banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 381 বার পঠিত

 

ধূপছায়া -সুমাইয়া তাসনিম

নাশতা করে আয়েশ করে কম্বলের নিচে ঢুকতেই অনু দরজায় এসে দাঁড়ালো। আমি তাকাতেই ঠোঁট প্রসারিত করে একটা মেকি হাসি দিল। আমি মনে মনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। এই সাত সকালে কি অঘটন ঘটিয়েছি বুঝতে পারছিনা। অনু ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। আমি ঢোক গিললাম, কি করেছিস সাজিদ? কি? কি?? মনে কর!
অনু খুব কাছে আসার পর আমার চিন্তার মোড় ঘুরে গেলো। মুখ তুলে ওর চোখের দিকে তাকালাম। আচ্ছা… মেয়েটার মনে আমার জন্যে তাহলে একটু মায়া মোহাব্বত জন্মাচ্ছে কিনা…
অনু আরেকটু এগিয়ে এসে আচ্ছা একটা ঠুয়া দিল কপালে। তাও নিজের কপাল দিয়ে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপসে গিয়ে বললাম, তোমার ওই কপাল দিয়ে বাড়ি দিলে নারিকেলও ফেটে যাবে। কি দরকার ছিল কাছে এসে হার্টবিট বাড়িয়ে দেওয়ার..
-আর কতদিন মাথায় আমাজনের জঙ্গল বানিয়ে রাখবা?
অনু তীর্যক কন্ঠে প্রশ্ন করল।
আমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমাজন যে জঙ্গল না সেটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।
-এত ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলো কেন? আমাকে ভাল্লাগেনা না? তাড়াতাড়ি যাও। এমনিই ছুটির দিন, পরে সিরিয়াল পাবানা।
আমি সন্তর্পণে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। উঠে তৈরি হতে হতে একটু ইতস্ততভাবে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়ে অনু, ওই শরফুদ্দীন আসবে তো.. দুপুরে আমাদের সাথে খেতে বলি?
অনু চুলের খোঁপাটা নতুন করে বেধে আঁচল গুজে নিতে নিতে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, হ্যা বলো, অসুবিধা কি! উনি কি কি খেতে পছন্দ করে সেটা ডায়রীতে লিখে দিয়ে যাও।
খেয়েই বের হবো বলে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আড়চোখে এলোমেলো চুলের অগোছালো খোঁপা বাধা দেখতে দেখতে আমি মৃদু হাসলাম। অনুর এই ব্যাপারটা আমার ভাল লাগে। ওর আপ্যায়নে কেউ খুশি না হয়ে পারেনা। আমার মত কিছুটা অসামাজিক নিরীহ স্বভাবের বিরস কারো জন্য এটা একটা দারুণ ব্যাপার। আমার সামাজিকতার ঘাটতিটা ও পূরণ করে দেয়। ওর ডায়রীতে মোটামুটি সবার পছন্দের খাবারের লিস্ট আছে। সবাইকে এত সহজে কাছের করে নেয়! কেবল আমি বাদে… আমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

আর সবার মতই শরফুদ্দীন খেতে বসে অবাক হল। ছোট্ট সংসার তাই আয়োজন সীমিত কিন্তু সবই ওর পছন্দের। নারকেল দিয়ে ঝোল ঝোল করে রান্না করা ডিমের তরকারি, লইট্যা মাছ ভুনা, ধনেপাতার ভর্তা আর টকদই দিয়ে মাখানো বাহারি রঙের সালাদ।
নিজেই প্লেট টেনে নিতে নিতে বললো, তুই বড় কপালওয়ালারে সাজিদ। আমি মুচকি হাসলাম। শরফুদ্দীন সেই স্কুল লাইফ থেকে এমনই। একটুও বদলায়নি। অসম্ভব চটপটে আর স্মার্ট এই ছেলেকে ম্যানেজ করার সহজ উপায় হলো তার পছন্দের খাবার খাওয়ানো। একে তো তার প্রিয় খাবার, তার উপর অনুর রান্নার হাত অসাধারণ।
সালাদের বাটি শেষ করে বললো, এত স্বাদের সালাদ আমি আর খাইনি।
আমি বউয়ের প্রশংসায় তৃপ্তির হাসি হাসলাম। দেখতে হবেনা কার বউ!
হাটতে হাটতে শরফুদ্দীন বললো, তোদের বিয়ের ব্যাপারে দ্বিমত করেছিলাম বলে কিছু মনে রাখিস না। মনে হচ্ছে তোরা বেশ আছিস। আসলে আমার সাথে ভাবির প্রথম পরিচয়টা যেমন হবার কথা ছিল ঠিক তেমন ছিল না.. এজন্যই আরকি ওরকম বলেছিলাম।
আমি মৃদু কণ্ঠে সায় দিলাম।
অনুকে দেখতে যাওয়ার পরপরই কিছু ফাইনাল হয়নি। আসলে একইসাথে দুটো সমন্ধ ছিল। অনুকে দেখার পর আমার খারাপ লাগেনি। কিন্তু শরফুদ্দীন জোর করেছিলো দ্বিতীয় সমন্ধটার ব্যাপারে। তাই অনুর ব্যাপারে হ্যা-না কিছু বলার আগে বন্ধুর কথা রাখলাম। সত্যি, মেয়েটার কোনো কমতি ছিল না। দেখতেও আকর্ষণীয়। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটেছিল দেখতে গিয়েই।
এই দেখাদেখিটা আমার ঠিক পছন্দ না। মানে আমার খুব অস্বস্তি লাগে কেন যেন। তাই রেস্টুরেন্টের কোনার একটা টেবিলে হাত কোলে মাথা নিচু করে বসেছিলাম। মেয়েটা আসার পর টুকটাক কথা বলছি এমন সময় আচমকা কোথা থেকে যেন উড়ে এলো অনু। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একবার অনু একবার নিগার নামের মেয়েটার দিকে চাইতে লাগলাম। অনু খুবই সাবলীল ভাবে জিজ্ঞেস করল, এই মেয়েটা কে? আমি আরো হতভম্ব হয়ে গেলাম। স্রেফ গতকাল পরিচয় হওয়া একটা মেয়ে আমার সাথে এমন পরিস্থিতিতে এভাবে কথা বলবে তা আমার ভাবনার অতীত। অনু আবার জিজ্ঞেস করল। আমি কিছু বলার আগেই নিগার মৃদু হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, বসুন। অনু বসলে নিগার এক মুহূর্ত তাকে পর্যবেক্ষণ করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই অনু ছো মেরে গ্লাসটা নিয়ে পানিটুকু শেষ করে আমার দিকে চেয়ে রইল। আমি বিস্ময়াভিভূত চোখে অনু নামের মেয়েটার দিকে অপলক চেয়ে রইলাম। অনু একটা বড় শ্বাস নিয়ে একটুপর বলল, আমি বেশ কিছুক্ষণ থেকেই আপনাদের দেখছি। যা বুঝেছি, আপনি মেয়ে দেখতে এসেছেন যেমন করে গতকাল আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন। আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়নি? কিন্তু আমার তো আপনাকে পছন্দ হয়েছে।

আচমকাই এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য নেমে এলো যেন।আমি পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে অনুর চোখে চোখ রাখলাম। দীর্ঘ পল্লবে কাজলের সন্ধ্যা নেমে এসেছে এই ব্যস্ত সকালে। চোখের গাঢ় কালো তারার মাঝে পাপড়ি মেলে আছে আশ্চর্য এক কৃষ্ণ বুনোফুল। নাক ঘামছে এই এসি রুমেও। শিশিরের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু ফুটে আছে ঠোঁটের উপরিভাগে। হালকা বেগুনী আভাযুক্ত ঠোঁটজোড়া চেপে রাখা সত্ত্বেও তা সুক্ষ ছন্দে তিরতির করে কাপছে। থুঁতনির এক কোণে অবছাভাবে ফুটে আছে একটা লালচে তিল।
হঠাৎ মৃদু গলা খাঁকারিতে সম্বিত ফিরে পেয়ে ভীষণ লজ্জিত হয়ে নিগারের দিকে চাইলাম। নিগার একটু বিব্রত হেসে বলল, আমি তাহলে উঠি। আমাকে আর কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে নিগার দ্রুতই প্রস্থান করতেই অনুও উঠে দাঁড়ালো। সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছে কাজটা ঠিক ভাল হলোনা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একবারও আমার দিকে না তাকিয়ে হনহন করে হেটে বেরিয়ে গেল।
স্বাভাবিকভাবেই শরফুদ্দীন ব্যাপারটা জেনে তেতে উঠল। নিগারের ভাই শরফুদ্দীনের কলিগ। সুতরাং সে যথেষ্ট বিব্রত একইসাথে গোটা ব্যাপারটাই তার কাছে সস্তা ড্রামা মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করল। এবং এই সমস্ত হুজুগের পছন্দ টিকেনা বলে মতামত ব্যক্ত করল। আমি চুপ রইলাম। শরফুদ্দীন মাঝে মাঝে তেতে ওঠে সত্যি, কিন্তু ভেবেচিন্তে কাজ করার সুনাম আছে ওর। যদিও স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর তাতে কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। পাঁচ বছরের সংসার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া একদিন হুট করে শেষ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন ও এক বিমূঢ় বিস্ময়ে ডুবে ছিল। কেবল বলতো, আমি ঠিক বুঝলাম নারে, রুবি তো আমাকে ভালোবাসে! আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর কাঁধে হাত রাখতাম। এক সময় শরফুদ্দীন ধাতস্থ হলে তরল কন্ঠে বলতো, আমি ঠিক জানিনা কিভাবে কি হলো, কিন্তু অনুভব করতে পারি। আর সেই অনুভূতি কেন যেন আমারই দিকে আঙ্গুল তাক করে।
জবাবে আমি কাঁধে আলতো করে চাপড় দিয়ে আঙ্গুলের ডগা নাচিয়ে না সূচক মাথা নাড়তাম। মাঝেমাঝে শরফুদ্দীন নিঃশব্দে কাঁদতো। আমি কাঁদতে দিতাম। কিছু সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ করেইবা কি লাভ? সত্য তাতে বদলায় না মোটেই। কিছু সম্পর্ক শেকলের মত, অথচ সে শেকলে মরচে ধরে ভেঙ্গে পড়লে মানুষ হয়ে পড়ে শেকড় কাটা পড়া গাছের মত। শরফুদ্দীন রুবিতে এতটাই অভ্যস্ত ছিল যেমনটা আমরা আলোবাতাসে। পুরুষমানুষ শক্তিমান, বুদ্ধিমান, সূর্যের কান্তি তার শরীর জুড়ে ঝলমল করে। আবার তারা নোংরা ঘরে ইঁদুর মরার গন্ধ সয়ে নিতে পারে, ধুলোয় অন্ধকার হয়ে আসা কক্ষে অবলীলায় নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে যেতে পারে, নোংরা কাপড়ে সপ্তাহ পার করে দিতে পারে, কিন্তু পুরুষের হৃদয় বড় দূর্বল। পুরুষ হয়ে ওঠার পর পুরুষমানুষ সম্ভবত অনাথ হয় বউ হারালে। আচমকা একদিন আবিষ্কার করে টুথব্রাশটাও নিজের জায়গায় থাকেনা, তাকে রাখতে হয়। কাপড়টা আয়রন করা থাকেনা, করে রাখা হয়। জুতোটা, তাকেও চকচকে করা রাখা হয়। গাছে পানি না দিলে ওই ঝুলে থাকা বাহারি গাছটাও প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যায়। ধুলোর আস্তরণে চাপা পড়ে থাকে সহাস্য যুগলছবি। এমনকি দেয়াল ঘড়িটাও একদিন বেকে বসে। সবকিছু পরিমাণ মত না হলে রান্না কিছুতেই সুস্বাদু হয়না, সুঘ্রাণ ছোটেনা পাশের বাড়ি পর্যন্ত। সস্তা বা দামী, কোনো রেস্তোরাঁর খাবারেই সেই আটপৌরে গন্ধটা পাওয়া যায়না কিছুতেই…
আর দিনশেষে চোখ বুজলে পরে কানে বাজতো যে নিঃশ্বাসের শব্দটুকু, তার অনুপস্থিতি সহ্য করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে।
শরফুদ্দীন অন্তর্দাহে অঙ্গার হয়ে যেন অনেকটাই বুড়িয়ে গেল। কাজপাগল ও আগে থেকেই ছিল। সেটা আরো খানিকটা বাড়লো। স্বাভাবিকভাবেই কর্মক্ষেত্রে শরফুদ্দীনের সুনাম ছিল। আর সেই সুবাদেই নিগারের সমন্ধটা আসে আমার বাড়ি পর্যন্ত। কিন্তু রেস্টুরেন্টে ঘটা অঘটনের পর আমার মনে বউ বলতে ওই স্থান কাল পাত্রের বিচার বিবেচনাহীন মেয়েটাই গেঁথে রইলো। কেন, তা নির্দিষ্ট করে বলার মত কিছুই পাইনি। হয়ত তার সহজ স্বীকারোক্তি আমার মধ্যে যে ছন্দপতন ঘটিয়েছিল, যা আর কখনো ঘটেনি, তাই!
শরফুদ্দীন প্রথমে মোটেই রাজি ছিল না। এমন উড়নচণ্ডী স্বভাব মেয়ের সংসার ধর্ম কদ্দিন ভাল লাগবে তা নিয়ে সে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল। কিন্তু আমি তাকে রীতিমত হৃদয়ে স্থান দিয়ে ফেলেছি!

বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পর শরফুদ্দীন একদিন ডাকলো। অনেকক্ষণ চুপ থেকে মানিব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে বললো, তোর ভাবির চিঠি লেখার শখ ছিল। আমার কখনো জবাব লেখা হতোনা ব্যস্ততায়… এটা ওর শেষ চিঠি ছিল।

আমি দ্বিধাগ্রস্ত হাতে কাগজটা খুললাম।

“জগতে ভালোবাসতে জানাটাই বড় কথা নয়। তাতো কতজনেই জানে!
কিন্তু এমন কাউকে ভালোবাসা, যে সেই ভালোবাসাকে তারই মত করে বুঝে কৃতজ্ঞ হয়, সৌভাগ্যবান ভাবে নিজেকে, তাকে মূল্যায়ন করতে জানে, পরম পাওয়া ভেবে বুকের একদম গহীনে আগলে রাখে, এমন সৌভাগ্য ক’জনের হয়! তবেই না ভালোবাসা সার্থক হয়, পূর্ণতা পায়।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
এই কথাটুকু সবাই বলতে পারেনা মুখ ফুটে। বলতে পারলেও বুঝিয়ে বলা বড় শক্ত। কিংবা যে বলে, সে নিজেই কি বুঝে বলে সব সময়?
নাহ…
তোমার কণ্টকপূর্ণ ভালোবাসা আমি সেই শুরুর মুহূর্তেই সমস্তই বুঝেছি। কিন্তু তার গহীন পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে কতটা ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে তা কি তুমি জানতে পেরেছো কোনো কালেই?
ভালোবাসতে তুমি সফল। এক আত্মবিস্মৃত অতীন্দ্রিয় ভালোবাসা তুমি আমাকে দিয়েছো। নিজেকে সমস্ত সমর্পণ করে ভীষণ এক ঘূর্ণির মত লণ্ডভণ্ড করেছো আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। নিজেকে অবধি ভুলেছি তোমার দুর্নিবার আকর্ষণ উপেক্ষা করতে না পেরে। কিন্তু তাতে কেবল নিজেকেই খুঁইয়েছি শেষতক।
তুমি তখন কোথায় ছিলে?
আজ এ জিজ্ঞাসা বড় অর্থহীন শোনায়, নাহ? ভালোবাসলে, অথচ ভালোবাসতে দিলেনা। এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু হয়?”

আমি চিঠিটা ফেরত দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
শরফুদ্দীন বলল, নারীর মন বুঝা শক্ত কিন্তু এটুকু বুঝলেও অনেক হতো যে, অবহেলা জিনিসটা একটা ব্ল্যাকহোলের মতন। নারীর অসীম সহ্য ক্ষমতা ওতে এসে নিঃশেষ হয়ে যায়। কিছু কথা, যা মানুষে মানুষে হয়না, নারীতে আর পুরুষে হয়, সে কথাগুলো বারবার আমার কাছে এসে ফিরে গেছে হৃদয়ের বন্ধ দরজায়। আমি স্বার্থপর পুরুষ, বাহু জড়িয়ে তাকে আগলে রেখেও হৃদস্পন্দন শুনবার জন্য নিজেকে একমূহুর্ত স্থির করতে পারিনি। সেই ব্যস্ততা আমাকে এখন অভিশাপ দেয়। কাজের প্রশংসাকে মনে হয় উপহাস। কতটা শূন্য আর অসম্পূর্ণ আমি, তা এক খোদা জানেন, যিনি হৃদয়সমূহের মালিক।
শরফুদ্দীনের কাছে সেদিন যা শিখেছিলাম তা আমি কখনো ভুলবো না। যে তুষের আগুন ওর ভেতরে জ্বলছে অনির্বাণ, তা নিভিয়ে ওকে একদন্ড সস্তি দিবে কিসে?
আমি বোকা মানুষ। এবং ভীতুও। যাকে আচমকা ভালোবেসে ফেলেছি তাকে হারানোর আগে আমার আরেকটা জীবনের নিশ্চয়তা চাই যে জীবনে তাকে আর হারাতে হবেনা।
বাসায় ফিরে হাসির শব্দ পেলাম। অনু খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে। আমি প্রচণ্ড কৌতুহল নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে দেখলাম একটা ছবির এ্যালবাম অনুর সামনে খোলা। আমার ছোটবেলার ছবির এ্যালবাম। আম্মুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিল গত সপ্তাহে।
অনুর হাসির তরঙ্গ আরো বেগবান হলো আমার উপস্থিতিতে।
আঙ্গুলি নির্দেশ করে একটা ছবি দেখিয়ে বলল, দ্যাখো দ্যাখো! এই পাতিল কাট হেয়ার স্টাইলে তোমাকে কত গুলুগুলু লাগছে দেখতে!
আমি গুণগুণ করে গাইলাম, তোমার হাসির শ্রাবণ ঢলে স্বপ্ন নিয়ে ভাসতে চাই…

“আজকে সুরাইয়ার সতের বছর পূর্ণ হলো। এরকম একটা গল্প ওকে ঠিক উৎসর্গ করা যায় কিনা তা ভাবনার বিষয়। তবু করা হল। আমি জানি,অন্যেরা যেখানে কেবলই প্রেম-ভালবাসা দেখে সেখানে এর চেয়ে বেশিকিছু দেখার চোখ আছে ওর।”

Facebook Comments