সাধারন মানুষের অসাধারন হয়ে ওঠার পেছনে একটা গল্প থাকে। সেই গল্পের বাঁকে বাঁকে থাকে সংগ্রাম। স্বাধীনচেতা মানুষেরা একটু বেশীই সংগ্রামী হয়। যেখানে সম্ভব নয় সেখানেই তারা বিজয়ের নিশান ওড়ান। কিন্তু সেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে যখন একজন নারী তখন তার পথটা বোধহয় আরও বেশী সংগ্রামের হয়। তেমনই একজন ইফফাত ই ফারিয়া (রঙ)।
নিজে কিছু করবে তেমনটাই ইচ্ছে ছোট থেকে। কিন্তু সেটা ঠিক কি তা নির্দিষ্ট না থাকলেও করতে হবে এতটুকু জানতেন। সারাদিন ফেসবুকিং করতে করতে হটাৎ করে ই-কমার্সের ব্যপারে ঘাটাঘাটি শুরু হয়। যতই জানার পরিধি বাড়তে থাকে ততই এ ব্যবসায়ের প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।
অন্যের কাছে নিজের পোশাক আশাকের প্রশংসা আর ভাল রান্না জানাটাকেই কাজে লাগাতে চাইলেন। এক দিনে ২টা পেজ খুলেন অনলাইনে। একটা ছিলো Pastels, আরেকটি Cookies, cupcakes & cardio. পোশাক আর ডেজার্ট দুটি ভিন্ন আইটেম নিয়ে। আর এর পরবর্তীতে ভাললাগা আর সৃজনশীলতার জায়গা থেকে এখন পর্যন্ত কাজ করছেন পোশাক নিয়ে।
সফলতার দেখা পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু তার পেছনে যে বাধা পেরিয়েছেন তা সত্যিই প্রেরণাদায়ক। প্রথম শুরুটা বাসা থেকেই। পুঁজি মাত্র ৬০০০ টাকা। পেজ খুলেই বেশ কিছু পোশাক আর খাবারের ছবি পেইজে আপলোড দেন। বুঝতে চেষ্টা করেন মানুষ কি চায়। দিন দিন তার পেইজে রেসপন্স বাড়তে থাকে। সেই সাথে জানান দেয় তার গ্রহন যোগ্যতা। পরিধি বাড়াতে একজন লোক আর কাজের জন্য একটি রুমও ভাড়া নেন।
কিন্তু যার মননে আরও বড় কিছু সে কিভাবে একটা রুমের মধ্যে আটকে থাকবে। তার ব্যবসা দিন দিন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তাতে সে সময়ে খুব প্রয়োজন অনুভব করছিলেন একটি শোরুমের। কিন্তু সার্মথ্য যা ছিল তাতে কোন মতেই সম্ভব ছিল না। পরিবার থেকে একমাত্র বাবা ছাড়া আর তেমন কারোও কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। বাবার সহায়তায় ট্রেড লাইসেন্স সহ সরকারি পারমিট নিয়ে হোম বেজড শোরুম দিলেন। সেই সাথে বন্ধু তানভীর অরণ্য, জিহাদ কবি, রাহা চৌধুরি, সারোয়াত বারি, মুবাসসির সাকিব এবং জয় আচার্য হাতে হাতে রাখলেন তার ব্যবসায়ে। দেখতে না দেখতে ব্যবসা পেল নতুন মাত্রা।
শুরু হল প্যাস্টেলস শোরুমের চমক। দেশের গন্ডি পেরিয়ে পাকিস্তান, ভারত, চায়না, থাইল্যান্ড থেকে পোশাক আমদানি। সেই সাথে দেশের বাজারের পাশাপাশি ইসলামাবাদেও প্যাস্টেলস শোরুমের যাত্রা। সাজানো গোছানো ফ্যাক্টরিতে মেশিন আর কর্মী সংখ্যা বর্তমানে আট। কেউ করে কারচুপি, কেউ এম্ব্রয়ডারি, কেউ নকশীকাঁথা। সেই সাথে মাপ মতো কাটা এবং সেলাইয়ের জন্য আছে আলাদা মানুষ। প্যাস্টেলস এর জনপ্রিয়তার নেপথ্যে রয়েছে আপনার পছন্দমত বিয়ের পোশাক সহ যেকোন পোশাক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সল্প মূল্যে তৈরী করে দেওয়ার সুনাম।
যাত্রা পথের এই বাকেঁ সুনাম অজর্নের মধ্যেও বিকৃত মনের মানুষের দ্বারা হ্যাক হয় তার ৬৫০০০ ফলোয়ারের ফেসবুক পেইজ। মুহুর্তেই থমকে যায় তার অনলাইন ব্যবসার গতি। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্রী সে নন। আর তাই পেইজ ফেরত আনার চেষ্টা না করে অদৃশ্যমান এ বিশাল ক্ষতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পেইজ নিয়ে যাত্রা শুরু করে পরমুহুর্ত থেকেই। অফলাইনে ভাল পরিচিতি আর সুনামের কারনে অনলাইনের ধাক্কাটা সেভাবে বুঝতে না পারলেও মেধা দিয়ে হারানো বাজার ফিরে পেতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও সল্প সময়ে তার এ অর্জন সত্যিই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
সংগ্রামী এ নারী উদ্যোক্তা বর্তমানে পড়াশুনা করছেন ইউনিভারসিটি অফ মেলবোর্ন, ফাউন্ডেশন ইয়ার, কেমিকৌশল বিভাগে। অনলাইন আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি বলছিলেন আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, ফ্যাশান ডিজাইনিং এ আমার কোনো জ্ঞান নাই। যেটা ভাল্লাগে করি, বানিয়ে দেখি সবাই পছন্দ করছে।
নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের কি করা উচিত জানতে চেয়েছিলাম তার কাছে। খুব সাচ্ছন্দেই বলে যাচ্ছিলেন নতুনদের জন্য পরামর্শ দেওয়ার তেমন কিছু নাই। শুধু মন যেটা চায় সেটাই মস্তিস্ক দিয়ে উদ্ধার করে সেই কাজটি করে ফেলতে হবে।
মাসুদুর রহমান মাসুদ