banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 331 বার পঠিত

 

নামে কি আসে যায়,কর্মই নামকে বড় করে-১

ধরুন, শখ করে আমার ছেলেটির নাম রাখা হল আইনস্টাইন কিংবা মুশফিকুর রহিম! তাই বলে আমার ছেলেটাও ওই নাম পেয়ে তর তর করে বেড়ে উঠবে আর হয়ে যাবে আইনস্টাইন কিংবা মুশফিকুর রহিম এটা ভাবার কোন কারণ নেই। তবে হ্যা তার যদি চেষ্টা থাকে এবং ভাগ্য থাকে তবে সে হয়তো তার নামটাকে বড় করতে পারবে,মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারবে।

অতীতে এবং বর্তমানে একই নাম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মে জন্ম নিয়ে কিংবা একই প্রজন্মে জন্মনিয়ে কেউ কেউ একে অন্যকে খ্যাতির দিক থেকে পেরিয়ে গেছে। কখনো কখনো বা তাদের একজনকে অন্যজনের সাথে তুলনা করা বোকামী বলে মনে হবে কারণ এক একজনের ক্ষেত্র এক এক রকম। কিন্তু জগতে কাউকে না কাউকেতো বড় করে দেখতেই হয়।

একদিন যেমন শাহীদ আফ্রিদির রেকর্ডকে মনে হত কেউ ভাংগেই পারবেনা কিন্তু সেটাও ভুল প্রমান করে দিয়ে আরো অনেকেই সেই রেকর্ড ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক একই ভাবে কারো কারো খ্যাতিকে ছাড়িয়ে গেছে তারই নামে নামধারি অন্য কেউ।

বাংলাদেশে এমন অন্তত বেশ কয়েকটি নাম আছে যে নাম নিয়ে একই সাথে বেশ কয়েকজন খ্যাতির শীর্ষে আরহোন করেছেন।

প্রথমে আসি হুমায়ুন নামটা নিয়ে। না তাই বলে আমি ইতিহাসের পাতা থেকে সম্রাট হুমায়ুনকে আমার এই ক্ষুদ্র লেখাতে টেনে আনতে চাইছিনা। তিনি বরং ইতিহাসের পাতাতে বসেই আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখুন যে তাকে রেখেও আমরা অন্য হুমায়ুনদের নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

বাংলার আকাশে সম্রাট হুমায়ুন নয় আরো কয়েকজন হুমায়ুন চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন তারা হলেন ১। হুমায়ুন আহমেদ ২। হুমায়ুন ফরিদী ৩। হুমায়ুন আজাদ ৪। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী।

সিরিয়াল অনুযায়ি হুমায়ুন আহমেদকে এক নাম্বার স্থান দিয়েছি এটা একান্তই আমার মতামত। চাইলে আপনি তাকে দুই নাম্বার বা চার নাম্বারেও নিয়ে যেতে পারেন। কারণ জানেনতো আকাশে চাদ একটাই। সেই চাদকেই হুমায়ুন আহমেদ দেখলেন অসম্ভব সুন্দর রুপে আবার সুকান্ত দেখলেন ঝলসানো রুটি রুপে আবার প্রেমিক তার প্রেমিকাকে চাদের সাথে তুলনা করতে চায়না কারণ চাদের কলঙ্ক আছে।

তাই প্রত্যেকেরই নিজের চিন্তাকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা আছে।

আমি হুমায়ুন আহমেদকে এক নাম্বারে রেখেছি কারণ তিনি কেবল মাত্র একজন সাহিত্যিক ছিলেন না। তিনি প্রথমে বিজ্ঞানে পিএইচডি ধারি ছাত্র তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেখান থেকে সাহিত্যিক,নাট্যকার,এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা রুপে আবির্ভূত হলেন। বাকিদের মধ্যে এক সাথে এতো গুলো প্রতিভা আমি দেখিনি। ও হ্যা তিনি অসাধারণ ম্যাজিক পারতেন এবং আমাদের প্রিয় জুয়েল আইচকে আমি নিজে বলতে শুনেছি “হুমায়ুন আহমেদ পামিং এ আমার থেকেও ভাল এবং বাংলাদেশে এক নাম্বার!}–(জুয়েল আইচ)।

পামিং হচ্ছে কয়েন হাতে নিয়ে পুর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই দেখানো যায় এমন এক ম্যাজিক যা দিয়ে চোখের নিমিষে কয়েন অদৃশ্য করে ফেলা হয়।
হুমায়ুন আহমেদের ম্যাজিক মুনশি এবং কালো যাদুকর বই দুটিতে ম্যাজিকের অনেক কিছু বলা হয়েছে আর হ্যা তিনি আর্ন্তজাতিক ম্যাজিশিয়ান সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
একই সাথে তিনি বেশ ভাল ছবিও আকতেন। এই হুমায়ুন আহমেদকে তাই এক নাম্বার হুমায়ুন বলেই চিনতে চেয়েছি।

* হুমায়ুন ফরিদী একজন কোন মানের অভিনেতা ছিলেন সেটা আমি না লিখলেও অন্যরা নিশ্চই সেটা জানেন। তার অভিনয় শৈলি তার ব্যক্তিত্ব এবং তার আবৃত্তি নিয়ে কারো কোন দ্বিমত আমি কখনোই দেখিনি। ব্যক্তি হুমায়ুন ফরিদিও ছিলেন অসম্ভব সদালাপি।

* হুমায়ুন আজাদকে অনেকেই পছন্দ করেন না। আবার অনেকে শুদ্ধপুরুষ রুপে তাকে দেখেন।
আমি হুমায়ুন আজাদকে দুই তিনটা বই দিয়েই বিবেচনা করতে চাই। “আব্বুকে মনে পড়ে” বইটা পড়ে দেখুন। আমার মনে হয় আপনি না খেয়ে মরে গেলেও কোন দিন বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার কথা চিন্তাও করতে পারবেন না। এবং যারা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছেন তাদেরকে ওই বইটা জোর করে পড়িয়ে দিন। দেখবেন কাদতে কাদতে গিয়ে সেই দিনই বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাসায় নিয়ে আসবে। তার স্ত্রী পুত্র যদি সেটা পছন্দ না করেন তবে হয়তো তাদেরকে এক হাত দেখে নিতেও দ্বিধা করবেনা। আর হ্যা “লাল নীল দিপাবলী” পড়ুন। বাংলা সাহিত্যের জন্মকথা এমন ভাবে লিখেছেন যে আপনি মুগ্ধ না হয়ে যাবেন না। অথচ আপনি কেবল পড়ে আছেন তার “পাক সার জমিন সাদ বাদ” নিয়ে।

* হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী জাতীয় সংসদের স্পিকার ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে তিনিও সফল একজন মানুষ।

এই চার হুমায়ুন বাংলার আকাশে উজ্জল করে রেখে গেছেন তাদের নাম।”

#জাজাফী
উত্তরা,ঢাকা-১২৩০

Facebook Comments