নারী নির্যাতন প্রতিরোধের আন্দোলন কেবল নারীদের নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমাজের শিক্ষিত বিবেকবান সকল মানুষের সামাজিক দায়িত্ব। তাই নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে হবে। যৌতুক, পারিবারিক সহিংসতা ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারীদের প্রতি সকল প্রকার সহিংসতারোধে দেশের তরুণ-যুবসমাজকে সচেতন, বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০১৪ উপলক্ষে এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে নারী নির্যাতন বিরোধী এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরুষ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ (বিএমপি)। ‘নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের বিবেক জাগ্রত হোক’ এ আহবান জানিয়ে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০১৪ পালিত হচ্ছে।
বিএমপির উদ্যোগে গত ২৫ নভেম্বর থেকে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই প্রতীকী পুরুষ সমাবেশ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকার সামাজিক রাজনৈতিক নেতাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সক্রিয় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ যা নারী নির্যাতনের সংস্কৃতিকে সমর্থন করে তা প্রতিরোধ ও নিরোধের লক্ষ্যে জাতীয় নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক গবেষক জনাব মফিদুল হক, এডভোকেট এস এম এ সবুর, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্তলাল সেন, সাবেক ছাত্রনেতা জনাব মাহবুব জামান, মিরপুর থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি দেওয়ান আবদুল মান্নান ও আহমদনগর পাইকপাড়ার আরিফ হোসেন প্রমুখ। সমাবেশে গণসঙ্গীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএমপির ডিরেক্টর লিগ্যাল এডভোকেসি এন্ড লবি এডভোকেট মাকছুদা আখতার। আয়শা খানম বলেন, নারীর বিষয়ে সমাজের পুরুষদের যে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা সেখান থেকে আধুনিক যুক্তিযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্যে সচেতনতার প্রয়োজন। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। সকল ক্ষেত্রে সম অংশগ্রহণের সুযোগ না পেলে এবং নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা বন্ধ না হলে সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারবে না। নারীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, এসিড সন্ত্রাস, যৌতুকের দাবি, পারিবারিক সহিংসতা-এসব প্রতিরোধে যেসব আইন রয়েছে তার বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের ঘোষণায় বলা হয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, বে-আইনী ফতোয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকল নির্যাতন বন্ধে নিরবতা ভেঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নির্মূলের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সচেতনতামূূলক কর্মসূচিতে নারী ও কন্যাশিশুদের যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরুষদেরও যুক্ত করে সাধারণ গণমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
ঘোষণায় আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক সিডও সনদের অনুচ্ছেদ- ২ ও ১৬(১)(গ) -এর উপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এবং ওসিসির কার্যক্রম আরও বিস্তৃতি করতে হবে। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার চালু করার লক্ষ্যে বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এর অবকাঠামো তৈরি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবার থেকে নারী নির্যাতন বিরোধী সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বানও জানানো হয় ঘোষণাপত্রে।