রেহনুমা বিনত আনিস
যে নারী জ্ঞানবিমুখ, যে নিজের মূল্য, অবস্থান, দায়িত্ব বোঝেনা সে কি করে নিজের সন্তানকে অপর নারীদের মূল্যায়ন করতে শেখাবে? রাসূল (সা) বলেছেন, ‘সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলোনা, যে মানুষের শুকরিয়া আদায় করলোনা’ (সুনান আবু দাউদ ৪৮১১)। যে নারী সন্তানের মাঝে নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতার সঞ্চার করতে পারলোনা, সে তো সন্তানের দাসীতে রূপান্তরিত হোল। অথচ পৃথিবী ধ্বংসের একটি আলামত এই যে দাসীরা তাদের মুনিবদের জন্ম দেবে!
একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির জীবনের লক্ষ্য থাকে সন্তানদের মাঝে জ্ঞানের ধারা অব্যাহত রাখা যেন তারা উত্তম মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে, মানবসমাজের জন্য কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু যে নারী নিজেই জ্ঞান আহরণ সম্পর্কে উদাসীন সে কিভাবে সন্তানকে জ্ঞানের পথে পরিচালিত করবে?
এই নারীরাই অপর নারীদের হাত ধরে এগিয়ে আনার পরিবর্তে অন্ধকারের আবর্তে ঠেলে দেয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে, সংসারে অশান্তির সৃষ্টি করে, অন্যের হক নষ্ট করে। তাঁরা নিজেদের গন্ডি এত সংকীর্ণ করে নিয়েছেন যে তাঁরা নিজেদের, সন্তানদের, পরিবারের, বন্ধুবর্গের উপকারেও নিয়োজিত করতে অক্ষম বা প্রেরণার অভাবে ভোগেন।
সমাজের উপকার তাঁদের দ্বারা কি করে হবে?
অপরদিকে রয়েছেন তাঁরা যারা নীরবে নিভৃতে সমাজ, সংসার, সন্তানদের জন্য করে যাচ্ছেন। একদিকে তাদের প্রচারবিমুখতা, অপরদিকে তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ‘এ আর এমন কি’ ধরণের মনোভাব তাদের কৃতিত্ব জানার সুযোগ রাখেনা। ফলে তাঁরা যে অন্যান্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারতেন সে সুযোগটুকুও হারিয়ে যায়।
নারীর অবস্থান পরিবর্তনের প্রথম নিয়ামক নারীর নিজেকে পরিবর্তন। নিজের মর্যাদা, অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা। নিজের চরিত্র, যোগ্যতা, আচরণ সুসজ্জিত করা। এই কাজ শুধু সাহস দিয়ে হয়না। এর জন্য প্রয়োজন প্রেরণা। এই প্রেরণা আসে দায়িত্ববোধ থেকে।
একজন মানুষ তখনই নিজেকে কঠোর অধ্যাবসায়, সাধনা এবং প্রচেষ্টায় নিয়োজিত করতে পারে যখন নিজের এবং অপরের প্রতি দায়িত্বানুভূতি সে সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারে।
এই উপলব্ধি নিজের মাঝে গড়ে তোলাই হোক আমাদের আগামীর লক্ষ্য। এই লক্ষ্যের হাত ধরেই একদিন ফিরে আসবে নারীদের সেই সোনালী যুগ যখন নারীসমাজ এবং পুরুষসমাজ সত্যিকার অর্থেই ছিলেন পরস্পরের বন্ধু এবং সহযোগী। সেই সোনালী সুদিনের প্রত্যাশায় …।