banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 659 বার পঠিত

 

নারী আসামিদের জন্য আলাদা হাজত: একটি শুভ উদ্যোগ

একটি খবর পড়ে মনে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। খবরের শিরোনাম হচ্ছে, ‘নারী আসামিদের জন্য আলাদা হাজত’। খবরে বলা হয়েছে, নারী আসামিদের রাখার জন্য আলাদা হাজতখানা করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা। ‘দেয়ালের দিকে নারী আসামির মুখ’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর ২২ মে বিকেলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা হাজতখানা পরিদর্শন করেন। নারীদের আলাদা হাজতখানা না থাকায় তিনি আদালত ভবনের প্রবেশপথের বাঁ পাশে একটি জায়গায় নারী হাজতখানা করতে বলেন।
খবরটি পড়ে আশ্বস্ত হলাম এ কারণে, অবশেষে স্বস্তি আসতে যাচ্ছে নারী আসামিদের জীবনে। তাঁদের হাজতখানায় আর পুরুষ আসামিদের হাতে হেনস্তা হতে হবে না। ঢাকা মহানগর দায়রা জজের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
১৯ মে প্রকাশিত ‘দেয়ালের দিকে নারী আসামির মুখ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে হাজতখানার যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা পড়ে আমি রীতিমতো শিউরে উঠি। ওই প্রতিবেদনে চিত্রিত হয়েছে নারী আসামিদের নিপীড়নের কাহিনি, হাজতে তাঁদের চরম দুর্দশার কথা। শ খানেক পুরুষ আসামির সঙ্গে জনা দশেক নারী আসামি। পুরুষ আসামিরা সেখানে শুয়ে-বসে আরাম করে আছেন। অথচ নারী আসামিরা আরাম করা তো দূরের কথা, তাঁরা বসতেও পারেন না। আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পুরোটা সময় তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন। শুধু যে দাঁড়িয়ে থাকেন তা-ও নয়, পুরুষ আসামিদের ভয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। কারণ, এ সময় তাঁরা নানানভাবে পুরুষ আসামিদের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হন। তাঁদের পুরুষ আসামিদের বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি, নানা রকম কটূক্তি, অশ্লীল মন্তব্যসহ নানা বিব্রতকর ও অপমানজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই অবস্থা চলে। এখানেই শেষ নয়, হাজতখানায় শৌচাগার মাত্র একটি। প্রতিদিনই দেখা যায়, নারী শৌচাগারে ঢুকেছেন, এমন সময় বাইরে থেকে কেউ কড়া নাড়ছেন। এভাবেই নারী আসামিরা প্রতিদিন আদালতে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
শুধু যে হাজতখানায় থাকাকালে এই অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নারীকে যেতে হয় তা-ই নয়, আদালতের কার্যক্রমের জন্য কারাগার থেকে পুলিশ ভ্যানে সকালে নারী আসামিদের নিয়ে আসা হয় এবং বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই যাতায়াতের সময়ও তাঁদের জন্য আলাদা পরিবহন না থাকায় পুরুষ আসামি দ্বারা নিপীড়নের শিকার হন তাঁরা।
আমি ভাবি, আদালতপাড়ার হাজতখানাগুলোতে এভাবে পুরুষ আসামিদের হাতে নারী আসামিদের হেনস্তা অনেক দিন ধরেই হয়ে চলেছে। তাহলে কারও এত দিন টনক নড়েনি কেন? কেন মনে হয়নি এর একটা সমাধান হওয়া দরকার।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজের আদালতে নারীদের জন্য আলাদা হাজতখানা করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমরা চাই তা দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। শুধু মহানগর দায়রা জজ আদালতে নয়, দেশের সব আদালতে নারীদের জন্য আলাদা হাজতখানা তৈরি হোক। সেই সঙ্গে নারী আসামিদের বহনে আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করা হোক।

Facebook Comments