বড় ছেলে অরিনের বয়স সাত বছর আর ছোট অর্ণবের দুই চলছে। অফিসের কাজে মাঝেমধ্যেই তাঁকে দু-তিন দিন বা এক সপ্তাহের জন্য যেতে হয় ঢাকার বাইরে। ঘর-সন্তান সবকিছুর ব্যবস্থাপনা করে আফসানা বাইরে যান।
আফসানা বললেন, ‘আমার স্বামী সব সময় এ বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করেন। তবে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এটা খুব একটা পছন্দ করেন না।’ আফসানা বলেন, ‘যে কদিন থাকি না, আমার স্বামী প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে বাচ্চাদের গোসল করিয়ে খাইয়ে দেন, স্কুলে নিয়ে যান, আবার ছোট ছেলেকে পরে কী খাওয়াতে হবে, সে বিষয়ে আমার মাকে পরামর্শ দিয়ে যান। ঢাকার বাইরে গেলে আমার মাকে বাসায় এনে রেখে যাই। কারণ ওদের বাবা যতক্ষণ অফিসে থাকবেন, ততক্ষণ আমার ছোট বাচ্চাকে দেখভাল করা, বড় ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে আসা—এসব মা করে দেন।’
অফিসের কাজে প্রায়ই বাইরে যেতে হয়, এমন নারীদের স্বামীরা সহজভাবে যেমন মেনে নেন, আবার কোনো কোনো পরিবারে এ নিয়ে সমস্যার সৃষ্টিও হয়। ‘বিয়ের আগেই স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে একটা বোঝাপড়া থাকা দরকার। যেহেতু চাকরিজীবী, তাই অফিসের প্রয়োজনে দুজনকেই ট্যুরে যেতে হতে পারে। দুজনেরই উচিত আলাপ করে সে রকম মানসিকতা আগে থেকেই তৈরি করে রাখা। বিয়ের পরে সংসার, বাচ্চা রেখে ট্যুরে যাওয়া যাবে না—এসব বিষয় নিয়ে মন-কষাকষি কিংবা সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। তাই বিয়ের আগে কিংবা বিয়ের পরই এ বিষয়ে দুজনকে পরিষ্কার থাকতে হবে। অফিসের কাজে বাইরে গেলে স্বামীর সহযোগিতা একজন নারীর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার।’ বলছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া। অফিসের প্রয়োজনে কর্মস্থলের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঘরের প্রতিটি বিষয় গুছিয়ে রেখে যেতে হবে। নিজেকেও গুছিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে পরিবারের বড় কাউকে কিংবা মুরব্বি কাউকে বাসায় এনে রাখা যেতে পারে, যে কয় দিনের জন্য বাসার বাইরে থাকবেন তিনি—এমনই পরামর্শ রীনাত ফওজিয়ার।
নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে
অল্প কিছুদিনের জন্য কর্মস্থলের বাইরে গেলে বাক্সপেটরা যেন ভারী না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছোট ট্রলিব্যাগ হলে সেটি বহন করা সুবিধা।
ব্যাগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কী কী নেবেন, সেসবের একটা তালিকা আগে করে নেওয়া ভালো। টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, পাউডার, হালকা কসমেটিকস, লিপস্টিক, আয়না, টিস্যু পেপার, সানস্ক্রিন লোশন ইত্যাদি জিনিস নিয়ে যেতে হবে; আবার ফেরার সময় তালিকা ধরে সবকিছু নিয়ে আসা যাবে।
দু-তিন দিনের জন্য বাইরে গেলে দু-তিন সেট পোশাক, রাতের পোশাক নেওয়া যেতে পারে। আবার সাত দিনের জন্য সাত সেট পোশাক লাগবে তেমন নয়। চার সেট পোশাক নিলেই চলে।
সাধারণত ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে সে কোন পোশাক পরবে না-পরবে; যেমন জিনস, প্যান্ট, কুর্তা, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ। পোশাক পরার মধ্যে সে যেটা বেশি আরামদায়ক মনে করে, সেটা সঙ্গে করে নেবেন।
যাওয়ার আগে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কিছু সাধারণ অসুখের ওষুধ সম্পর্কে পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যেমন: জ্বর, ব্যথা, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, মাথাব্যথা, টনসিলের ইনফেকশন—এসব অসুখের ওষুধ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত। আর যদি কোনো ওষুধ নিয়মিত খেতে হয়, তবে সেটা দিন গুনে হিসাবমতো নিয়ে যেতে হবে।
ঘর গুছিয়ে রেখে যাওয়া
বাইরে যাওয়ার আগে কয়েক দিনের জন্য কিছু খাবার রান্না করে ছোট ছোট বাক্সে রেফ্রিজারেটরে রেখে যাওয়া ভালো। স্বামী বা বড় কাউকে বুঝিয়ে দেওয়া কখন কোন খাবারটা কোন বেলায় পরিবেশন করবে। একেকটা বাক্সে একবেলার পরিমাণ খাবার রান্না করে রেখে দিলে পরে খাবারটা গরম করে নিলেই চলে। বড় পাত্রে একবারের বেশি খাবার রান্না করে ফ্রিজে রাখা যাবে না।
দু-তিন বছরের ছোট বাচ্চাদের ধরে ধরে খাওয়াতে হয়। মায়ের অনুপস্থিতিতে বাবা কিংবা বাড়িতে বড় যিনি থাকবেন, তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে কোন খাবার কী পরিমাণে কখন বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে ট্যুরে যাওয়ার আগের দিন একটা নির্দেশনা লিখে দেয়ালে বা ফ্রিজের গায়ে টাঙিয়ে দিলে ভালো হয়।
বাচ্চার বাবাকে তার দিকে অতিরিক্ত মনোযোগী হতে হবে। প্রয়োজনে বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে হবে।
গৃহকর্মী থাকলে তাকে রুটিন ধরে প্রতিদিনের কাজ করার কথা বলে যেতে হবে। বাড়তি কাজ যেন না করে।
প্রতিদিনের কাপড়-চোপড়, মোজা, রুমাল প্রতিদিন ধুয়ে আলমারিতে যার যার তাকে গুছিয়ে রাখতে হবে, যেন পরের দিন খুঁজলে সহজে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে স্বামীকে জানিয়ে রাখা যেতে পারে।
স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের পড়ালেখার ব্যাপারে মায়ের অবর্তমানে বাবাকে দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষক থাকলে তাঁকে বলে যাওয়া এবং পড়ালেখার দিকে খেয়াল রাখা। বাচ্চাকেও বলতে হবে বাড়ির কাজ দিনেরটা দিনে শেষ করে ফেলতে হবে।