কিডনির প্রাথমিক রোগে বা অন্য কোনো কারণে কিডনি আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে যদি দুটো কিডনিরই কার্যকারিতা নষ্ট হতে থাকে তখন তাকে ক্রনিক বা ধীরগতিতে কিডনি ফেইলুর বলা হয়। একটি কিডনি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে এবং অপরটির কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলেও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। দুটো কিডনিরই শতকরা ৫০ ভাগ বিনষ্ট হলেও শরীর সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে, যার ফলে একজন সুস্থ মানুষ (কিডনি ডোনার) তার নিকট আত্মীয় বা অন্য আর একজন কিডনি বিকল রোগীকে (কিডনি গ্রহণকারী) একটি কিডনি দান করেও সুস্থ থাকেন, স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন।
কেবল দুটো কিডনির ৫০ ভাগের উপর নষ্ট হলেই কিডনি বিকল হওয়ার প্রবণতা শুরু হয় এবং ৭৫ ভাগ নষ্ট হলেই শরীরের লক্ষণগুলো ধরা যেতে পারে আর ৯৫ ভাগের উপর নষ্ট হলে কৃত্রিম উপায়ে (ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন) ছাড়া রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না, যাকে বলে এন্ড স্টেজ রেলাল ফেইল্যুর।
কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ:
১. গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস বা কিডনির ছাকনি প্রদাহ রোগ ৫০-৫৫%।
২. ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ ১৫-২০%।
৩. উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনি রোগ ১০-১৫%।
৪. কিডনি বা প্রস্রাবের রাস্তায় পাথর ও অন্য কোনো কারণে বাধাজনিত রোগ ৭-১৯%।
৫. কিডনি বা প্রস্রাবের রাস্তায় জীবাণুজনিত রোগ ৫-৭%।
৬. বংশানুক্রমিক কিডনি রোগ ৩-৫%।
৭. ওষুধজনিত কিডনি রোগ ৩-৫%।
৮. অন্যান্য ও অজানা।
উপসর্গ
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুটো কিডনির শতকরা পঁচাত্তর ভাগ কার্যকারিতা নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কিডনি বিকলের উপসর্গ দেখা যায় না। রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে সামান্য ধরনের কিডনি রোগ থাকার দরুন গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না। শতকরা ৭৫ ভাগের উপর কিডনি অকেজো হয়ে গেলে রোগীর ক্ষুধা মন্দা, আহারে অনীহা, বমি বমি ভাগ, বমি হওয়া, শরীর ক্রমান্বয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়।
এছাড়াও প্রস্রাবের পরিমাণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, রাতে প্রস্রাব করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কোনো রকম চর্মরোগের উপসর্গ ছাড়াই শরীর চুলকায়, যখন তখন হেচকি ওঠে এবং অনেক ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে। রোগী শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট, তীব্র গতিতে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, ঝিমানো ভাব, এমনকি এক পর্যায়ে রোগী জ্ঞানও হারিয়ে ফেলতে পারে।
রোগীকে পরীক্ষা করে রক্তের স্বল্পতা বোঝা যায়। অধিকাংশ রোগীর উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়ে। এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর কারণ সাপেক্ষে শরীরে পানি দেখা যেতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে চামড়া শুকিয়ে যেতে পারে। কিছু কিছু রোগীর হৃিপণ্ডের আবরণে পানি এবং হার্ট ফেইলুরের চিহ্ন দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে শরীরের এমন কি হাত-পায়ের মাংসপেশী শুকিয়ে যায় যার দরুন রোগী সাধারণত চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
রোগ নির্ণয়
ক্রনিক রেনাল ফেইলুর রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর উপসর্গের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াও প্রাথমিকভাবে রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটেনিন এবং ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করা হয়। কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটেনিন বেড়ে যায়। পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়তে থাকে ও বাইকার্বোনেট কমে যায়। এছাড়াও ফসফেট শরীরে জমতে শুরু করে, যার ফলে ক্যালসিয়াম কমে যেতে বাধ্য হয় এবং অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও শুরু হতে থাকে।
এরপরে কি কারণে ধীরগতিতে কিডনি বিকল হয়েছে তা বের করার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করে এ্যালবুমিন আছে কিনা তা দেখা হয় এবং লোহিত ও শ্বেত কণিকা আছে কিনা তাও দেখে নেয়া হয়। প্রয়োজনের ২৪ ঘ