banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 708 বার পঠিত

 

নারী দিবসে তুলে ধরতে চাই নারী অধিকারের কিছু ভুল ধারণা

নারী দিবসে তুলে ধরতে চাই নারী অধিকারের কিছু ভুল ধারণা


কানিজ ফাতিমা


একসময় সমাজে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে ছেলের বউয়ের দায়িত্ব হলো নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন ভুলে শশুর-শাশুড়ী , দেবর-ননদ, ননদ-জামাই এর সেবা করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষিত মহলে এই ভুল ধারণার অবসান ঘটেছে। এ ধারণাটা অনেকটাই সুস্পষ্ট যে ইসলামে দেবর-ননদ, ননদ জামাই দূরে থাক, স্বয়ং শশুড় -শাশুড়ীর প্রতি নারীর ফরজ কোনো দায়িত্ব নেই। কিন্তু এটুকুই পরিপূর্ন চিত্র না –

ইসলাম শশুড় -শাশুড়ীর প্রতি নারী বা পুরুষের ফরজ কোনো দায়িত্ব দেয়নি -এই কথাটা যেমন সত্যি তেমনি সত্যি ইসলাম বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানকে কিছু দায়িত্ব বাধতামূলক বা ফরজ করেছে। নারী হলে আপনার জন্য আপনার শশুর -শাশুড়ীকে সেবা করা ফরজ নয়, কেবলই মুস্তাহাব; কিন্তু আপনার স্বামীর জন্য তাদের ভরণ-পোষণ ও দেখা-শোনা করা ফরজ । তাই আপনার স্বামীর যেমন হক নেই আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাকে বাধ্য করতে তার বাবা-মায়ের অর্থাৎ আপনার শশুড় -শাশুড়ীর সেবা করার জন্য, তাদের জন্য প্রতিদিন রান্না করার জন্য; তেমনি আপনারও হক নেই আপনার স্বামীকে নানা অজুহাতে বা হুমকি-ধমকি দিয়ে তার বাবা- মায়ের প্রতি তার দ্বায়িত পালনে বাধা দেয়ার। মনে রাখবেন ইসলামে কখনোই এক চোখা নয়।

অনেক সময় অনেক সচেতন স্ত্রী মনে করেন তার স্বামীর জন্য স্ত্রী -সন্তানের ভরণ পোষণ, বিনোদন, শখ সব পূরণ হবার পরে আসবে তার বাবা-মায়ের হকের প্রশ্ন। না, ব্যাপারটা সেরকম নয়। ব্যাপারটা হলো পুরুষ যা আয় করবে তাতে সর্বপ্রথম আনুপাতিক হরে তার স্ত্রী , সন্তান ও বাবা-মায়ের ভরণ পোষণ এর চাহিদা পূরণ হতে হবে। কারো ইনকাম যদি কেবল মাত্র ১০০ টাকাও হয় তবে এই ১০০ টাকা থেকেই এই সবক’টি চাহিদার জন্য টাকা বরাদ্দ হবে। ইনকাম কম তাই সবটাই স্ত্রী-সন্তান এর জন্য খরচ হবে আর বাবা-মা বঞ্চিত হবে – সেটা ইসলামের নিয়ম না। ইসলাম সর্বাবস্থায় ভারসাম্যকে গুরুত্ব দেয়।

আবার দেখা যায় অনেক কৌশলী স্ত্রী ইচ্ছা করে তাদের সংসারের চাহিদাকে হিসাব করে এমনভাবে বাড়িয়ে দেয় যাতে স্বামীর ইনকাম থেকে এরপরে আর কোনো অর্থ উদ্বৃত্ত থাকতে না পারে তার বাবা- মাকে দেবার জন্য। এমন কৌশল শুধু অন্যায়ই নয় – বরং বড় ধরণের জুলুম।

শাশুড়ী কর্তৃক ছেলের বৌ নির্যাতন যেমন নারী অধিকারের লঙ্ঘন তেমনি ছেলের বৌ কতৃক শাশুড়ীর মাতৃত্বের হক নষ্ট করাও নারী অধিকার লঙ্ঘন। স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ী যেতে না দেয়া, বিভন্ন অজুহাতে বাধার সৃষ্টি করা যেমন নারী নির্যাতন তেমনি স্বামীকে তার বাবা-মা, ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলতে না দেয়া, তারা বেড়াতে আসলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব করা যাতে তারা বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয় – সেটাও সুস্পষ্ট নির্যাতন।

জুলুম -নির্যাতন যে পক্ষ থেকেই হোক তা নিন্দনীয়, তা সংসারের ভিত্তিকে ধ্বংস করে। জুলুমকারীকে ভয় পেয়ে তার সঙ্গে কম্প্রোমাইজের নামে জুলুম মেনে নিলে এটি বেড়ে আরও শাখা প্রশাখা ছড়ায়। তাই সাহস ও বুদ্ধি করে জুলুমের সামনে দাঁড়িয়ে সেটা একটু শক্ত হাতে বন্ধ করতে হয়। এতে সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও long run এ কল্যাণ হয়।

সব নারী ভালো থাকুক; সে স্ত্রী, মেয়ে, মা বা বোনই হোক । সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

Facebook Comments