banner

রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 12 বার পঠিত

 

নারী” মানে শুধুই জন্মগত নারী—যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—সমতা আইনের আওতায় “নারী” বলতে শুধুমাত্র জৈবিক অর্থে জন্মগত নারীকেই বোঝানো হবে। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত নারীরা এই সংজ্ঞার আওতায় আসবেন না। সুপ্রিম কোর্টের এই সর্বসম্মত রায় যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে লিঙ্গভিত্তিক অধিকার প্রয়োগে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

স্কটল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের ব্যাখ্যার প্রশ্নে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ‘ফর উইমেন স্কটল্যান্ড’ নামক নারী অধিকার সংস্থা। তাদের যুক্তি ছিল, কেবল জন্মগত নারীদেরই লিঙ্গভিত্তিক সুরক্ষাগুলো প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এই প্রসঙ্গে আদালতের কাছে প্রশ্ন ছিল—২০১০ সালের সমতা আইনে “নারী” ও “লিঙ্গ” শব্দগুলো দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? এটি কি জন্মগত লিঙ্গ, নাকি ২০০৪ সালের জেন্ডার রিকগনিশন আইনে (Gender Recognition Act) উল্লিখিত GRC (Gender Recognition Certificate) সনদধারীদের নতুন লিঙ্গ পরিচয়?

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লর্ড হজ রায় ঘোষণার সময় বলেন, “আইনে ‘নারী’ ও ‘লিঙ্গ’ শব্দগুলো কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, সেটিই ছিল আমাদের মূল কাজ।” তিনি জানান, আদালতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১০ সালের সমতা আইনে ‘নারী’ বলতে বোঝানো হয়েছে জৈবিক নারী, এবং ‘লিঙ্গ’ বলতে বোঝানো হয়েছে জন্মগত জৈবিক লিঙ্গ।

তবে তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করে বলেন, এই রায় যেন সমাজের এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীর বিজয় হিসেবে দেখা না হয়। বরং এটি কেবল একটি আইনি সংজ্ঞার বিষয়। লর্ড হজ বলেন, “এই রায় ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারকে হ্রাস করছে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানি থেকেও আইন সুরক্ষা দিয়ে থাকে।”

Gender Recognition Certificate (GRC) যুক্তরাজ্যে একটি আইনি দলিল, যা কাউকে তার বর্তমান লিঙ্গ পরিচয় অনুযায়ী স্বীকৃতি দেয়। স্কটল্যান্ড সরকার দাবি করে, GRC থাকা মানেই ব্যক্তি তার নতুন লিঙ্গ অনুযায়ী সব ধরনের সুরক্ষা পাবেন। কিন্তু ফর উইমেন স্কটল্যান্ড পাল্টা যুক্তি দেয়—লিঙ্গ একটি ‘অপরিবর্তনীয় জৈবিক অবস্থা’, যা কোনো আইনি দলিল দিয়ে বদলানো সম্ভব নয়।

রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে ফর উইমেন স্কটল্যান্ড-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সুসান স্মিথ বলেন, “আজ বিচারকেরা যা বলেছেন, তা আমরা সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—যে নারীরা তাঁদের জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে সুরক্ষিত থাকবেন।”
তারা সুপ্রিম কোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে জন্মগত নারীরা এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন—নারীদের জন্য নির্ধারিত পরিষেবা ও স্থান শুধুমাত্র নারীদের জন্যই সংরক্ষিত থাকবে।

রায় প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি জানান, স্কটিশ সরকার রায়টি মেনে নিয়েছে। তারা এখন আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো—যুক্তরাজ্যে সমতা আইনের প্রয়োগে “নারী” শব্দের সংজ্ঞা এখন কেবল জৈবিক নারীকে বোঝাবে, যদিও ট্রান্সজেন্ডারদের আইনগত সুরক্ষা বজায় থাকবে। এটি একদিকে যেমন জন্মগত নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষার বার্তা দেয়, অন্যদিকে সমাজে লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে আলোচনার দরজা আরও প্রসারিত করে।

Facebook Comments