দিনাজপুর শহরের ইকবাল হাই স্কুল মোড়সংলগ্ন চারতলা ভবনের দোতলায় একটি সাইনবোর্ড: ‘আইটি সলিউশন দিনাজপুর লিমিটেড’। নিচতলায় দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চলছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং আর ওয়েবসাইট তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার তরুণ-তরুণীরা। ইন্টারনেট থেকে খুঁজে আনা নানা ধরনের কাজ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তাঁরা।
প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন ২৮ বছর বয়সী নাহিদা পারভীন। জেলা শহরে তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিং কাজে একজন ব্যস্ত পেশাজীবী হতে পারলেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু নাহিদা তাতে সন্তুষ্ট থাকেননি। নিজে গড়ে তুলেছেন মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার তৈরির কারখানা।
১৭ নভেম্বর আলাপচারিতায় নাহিদা পারভীন বললেন, ২০১২ সালে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জনের পর নানা কারণে তাঁর পড়ালেখা করা হয়ে ওঠেনি। বাড়িতে নিজের কম্পিউটার ছিল। ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে ২০১১ সাল থেকে শুরু করেন আউটসোর্সিংয়ের কাজ। ডেটা এন্ট্রি দিয়ে শুরু। এরপর ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট শেখেন। তখনই মনে হয়, এ দিয়ে সমাজের শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণী, বিশেষ করে নারীর আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
কিন্তু শুরু করতে গিয়ে হোঁচট খান। কে দেবে টাকা? নিজের গয়না বন্ধক রেখে ৬০ হাজার টাকা ঋণ করেন স্থানীয় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। দুটি কম্পিউটার দিয়ে প্রথম মাসে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে বেশ ভালো আয় হয়। এরপর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি নাহিদা পারভীনকে।
নাহিদা পারভীন নিজে তথ্যপ্রযুক্তির ছাত্রী নন, তবু এ খাতের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। নিজেই গড়ে নেন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ। তাঁর প্রতিষ্ঠান বর্তমানে দুটি কাজ করছে। একটি আউটসোর্সিং এবং অপরটি প্রশিক্ষণ। তিনি বলেন, শুধু বাইরের গ্রাহকদের ওপর নির্ভরশীল না থেকে তিনি স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করছেন।
নাহিদা পারভীন জানান, আইটি সলিউশনের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনার পাশাপাশি প্রতি মাসে জেলা প্রশাসকের সহায়তায় একটি করে কর্মশালার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কর্মশালাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রোগ্রামিং আড্ডা’। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ওপর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকেরা অংশ নেন।
প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেই সব বিষয়ে আউটসোর্সিংয়ের প্রচুর কাজ আসে। সেই কাজগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে করা হয় বলে নাহিদা পারভীন জানান।
বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের আওতায় স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসূচিগুলোর অংশীদার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পায় আইটি সলিউশন। ২০১৪ সালে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক থেকে স্বীকৃতি অর্জন করেন নাহিদা।
গত তিন বছরে আইটি সলিউশন থেকে হাজারখানেক শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে বেরিয়ে নিজেরাই আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে। ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ উন্নত মানের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে নাহিদার।